গ্রেফতার হয়েছেন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তার আগমনে নতুন প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবেশ, এমনটাই মনে করছেন সবাই। একসময়ের ব্যস্ত ও আলোচিত নেতারা—পলক, সালমান, আনিসুলসহ অন্যরা দীর্ঘদিন ধরে জেলে বসে যেভাবে আনপ্রোডাকটিভ সময় পার করছিলেন, কলিমুল্লাহর গ্রেফতার যেন তাদের জন্য হয়ে উঠেছে এক আলোর দিশা।
বেরোবির উপাচার্য থাকাকালে কলিমুল্লাহ রাত ৩টায় ক্লাস নিতেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, এই মিস্টিক আওয়ারে পড়াশোনা করলে তা সহজে মাথায় ঢোকে। নিরিবিলি রাত, ঘুমহীন চোখ আর চায়ের কাপ—এই ছিল তার একাডেমিক পরিবেশ। এবার সেই অনন্য অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত জেলের ছাত্ররাও।
জুনায়েদ আহমেদ পলক অনেক আফসোস নিয়ে বলেন, অনেকদিন ধরেই পড়াশোনার বাইরে ছিলাম ভাই। সবাই ভাবে, জেলে লাইব্রেরি আছে, টিভি আছে, ভিআইপি সেবা আছে—ইচ্ছে করলেই পড়াশোনা করা যায়। কিন্তু আমরা তো বাঙালি—কলিম মাস্টারের মতো কেউ বেত না নিয়ে পড়ায় মন বসাতে পারবে না। উনি জেলে আসলে হয়তো সত্যিকারের মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে পারব।
অন্যদিকে সালমান এফ রহমানও বেশ উৎফুল্ল মন নিয়ে বলেন, সুবহে সাদিকের আগে আগে পড়তে বসা আমার বহু দিনের স্বপ্ন। রাতে তাহাজ্জুদের পর একা বসে পড়তে চেয়েছি সবসময়। কিন্তু ঘুম এসে যেত বার বার। আর দিনে ঘরে-বাইরে এত কোলাহল থাকে, মন বসে না। কলিম মাস্টার সেই রাত ৩টার মানুষ, এই সময়টাই তো চাইছিলাম আমরা। ওনার মতো পারফেক্ট টিচার আমাদের জন্য আর কে আছে বলুন?
জেলের নেতারা এখন আগামীর করণীয় নিয়ে ‘স্ট্র্যাটেজিক স্টাডি’ করতে চান। তাদের বিশ্বাস, কলিমুল্লাহর তত্ত্বাবধানে তারা নতুন এক রাজনৈতিক রেনেসাঁর সূচনা করবেন। রাত তিনটা থেকে শুরু হবে ক্লাস, আর ঘুম ছুটবে রাষ্ট্রচিন্তায়!
এইদিকে অধ্যাপক কলিমুল্লাহ জেলে যাচ্ছেন বলে কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। চোরের ৩৬৪ দিন আর সাধুর যে ১ দিন সেইটা বোধ হয় তাকে দেখলেই বোঝা যায়। গোয়েন্দার হাতে ধরা পড়ার পর অধ্যাপক কলিমুল্লাহ মাটির ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়েছেন, পুলিশকে গালাগালি করেছেন, পরে শান্ত হয়ে বসে বলেছেন, চলুন তাহলে, আর তো কোনো গতি নেই।
দেশবাসী আশা করছেন জেলখানায় এমন বড় মাপের মাস্টার থাকলে জেলে এক আমূল পরিবর্তন আসবে। এখান থেকেই যেমন আওয়ামী সামনে তাদের পথচলাকে গুছিয়ে নিতে পারবে তেমনি সাধারণ মানুষরাও শিক্ষিত হয়ে জেলখানা থেকে বের হয়ে দেশের উন্নয়ণে কাজ করবে। সেন্ট্রাল জেলের সুপার সাহেব তো বলেই দিয়েছেন, আমরা এমন এক মাস্টারকে আনতে যাচ্চি যার কারণে দেশে নতুন এক ট্রেন্ড শুরু হবে। ‘চুরি চামারি করে এসো, শিক্ষিত হয়ে বের হয়ে যাও’ জেলের জন্য এমন ট্যাগ লাইন রাখা যায় কিনা সেটা নিয়েও ভাবছি।