বিশ্বজয়ী করোনাভাইরাস বাংলাদেশ ঢুকে যেমন ব্যতিক্রমী অভ্যর্থনা পেলো

১৫০০ পঠিত ... ১১:২৪, মার্চ ২৯, ২০২০

বিশ্বজয়ী করোনা রাজ্য জয়ে গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের চেয়েও মহাপরাক্রমশালী হয়ে ওঠে। তাই আলেকজান্ডার যে রাজ্যে হানা না দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন; মহাবীর করোনা সেখানেও হানা দেয়।

বিমানবন্দরে করোনাকে প্রতিরোধের কোন চেষ্টা নেই। উন্নয়ন ভাইরাস বরং ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে। দুর্নীতি ভাইরাস শ্লোগান দেয়, করোনা ভাইয়ের আগমন; শুভেচ্ছা স্বাগতম।

বিমানবন্দর থেকে মূল শহরে ঢোকার পথের ধারে দাঁড়িয়ে ডেঙ্গি ভাইরাসেরা ফুল ছুঁড়ে দেয়।

ডেঙ্গি ভাইরাস শ্লোগান দেয়, করোনা ভাই এগিয়ে চলো; আমরা আছি তোমার সাথে।

এরকম অভিনব স্বাগত জানানোর দৃশ্যে করোনা আপ্লুত হয়। করোনা গিয়ে সরকারি মিডিয়া ভবন দখল করে। সেখানে সহমত ভাইরাসেরা স্বাগত জানিয়ে বলে, 'আমরা সেলফ সেন্সরশিপে বিশ্বসেরা। আপনি নিশ্চিন্তে জীবনের শুল্ক আদায় করুন করোনাধিরাজ। আপনি আমাদের এতোটুকু ক্ষতি করবেন না; আপনি সামান্য সর্দি-জ্বর; সেটা ইথারে ইথারে ছড়িয়ে দেবো। বলবো, সারাদেশে সুগন্ধী বাতাবী লেবুর ঘ্রাণ।'

এরপর করোনা তার ভাইরাস সেনাদের নিয়ে প্রবেশ করে সচিবালয়ে। করোনা দেখে টেবিলে টেবিলে নিরাপদ তন্দ্রা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে করোনা এক কর্মকর্তাকে ঘুম থেকে তুলে বলে, 'আমি করোনা।'

শিক্ষা-কর্মকর্তা স্যার স্যার বলতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, 'স্যার আপনি এসে গেছেন স্যার। আপনার পরিদর্শনের জন্য স্কুলগুলো খুলে রেখেছি। আর কী করতে পারি; আদেশ করুন জনাব। আমরা যুগের পর যুগ জনগনকে আত্মকেন্দ্রিক আর অসচেতন রাখার শিক্ষা-ব্যবস্থা চালু করে চলেছি। আপনি যত খুশী জীবনের শুল্ক নিন।'

এমন অপার আনুগত্যে মুগ্ধ হয় করোনা। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করোনা গিয়ে দেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সবাই। এক কর্মকর্তাকে ঘুম থেকে তুলে জানান দেয়, 'আমি করোনা বলছি।'

স্যার স্যার করে কর্মকর্তা উঠে দাঁড়িয়ে বলে, 'আপনার মহান আগমনের জন্য আমাদের যুগ যুগের প্রস্তুতি। আদেশ করুন জাঁহাপনা, কত সহস্র জীবনের শুল্ক নিতে চান। আমরা হাসপাতালগুলোকে আপনার উষ্ণ স্পর্শের সুবিধার জন্য পিপিই মুক্ত রেখেছি।'

ককরোনা এরকম ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণের জন্য সত্যিই প্রস্তুত ছিলো না। ধর্ম-মন্ত্রণালয়ে করোনা প্রবেশ করতেই স্যার স্যার বলে উঠে দাঁড়িয়ে এক কর্মকর্তা অশ্রুসিক্ত হয়ে বলে, 'স্যার আপনি কী সুন্দর কিয়ামত নিয়া আইলেন! আমরা রেডি ছিলাম। ইহজগত আবার কী; পরজগতই সব। চলেন স্যার মসজিদে চলেন, সবাই আপনার স্পর্শের জন্য উতলা।'

করোনা লক্ষ্য করেছে, চীনে, ইটালিতে অন্তত তাকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে; কিন্তু এখানে এমন বিনা প্রতিরোধে প্রবেশের সুযোগ করোনার মনে আনন্দের হুঁই দিয়ে যায়। ঠিক এমন সময় আকাশে আতশবাজি দেখে করোনার মনে শিহরণ জাগে।

এরপর করোনা তথ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে এক কর্মকর্তা বলেন, 'স্যার আপনাকে নিয়ে যেন কেউ কোন গুজব ছড়াতে না পারে; তাই গুজব ধরা কমিটি করেছি। আর কী করলে আপনি খুশী হবেন স্যার?'

করোনা উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে নির্দেশ দেয়, 'অনেক উন্নয়ন ভাইরাস ছড়িয়েছো। এবার তোমাদের গৃহবন্দী করে রাখা হবে।'

করোনা নির্দেশ দেয়, 'লক ডাউন লক ডাউন। বন্ধ করো জিডিপি নৃত্য।'

করোনার আগমনে দীর্ঘ ছুটি পেয়ে মানুষ ইদুল করোনার আমেজে গাদাগাদি করে বাসে, ট্রেনে, স্টিমারে গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে। জনগন করোনাকে ঘাড়ে করে আনন্দের দোলা দিতে থাকে।

উন্নয়ন ভাইরাস গৃহবন্দী হয়ে ফেসবুকে করোনা বন্দনা করে, গান গেয়ে, মোটিভেশনাল স্পিচ দিয়ে 'আরে করোনার আগমনে কিছু হবেনা' বলতে থাকে। একটা এফলুয়েন্ট লাইফ স্টাইল শো-অফের ভাইরাস পেয়ে বসে উন্নয়ন ভাইরাসকে। সে তার চর্বি দুলিয়ে দুলিয়ে জোরে ধমক দিতে থাকে গরিব মানুষকে, না খাইয়া মরবি; তাও ঘর থিকা বাইর হইবি না।

উন্নয়ন ভাইরাসের জমজ ভাই ক্ষমতা ভাইরাস রাস্তায় মানুষকে পিটিয়ে, বৃদ্ধদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে 'কোয়ারিন্টিন' শিক্ষা দেয়; আর চেঁচায়, 'মাস্ক পরোস নাই ক্যান?'

করোনা তাকিয়ে দেখে উন্নয়ন ভাইরাসে ক্ষতবিক্ষত নদী, পাহাড়, অরণ্য। সমুদ্র সৈকতের দখল ফিরে পেয়ে কচ্ছপেরা গান গাইছে, আজ করোনা রাতে সবাই গেছে কোয়ারিন্টিনে।

১৫০০ পঠিত ... ১১:২৪, মার্চ ২৯, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top