ক্রাইম রিপোর্টার পারভেজ ভাই যখন বেকায়দায়

১১৮১ পঠিত ... ১৩:৪৫, জুলাই ১৩, ২০১৭

সময়টা সম্ভবত ১৯৯৬ বা ৯৭ সাল। আমরা কাজ করি ভোরের কাগজ পত্রিকায়। আমি ডেস্কে ছিলাম বলে রাতের শিফটে কাজ করতে হতো। রাত ১২টার দিকে শিফট শেষ হলে পত্রিকা অফিসের ভাড়া করা স্কুটারে আমাদের বাসায় পৌঁছে দেয়া হতো। কারণ সেসময় সাংবাদিকদের গাড়ি-টাড়ি তেমন ছিল না। অফিসের স্কুটারগুলোতেই আমাদের ফ্রি-রাইড দেওয়া হতো। এমনটাই নিয়ম ছিল। 

এরকমই একটি রাতে কাজ শেষে আমরা অফিসের নীচে দাঁড়িয়ে স্কুটারের জন্য অপেক্ষা করছি আর গল্প-গুজব করছি। মানুষের তুলনায় অফিসের স্কুটার ছিল কম। তাই অল্প কিছু স্কুটার রাত ১১টার পর থেকে অফিসের সামনে থেকে আমাদের তুলে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আবার অফিসের সামনে এসে আরেক কর্মীকে তুলে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিত। এ রকমভাবে চলত রাত ৩/৪টা পর্যন্ত। সাধারণত স্কুটার এলে প্রথম যাত্রী হিসেবে আমাকে সুযোগ দেয়া হতো। নারী বলে অগ্রাধিকার পেতাম। সাথে ওই রুটের পুরুষ সহকর্মীরাও যেতেন। একটু পর একটি স্কুটার এসে অফিসের সামনে দাঁড়ালো, ঠিক দাঁড়ালো না, গতি কমালো। আমি গিয়ে উঠবো উঠবো করতেই আমাদের পত্রিকার দুর্ধষ ক্রাইম রিপোর্টার পারভেজ ভাই গিয়ে লাফ মেরে স্কুটারে উঠে বসলেন এবং একাই সাই করে বেড়িয়ে গেলেন বাহনটি নিয়ে।

পারভেজ ভাই যতই দুর্ধষ ক্রাইম রিপোর্টার হোক না কেন, মানুষটা বেশ নরম-সরম, মোটাসোটা বাচ্চাদের মত ছিলেন। তাই আমরা খানিকটা অবাক ও বিরক্ত হলেও ব্যাপারটা মেনে নিলাম। ভাবলাম বাসায় নিশ্চয়ই কোন জরুরি দরকার আছে, তাই ব্রাদার লাফ মেরে স্কুটারে চড়ে পগারপাড় হলেন।

পরদিন পারভেজ ভাই অফিসে এসে যা বললেন, সেটা শুনে বেচারার উপর মায়াই হল। গতরাতে উনি স্কুটারে চড়ে চালককে বললেন, 'আজিমপুর চল।' স্কুটারওয়ালা বলল, 'স্যার রাস্তা চিনি না, চেনায় নিয়েন।' পারভেজ ভাই ভাবলেন অফিস নিশ্চয়ই নতুন স্কুটার ভাড়া করেছে। কারণ অফিসের স্কুটারগুলো প্রায় সবাই আমাদের বাসা চিনতো। উনিও ডান-বাঁম করতে করতে স্কুটারকে বাড়ির কাছে নিয়ে গেলেন। রাস্তা বেশ ভাঙা ছিল বলে পারভেজ ভাইকে বাড়ি থেকে একটু দূরে নামতে হল রাত ১টার দিকে। ওই রাস্তা মেরামতের জন্য খোঁড়াখুঁড়িও চলছিল সেসময়।

স্কুটার থেকে নেমে পারভেজ ভাই বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই স্কুটার চালক বলল, 'স্যার, ভাড়া না দিয়া কই যান?' পারভেজ ভাইতো অবাক। উনি উল্টো বললেন, 'ভাড়া মানে, কিসের ভাড়া? কেন ভাড়া?'

স্কুটারওয়ালা বলল, 'আরে মামা, স্কুটারে চইড়া আইলেন, আর ভাড়া দিবেন না? আর রাইতের ভাড়াতো বেশিই হয়।'

ততক্ষনে পারভেজ ভাই বুঝতে পেরেছেন উনি অফিসের স্কুটারে না এসে ভাড়া স্কুটারে এসেছেন। আর এজন্যই চালক তার বাসা চেনে নাই। এখন ভাড়াও চাচ্ছে। সমস্যাটা আরও প্রকট হল, যখন পারভেজ ভাই বুঝতে পারলেন উনার পকেটে ভাড়া দেয়ার মত যথেষ্ট টাকা নেই। বাসা থেকে এনে দিতে হবে।

রাত বাড়ছে, সেই সাথে রাস্তায় কুকুরের চলাচল ও হাঁকডাঁকও বাড়ছে। স্কুটারওয়ালা পারভেজ ভাইকে বাসা থেকে টাকা এনে দেয়ার ব্যাপারে বিশ্বাস করতে পারছে না এত রাতে। এদিকে পারভেজ ভাইয়ের এ ছাড়া কোনো উপায়ও নাই। অনেক কথাবার্তার পর, স্কুটারওয়ালা অপেক্ষা করতে রাজি হলো। এছাড়া উপায়ও নেই। আমাদের পারভেজ ভাই ভাঙা রাস্তায় হেঁটে গিয়ে বাড়ি থেকে যখন টাকা নিয়ে এলেন, ততক্ষণে ঘড়ির কাটা রাত আড়াইটা ছুঁইছুঁই।

স্কুটারওয়ালা বাংলামটরের অফিসের সামনে এত রাতে এত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাহনের গতি স্লো করেছিল যাত্রীর আশায়। আর পারভেজ ভাই সবাইকে টেক্কা দেবেন বলে লাফ দিয়ে গিয়ে ওটাতে চড়েছিলেন। আসলে সবই বোঝার ভুল। তবে এটাও ঠিক যে আমি যদি সেই রাতে পারভেজ ভাইয়ের জায়গায় এভাবে নাস্তানাবুদ হতাম তাহলে ব্যাপারটা বেমালুম চেপে যেতাম। আজকে পারভেজ ভাইয়ের সাথে ফেসবুক ফ্রেন্ড হওয়ার পর এই ঘটনাটির কথা মনে হল ।

১১৮১ পঠিত ... ১৩:৪৫, জুলাই ১৩, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top