কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী রেখে মনোনয়ন জমার দেয়া নিয়ে চারিদিকে হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৫ সালে তৎকালীন নারীদের পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজনীতিতে ৩০ শতাংশ আসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তখনকার দিনে নারীদের উপস্থিতি সর্বত্রই ছিল নগণ্য। সরকার কেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কে জানে! তবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ভঙ্গের উদ্দেশ্যেই। আর বাংলাদেশে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ভেঙে গুঁড়াগুঁড়া করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
তবে এখন আর নারীরা রাজনৈতিক আলাপ থেকে দূরে থাকে না। রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চায়, আলাপ আলোচনায় নাক ও গলাতে চায়। খুন্তি আর ডাইল ঘুটুনি নিয়া স্বৈরাচার ফালায়া দেয়। তাই এখন সরকার মনে করছে তারা যেহেতু রাজনীতি নিয়ে তুলনামূলক সচেতন হচ্ছে, মাঠে ময়দানে আসতেছে, তাই তাদের এ বিষয়ে এত জড়িয়ে নেয়ার আর দরকার নেই। নারীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্তের বিপরীতে আরও কিছু যুক্তি উল্লেখ করে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক পুরুষ মুঠোফোনে জানান, দেখেন ভাই, নারীরা হইলো কোমলমতি। তাদের পক্ষে তো ঠিকঠাক চাঁদাবাজি করা তো সম্ভব না! কেন্দ্র দখল করা সম্ভব না! রাতের বেলা যাইয়া ভোট দিতে পারবে? তাছাড়া অনেক রিস্কও তো! এইসব রিস্ক আমরাই নিতেছি। নারীদের নেয়ার দরকার নাই। আমরা রাজনীতির মাঠ থেকে ঘরে ফিরলে তারা আমাদের সেবা করবে, হাত-পা টিপে দিবে। ঘরের লক্ষ্মী হয়ে থাকবে। বাইরে কী! আমরা দেশের সেবা করবো, তারা আমাদের সেবা করবে।
বিষয়টি নিয়ে এক নারীর মতামত জানতে চাইলে দুইজন পুরুষ এসে সেই নারীটিকে সরিয়ে দেয়। এরপর আমাদের মাইক কেড়ে নিয়ে বলতে শুরু করেন, দেখেন, নারীদের আমরা এত চাপ দিতে চাই না। তারা মেয়ে, তারা কন্যা, তারা মা, তারা বোন, তারা বান্ধবী। তারা কী করবে আমরা যদি ঠিক না করে দেই তাহলে কে করে দিবে! জেনে রাখবেন, ভদ্র ঘরের মেয়েদের কাছে বাবার মতামতই তাদের মত। তারা থাকবে ঘরে, বাইরে যাবে শুধু স্বৈরাচার তাড়ানো লাগলে! রাজনীতি কইরা করবেটা কী! তাছাড়া বাইরে তো নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। আমরা তো ওনাদের ভালো ই চাই। তাই কম করে হলেও ৫ শতাংশ দিচ্ছি। এটা নিয়াও তারা সমালোচনা করতেছে শুনলাম। আসলে মহিলাদের...
তখনই ওনার সংযোগটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ব্যাপারে নিজ দায়িত্বে মন্তব্য করতে আসা আরেক দায়িত্ববান পুরুষ বলেন, কথায় আছে উপকারীদের বাঘে খায়! সিদ্ধান্তের মত জটিল একটা জিনিস আমরা মহিলাদের উপর না চাপিয়ে নিজেরা নিয়ে ওনাদের দিচ্ছি, সেটা নিয়াও ওনারা নাখোশ! মহিলাদের খুশি করা ইম্পসিবল! আমি পারি নাই, না মানে কোন সিদ্ধান্তেই তারা সহজে খুশি হয় না, ৫% কোন ছার! এই দ্যাখেন আমার আবার খুব সিদ্ধান্ত পাচ্ছে।
একজন দলীয় নারীকে এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলে তিনি অবশ্য দলের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করে বলেন, আমার দুঃখ নাই, আমি গতানুগতিক নারীদের মত না। আমার দল নারীদের ব্যাপারে সচেতন এবং ৫ শতাংশের মধ্যে আমি যেহেতু আছি তার অর্থ নারীদের অধিকার ঠিকঠাক গতিতেই এগোচ্ছে! আপনি যতই চেষ্টা করেন ভাই, নারী-পুরুষের বিষয়ে আপনি বাইনারিতে আসতে পারবেন না।