পার্টটাইম মাস্টারশেফ মোস্তফা সাহেবের হোমমেইড করোনা-স্পেশাল জিলাপি

২০৮৯ পঠিত ... ১৪:০৮, মে ০৩, ২০২০

করোনাকালের সাধারণ ছুটি পেয়ে মন্দ লাগে না মোস্তফা সাহেবের। অনেক দিন পর একটু বিশ্রামের সুযোগ। রোজার মাস বলে একটা আধ্যাত্মিক বোধ তীব্রতর হয়েছে। মনের মধ্যে সারাক্ষণ গুণগুণ করে; দীনের নবী মোস্তফা রাস্তা দিয়া হাঁইটা যায়। জানালা খুলতেই খোলা আকাশ; বৃষ্টিভেজা লম্বা ইউক্যালিপটাস গাছ; তাতে বসে থাকা শালিকেরা।

ইফতারের টেবিলে বসে; বাসায় ভাজা পেয়াজু-বেগুনি-আলুর চপ খেতে খেতে মুড়ির দিকে যেতেই; মনটা জিলাপির জন্য আনচান করে। মেয়ে জিজ্ঞেস করে, 'এনি প্রবলেম ড্যাড?'

: জিলাপি নাইরে মা। মুড়ির সঙ্গে জিলাপি না থাকা মানে জীবনটা অর্থহীনরে মা।

মোস্তফা সাহেবের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনে; স্ত্রী বলে, 'লকডাউনের সময় জিলাপি কোথায় পাবো? এইবার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারি বাজার বন্ধ। তাইলে বোঝ; অবস্থাটা কত সিরিয়াস।'

ইফতারের পরপরই এক গার্মেন্টস মালিক ফোন করে বলে, 'স্যার, অল্প অল্প করে লকডাউন না খুললে কিন্তু আমরা পথে বসে যাবো স্যার।'

: কিন্তু করোনা ছড়াইয়া পড়লে 'জেনোসাইড' হয়ে যাবে। সেইটা কী হবে?

: আপনি স্যার বাস্তববাদী মানুষ। অর্থনীতি না বাঁচলে মানুষ বাঁচবে ক্যামনে। দুর্ভিক্ষ হইলেও তো সেইটা 'জেনোসাইড'-ই হবে।

: ঠিক আছে ভেবে দেখি। আমাকে একটু সময় দিন প্লিজ।

মোস্তফা সাহেব কিচেনে গিয়ে জিলাপি ভাজার আয়োজন করে। মেয়ে সে দৃশ্য ফেসবুক লাইভ করে 'মাস্টার শেফ মোস্তফা' নামে।

প্রথম দফায় ভাজা উলের মত প্যাঁচ লেগে থাকা জিলাপি দেখে মোস্তফা সাহেব চমকে ওঠেন। প্রবাসী কর্মীরা দেশে ফিরে জনপদে মিশে যাবার পর তৈরি হওয়া 'করোনা-ম্যাপ' মনে হয় যেন। আবার গার্মেন্টস কর্মীদের বারবার কাজে যোগদানের নির্দেশ দেবার পর সেলাই ভাই-বোনদের শতমাইল হেঁটে যাওয়ার জীবনের গোলকধাঁধা মনে হয় যেন জিলাপির প্যাচগুলোকে। শেষবার কড়াই থেকে সে জটিল প্যাঁচের জিলাপি তুলে পাশের প্লেটে রাখার সময়; ব্রান্মণবাড়িয়ার গণ-জানাজার পর ছড়িয়ে পড়া করোনা-মানচিত্রের মতো দেখায়।

খুব সাবধানে দ্বিতীয় জিলাপির প্যাঁচ কড়াইয়ের মধ্যে আঁকার সময়; করোনার সাধারণ ছুটিতে রাজধানী থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া মানুষের করোনার মানচিত্র হয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি এসে পড়ে; মোস্তফা সাহেবকে হতাশ করে।

তৃতীয় জিলাপিটা দেখতে যেন ঠিক করোনাভাইরাসের মতো।

তবুও খেতে খেতে ঠিক জিলাপির স্বাদ পাওয়া যায়। দেখতে বেঠিক প্যাঁচের হলেও স্বাদে অতুলনীয়।

এই জিলাপি খেতে খেতে মোস্তফা সাহেবের মন খুব ইতিবাচক হয়ে যায়। করোনাকালে বিশ্রামে ব্যস্ত মানুষের বাই-পোলার-সিনড্রোম হয়। একবার সে নিশ্চিত মৃত্যুভয়ে নৈরাশ্যে হারিয়ে যায়; এরপর পেটে খাবার পড়লেই মনটা ইতিবাচক হয়ে পড়ে। ব্যাপারটা ক্ষুধার সঙ্গে জড়িত।

মোস্তফা সাহেব একজন ব্যবসায়ী নীতি নির্ধারককে ফোন করে বোঝান, দক্ষিণ এশিয়া এলাকাতেই করোনার হার্ড ইমিউনিটি সূত্র প্রমাণিত হবে। এইখানে মানুষ মিলেমিশে করোনা বিনিময় করে; করোনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাবে। যেভাবে ভেড়ার পাল মিলেমিশে ইমিউন সিস্টেম গড়ে তোলে।

: স্যারকে আজকে বড্ড আশাবাদি মনে হচ্ছে!

: দেখুন করোনা এসেছে আশীর্বাদ হয়ে। করোনার অর্থনীতি বলে একটা ব্যাপার আছে না। সরকারি ত্রাণ নয় ছয় হবে; স্বাস্থ্য-খাতে 'রূপপুরের বালিশ' মডেলের কমিশন ব্যবসা হবে। পিপিই তো দৈনন্দিন পোশাক হবে। ঈদে ফ্যাশনেবল পিপিই ছেড়ে দেখুন কী হিট হয়। আবার বিদেশ থেকে আসা করোনা সাহায্য ফান্ডে বেশ কিছু লোক ধনী হবে। এটাকে আমি বলি করোনা লিক্যুইডিটি; বাজারের অর্থ-সমাগম থাকলে অর্থনীতি গতিশীল থাকে। প্রত্যেক যুদ্ধ-প্রাকৃতিক দুর্যোগ-মহামারী দুর্ভিক্ষে অনেক মানুষ মারা যায়। আর তাদের দুর্ভাগ্যের ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে অনেক লোকের ভাগ্য বদলায়। ফইন্নি থেকে ফড়িয়া হয়ে অবশেষে ফন্ত্রী হয় কেউ কেউ।

: স্যার, আপনার এইরকম 'আশার সওদাগর হবার রহস্য কী!?

: জিলাপি। মনে রাখবেন ভাই, উন্নত দেশে নিঃসঙ্গ অবস্থায় করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার চেয়ে; দেশে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিলেমিশে জিলাপি খেয়ে সর্দি-জ্বর-শ্বাসকষ্টে মরে যাওয়াই ভালো।

২০৮৯ পঠিত ... ১৪:০৮, মে ০৩, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top