কয়েকটি অদ্ভুত ম্যাস হিস্টিরিয়ার গল্প

৮২৮ পঠিত ... ১৫:৩৭, নভেম্বর ২৫, ২০১৮

হিস্টিরিয়া হচ্ছে এমন একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে ব্যক্তির মধ্যে দুর্দমনীয় ভয় ও অতিরিক্ত আবেগ লক্ষ্য করা যায়। যাদের হিস্টিরিয়া রয়েছে তারা সাধারণত কোনো না কোনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত, অনিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন ও মানসিক অবসাদগ্রস্ত থাকেন। পত্রপত্রিকা যারা পড়েন, তারা একটি বিশেষ ধরণের হিস্টিরিয়ার সঙ্গেও পরিচিত থাকতে পারেন- ম্যাস হিস্টিরিয়া। যখন একদল মানুষ একে অপরের দেখাদেখি হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয় তখন তাকে ম্যাস হিস্টিরিয়া বলা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে আছে এমন সব ম্যাস হিস্টিরিয়ার হিস্টোরি, যা জানলে আপনি ভাবতে বাধ্য হবেন যে, বাস্তব আমাদের কল্পনার চাইতেও বিচিত্র! 

 

১# তানজেনিয়া, ১৯৬২

ঘটনার শুরু তানজেনিয়ার কাশাশা গ্রামের স্কুলে। স্কুলের হোস্টেলে তিন বান্ধবী আড্ডা দিচ্ছিলো। সেই আড্ডায় একজন হঠাৎ একটা কৌতুক শোনায়। শুনে উপস্থিত সবাই হাসতে শুরু করে। হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কয়েকজন। পাশের রুম থেকে ছুটে আসে অন্যান্যরা। এসে তাঁরাও হাসিতে যোগ দেয়। হাসি ছড়িয়ে পড়ে পুরো হোস্টেলে। একটু পরে হাসতে শুরু করে স্কুলের সব ছাত্রী।
হাসি চলতেই থাকে। শিক্ষকরা হাসি থামিয়ে ক্লাসে মনোযোগ দিতে বললেন ছাত্রীদেরকে। ফল হলো উলটো। শিক্ষার্থীরা আরো বেশি হাসতে শুরু করলো।

কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে স্কুল বন্ধ করে দিলো। ছাত্রীরা যারযার বাড়ি চলে গেলো। এবার হাসি ছড়িয়ে পড়লো তাঁদের বাড়িতে, তাঁদের গ্রামে।

কিছুদিন পর হাসি ছড়িয়ে পড়ে পাশের গ্রামে, পাশের স্কুলে। বাধ্য হয়ে অনেক গ্রাম, অনেক স্কুল এমন ব্যাবস্থা করলো যাতে এই হিস্টিরায় আক্রান্ত কোনো মানুষ তাঁদের গ্রামে বা স্কুলের সীমানায় প্রবেশ করতে না পারে। মাঝখানে কিছুদিন স্কুল খুলে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু লাভ হয়নি। আবার বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো। শুধু ঐ স্কুল না, ঐ সময় বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো মোট ১৪টি স্কুল।

ঘটনা চলেছে প্রায় চার মাস। এই সময়ে হাসতে হাসতে অনেকে অজ্ঞান হয়ে যায়। অনেকে বুকে, মুখে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অনেকে ভর্তি হয় শ্বাসকষ্ট নিয়ে। এই হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয় প্রায় ১০০০ মানুষ।

 

২# ড্যান্সিং প্ল্যাগ

১৫৫৮ সাল। ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গ শহরের ঘটনা।

ট্রফিয়া নামক এক ভদ্রমহিলা শহরের রাস্তায় হঠাৎ নৃত্য শুরু করলেন। আর থামাথামি নেই। ১ দিন গেলো... দুই দিন গেলো...। পাগলের মতো নাচতে থাকলেন মহিলা। আস্তে আস্তে তার সাথে যোগ দিতে থাকলো লোকজন। প্রথ সপ্তাহে যোগ দিলেন ৩৪ জন। ১ মাসের মধ্যে যোগ দিলেন ৪০০ জন। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মহিলা। চিকিৎসকরা আসলেন, ধর্মজাজকরা আসলেন, রাজনীতিবিদরা আসলেন। এসে নৃত্যরত লোকদের থামানোর চেষ্টা করলেন। কোনো কাজ হলো না। বেশ কয়েকদিন চললো নৃতোৎসব। কয়েকজন হার্ট অ্যাটাক হলো, কয়েকজনের স্ট্রোক হলো। কেউ নাচতে নাচতে ঘটনাস্থলেই মারা গেলেন।

 

৩# ওয়েস্ট ব্যাংক ফেইন্টিং এপিসোড

১৯৮৩ সাল। ইজরাইলের ওয়েস্ট ব্যাংক শহরের ঘটনা। হঠাৎ করে শ্বাস কষ্ট শুরু হলো এক কিশোরীর। এক ঘন্টার মধ্যে আরো ৬ জনের শুরু হলো একই সমস্যা।

শ্বাসকষ্ট ছড়িয়ে পড়লো অন্যান্য ক্লাসেও। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। ডাক্তাররা দেখলেন। খোজে পেলেন না কোনো কারণ। সমস্যা ছড়িয়ে পড়লো আশেপাশের স্কুলেও। কিছুদিনের মধ্যে আক্রান্ত হলো প্রায় ১০০০ ছাত্র। শহরের হাসপাতালগুলো রোগীর ভীড়ে নাকাল হয়ে গেলো। পরে অবশ্য অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্বও খোজা হয়েছে এক ঘটনার পেছনে। কেউ কেউ বলেছেন বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিলো বাতাসে। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিলো এ সমস্যা। যদিও এর পক্ষে পাওয়া যায়নি তেমন শক্ত প্রমাণ।

 

৪# ক্যাট নান, ফ্রান্স

মধ্যযুগের এ ঘটনা পরিচিত 'ক্যাট নান' নামে। এক রাতে এক নান বিড়ালের মতো 'মিয়াও' ডেকে উঠলেন। ঘটনা এ পর্যন্ত হলে সমস্যা ছিলো না। একটু পরে উনার আশেপাশের নানরা শুরু করলেন 'মিয়াও' ডাক। 'মিয়াও' ছড়িয়ে পড়লো আশপাশের গির্জার নানদের মধ্যেও। লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে আসলো। ঘটনা কী! পুরো শহর জুড়ে তখন 'মিয়াও' আর 'মিয়াও'। ঘটনা সামাল দিতে পুলিশকে নামতে হয়েছিলো মাঠে।

 

৫# নান-এর কামড়

১৫ শতাব্দীর আরেক ঘটনা। এক নান আরেক নানকে কামড় দিলেন। তারপর পালটা কামড়। কামড়াকামড়িতে যোগ দিলেন অন্য নানরাও। যে যাকে পায় কামড় দেয়। এ ঘটনা সামাল দিতেও নামতে হয়েছিলো পুলিশকে।

৮২৮ পঠিত ... ১৫:৩৭, নভেম্বর ২৫, ২০১৮

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top