৯টি ‘প্রাণী’ যারা মন্ত্রী বা মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিল

৭৭৬ পঠিত ... ২০:৩০, ডিসেম্বর ২০, ২০২০

বিশ্বে গণভোটে নির্বাচিত আমাদের মন্ত্রী-মিনিস্টারদের আমরা তাদের 'মহান' কাজের জন্য প্রায়শই পশুর চেয়ে অধম বলে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নানা মন্ত্রী, মেয়র হওয়ার জন্য প্রার্থী হিসেবে দাড়িয়েছে আসল প্রাণীরাই? এমনকি তারা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়ে সত্যি সত্যি হয়েছে এলাকার মেয়র। বিশ্বাস না হলে তবে আসুন জেনে নেই এমন ৯টি প্রাণীর কথা, যারা মানুষরুপী নানা পশুকে ছাড়িয়ে জিতে নিয়েছে গণমানুষের মন ও ভোট।

 

১# জালাপার (Xalapa) মেয়র মরিস (Morris)

গল্পকথায় ইঁদুরের যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে মানুষ হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার খোঁজ করলেও, জালাপা এলাকার মানুষ রাজনীতির নানা ইঁদুরকে ঘায়েল করতে সাদা-কালো বিড়াল মরিসের শরণাপন্ন হয়। ২০১৩ সালে সেখানকার মেয়র নির্বাচনের প্রার্থীর তালিকায় দুই ছাত্র মজা করে মরিসের নামও যুক্ত করে দেয়। আর এই সাদা-কালো বিড়াল ফেসবুকে তুলে নেয় ১৫০০০০ লাইক এবং ভোট জিতে নেয় ৭৫০০টি। ব্যালটে মরিসকে ভোট দিতে না দিলেও সে যে একজন যোগ্য মেয়র প্রার্থী ছিল সে বিষয়ে জোর দাবি জানায় তার মালিক। কারণ, সেও তো রাজনীতিবিদদের মতনই... শুধু খায় আর ঘুমোয়, আর তো কিছু করে না!

 

 

২# তালকিটনার মেয়র স্টাবস (Stubbs) 

আলাস্কার ছোট্ট গ্রাম তালকিটনা। সে গ্রামের ৯০০ জন অধিবাসী মানুষকে বাদ দিয়ে স্টাবস নামক কমলা রঙের বেড়ালকে নিযুক্ত করে মেয়র হিসেবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ১৬ বছর ধরে স্টাবস ছিল তালকিটনার মেয়র।

 

 

৩# সাও পাওলোর সিটি কাউন্সিলর কাকারেকো (Cacareco)

১৯৫৯ সালে ব্রাজিলের এক গণ্ডার যার নাম কাকারেকো (অর্থ আবর্জনা) সাও পাওলোর ৫০০ প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয় ১০০০০০ মানুষের ভোটে। এবারও ছাত্ররা মজার ছলে প্রার্থী তালিকায় উঠিয়েছিল ৫ বছরের এই গণ্ডারের নাম। প্রাণীটির জয়ী হওয়াই প্রমাণ করে দেয় হর্তাকর্তাদের ওপর শহরের মানুষের হতাশা ও বিরক্তি। আর গণ্ডার তো সত্যিই রাজনীতিবিদ-দের মতন- মোটাসোটা আর হেলেদুলে হাঁটা মোটা চামড়ার নিরেট নির্বোধ প্রাণী। কিন্তু বিপদে পড়লে জোরেসোরে দৌড়োতে তারা ঠিকই পারে। 

 

 

৪# র‍্যাবিট হ্যাশের রাজনীতিতে লুসি লোউ (Lucy Lou)

কেনটাকির র‍্যাবিট হ্যাশের মানুষেরা প্রাণীদের রাজনীতিবিদ হিসেবে দিব্যি মেনে নেয়। এই যেমন, লুসি লোউ বর্তমানে র‍্যাবিট হ্যাশের তিন নম্বর প্রাণী রাজনীতিবিদ। ২০০৮ সালে বেশ কয়েকটি কুকুর, একটি বিড়াল ও একজন মানুষকে পিছে ফেলে জিতেছে লুসি লোউ। তার কাজ হল বিভিন্ন অর্থ তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে গিয়ে উৎসাহ প্রদান ও অতিথিদের আপ্যায়ন করা। 

 

 

৫# লেজিটাসের মেয়র ক্লে হেনরি (Clay Henry)

বিনোদনের জগত থেকে আমাদের দেশে অনেকেই যেমন রাজনীতির জগতে যাচ্ছেন, তেমনি ক্লে হেনরিও বিয়ার-ড্রিংকিং এর মাস্কট থেকে মেয়র হয়ে গেছেন। ১৯৮০ সালে যখন হাস্টনের এক ব্যবসায়ী এসে হয়ে যান লেজিটাসের মেয়র, তখন ক্লে হেনরিকেও এলাকার মানুষ মেয়র হিসেবে বাছাই করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে ক্লে হেনরির মালিক জানান, যদি হাস্টনের কোনো লোক আমাদের মেয়র হতে পারে, তবে আমার ছাগল কেন হতে পারবে না? বর্তমানে ক্লে হেনরির নাতি/নাতনি তথা ক্লে হেনরি থ্রি লেজিটাসের সম্মানিত মেয়র হিসেবে বহাল আছেন। 

 

 

৬# আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পিগাসাস (Pigasus)

শূকরদের জন্য যে রাজনীতি কত কঠিন, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল পিগাসাস। ১৯৬৮ সালে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাড়াতে ইয়ুথ ইন্টারন্যাশনাল পার্টি (Yippies) পিগাসাসকে নির্বাচন প্রার্থী হিসেবে মনোনিত করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল পুলিশ পিগাসাস ও তার সাত সমর্থককে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। পুলিশ ইয়েপ্পিসকে জানায় পিগাসাস নাকি তাদের নামে পুলিশের কাছে নালিশ করেছে। কিন্তু শূকরদের সাথে পিগাসাস পাল্লা দেবে না তো কে দেবে? তবে পিগাসাসেরই বা কী দোষ? বর্তমানেও তো এক শূকর পুলিশ থেকে শুরু করে সবখানে খুব নালিশ করে যাচ্ছে। স্বজাতি থেকেই শেখা অভ্যেস বোধহ্য়! পরবর্তীতে সেই ৭ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পিগাসাসের কী হয়েছে তা আজও অজানা। 

 

 

৭# রোমের কনসুলেট ইনসিটাটাস (Incitatus) 

প্রাচীন ইতিহাসবিদ স্যুটোনিয়াসের তথ্যমতে, পাগল রোমান সম্রাট কালিগুলার প্রিয় ঘোড়া ইনসিটিটাস বাস করতো মার্বেলের ঘরে, খেতো সোনা মিশ্রিত যব আর ছিল একজন রোমান কনসুলেট। কিন্তু বর্তমানের ইতিহাসবিদরা বলেন, কালিগুলা পাগল সম্রাট ছিলেন না। বরং তিনি ইচ্ছে করেই ঘোড়াকে কনসুলেট করে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, এ কাজ এক অবলা প্রাণীকে দিয়েও করা সম্ভব। 

 

৮# সিটি কাউন্সিলর লোই (Loiô)

ক্লে হেনরির আগেও এক 'ছাগল' প্রার্থী ছিল ১৯২০ সালে। ব্রাজিলের ফোর্টালেজায় সে বছর কোনো প্রার্থীকেই জনগণের পছন্দ ছিল না। লোই এর নাম প্রার্থী তালিকায় না থাকলেও অনেকেই তার নাম কাগজে লিখে ভোট দিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়না। ১৯৩১ সালে মৃত্যুবরণ করা লোই এর দেহ বর্তমানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে সিয়ারা জাদুঘরে। 

 

 

৯# প্রেসিডেন্ট কলোসাস (Colossus)

নিউ হ্যাম্পশায়ারের হাডসনে অবস্থিত 'Benson's Wild Animal Farm'-এর প্রচারের জন্য এক ৫০০ পাউন্ড ওজনের গরিলাকে মনোনিত করা হয় নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রাথমিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের 'Vegetarian Part' এর জন্য। এক শিম্পাঞ্জি ছিল সেই গরিলার ক্যাম্পেইন ম্যানেজার। সে স্টেটের সেক্রেটারি অফিসে যায় সব কাগজপত্রের কাজ সামাল দিতে। কিন্তু সে হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত আর যেতে পারেনি। যদিও তার মালিক বলেছেন তাকে যেতে না দেওয়া বেআইনি। কারণ, সে বয়সের দিক দিয়েও ঠিক আছে, আবার আমেরিকাতেই তার জন্ম।

৭৭৬ পঠিত ... ২০:৩০, ডিসেম্বর ২০, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top