এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মতবিনিময় ও শুভেচ্ছা প্রদান অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'আকাশ থেকে ঢাকা শহরকে লস অ্যাঞ্জেলেস মনে হয়। কুড়িল ফ্লাইওভার দেখলে মনে হয় এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য। হাতিরঝিলে বেড়াতে গেলে মনে হয় প্যারিস এসেছি।'
নোংরা, ময়লা এবং খোলা নর্দমায় ভরা এই শহরকে কি আসলেই লস অ্যাঞ্জেলসের মতো দেখায়? নগর পরিকল্পনার ছিটেফোঁটাও না থাকা আমাদের এই ঢাকায় অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনা এসব যেন নিত্ত নৈমিত্তিক ঘটনা। তবুও কি পাশ্চাত্যের উন্নত শহরের সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে?
নগর-বিজ্ঞান সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের প্রতিবেদক ছুটে যায় একজন উন্নয়নধর্মী নগরবিদের কাছে। বহুতল সেই ভবনের একেবারে উপরের তলায় পৌঁছে প্রতিবেদক খেয়াল করেন, ঢাকা শহরকে বিভিন্ন অ্যাংগেলে দেখার সরঞ্জাম রয়েছে নগরবিদের কার্যালয়ে! আকাশ থেকে বিভিন্ন অ্যাংগেলে ঢাকার বিভিন্ন রূপ দেখে মনে হলো, সে যেন এক উন্নয়নের ল্যাবরেটরি।
আমাদের প্রতিবেদককে দেখেই নগরবিদ তাকে একটি দূরবীনের কাছে নিয়ে যান। দূরবীনে একবার দু সেকেন্ডের জন্য চোখ রেখে তিনি নিজেই আবেগপ্রবণ হয়ে যান। বলেন, 'এটা একান্তই আমার আবিষ্কার। এই নলটা দিয়ে আপনি ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় চোখ রাখুন। উন্নয়ন দেখতে পারবেন। দেখেন না, প্লিজ টেক এ লুক...'
আমাদের প্রতিবেদক নলে চোখ রাখতেই চমকে ওঠে! সে এক আশ্চর্য দৃশ্য! কোন সে শহর, যে শহর এত পরিচ্ছন্ন, কোনো ভিড়-ভাট্টা নেই, নেই অযথা হর্ন কিংবা অব্যবস্থাপনা! চোখ সরাতেই নগরবিদ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, 'দেখলেন তো দেখলেন তো? বলুন তো কোন শহর?'
আমাদের প্রতিবেদক নার্ভাস ভঙ্গীতে 'সানফ্রান্সিসকো' বলে উঠলে ভদ্রলোক হো হো করে হেসে বলেন, 'আরে নাহ! এটা হলো গুলিস্তান। দেখলেন? উন্নয়নস্কোপ দিয়ে তাকালে গুলিস্তানকেও সানফ্রান্সিসকো মনে হয়। দেশ সত্যিই এগিয়ে যাচ্ছে, দৃষ্টিভঙ্গিটা জাস্ট বদলাতে হবে। এজন্যই আমার এই আবিষ্কার উন্নয়নস্কোপ।'
উন্নয়নধর্মী নগরবিদের আবিষ্কৃত এই উন্নতমানের দূরবীনে ঢাকার আরও বিভিন্ন জায়গা অবলোকন করেন আমাদের প্রতিবেদক। এই উন্নয়নস্কোপে ৪৫ ডিগ্রি কোনাকুনি তাকালে ঢাকাকে সিঙ্গাপুর, ৬০ ডিগ্রি কোণে মালয়েশিয়া, এবং ৩০ ডিগ্রি কোণে লস অ্যাঞ্জেলস মনে হয়!
কিন্তু নগরের চিত্র তো এমন হওয়ার কথা নয়। এই শহরের বড় ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধক ব্যবস্থা তো দূরের কথা, একটা নূন্যতম ফাআর এক্সিট পর্যন্ত নেই, তবু কী করে এলো এমন পাশ্চাত্যের মতো উন্নয়ন? এ প্রসঙ্গে নগরবিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কয়েকটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখান। দেখানোর সময় কিছুক্ষণ জিডিপি, নিজের টাকায় পদ্মাসেতু এসবের কিছু হিসাব নিকাশ বুঝান। কিছু না বুঝলেও এত জ্ঞানী মানুষ যখন বলছে, তাহলে ঠিকই হবে ভেবে আমাদের প্রতিবেদক আর কোনো প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকেন।
হুট করে মানুষের চিৎকারে কেঁপে ওঠে সেই বহুতল ভবন। আতঙ্কিত মানুষের আর্তচিৎকার থেকে জানা যায়, ভবনটিতে আগুন লেগেছে। আমাদের প্রতিবেদক নগরবিদের কাছে জানতে চান, ভবনে কোনো ফায়াড় এক্সিট আছে কিনা। না সূচক উত্তর দিয়ে নগরবিদ বলেন, 'ফায়ার এক্সিট কোনো উন্নত শহরের উন্নয়নের সূচক হতে পারে না। যেহেতু আগুনের মধ্য থেকে নামার কোনো উপায় নেই, চলুন আমরা প্যানিক না করে উন্নয়নস্কোপে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা দেখি।'
এই পর্যায়ে আমাদের প্রতিবেদক জানালা খুলে লাফ দিয়ে ব্যাগে থাকা এমারজেন্সি প্যারাসুটটি খুলে সেফ ল্যান্ডিং করেন। নিচে নামার সময় আকাশ থেকে এই শহরকে তার কাছে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির মতো মনে হচ্ছিল।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন