সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড আসে, ট্রেন্ড যায়। তবে চলে যাওয়া ট্রেন্ড আবার মাঝে মাঝে ফিরেও আসে কিছু সময়ের মতো, ঠিক যেন ফ্যাশনের মতো। এই যেমন অতি সম্প্রতি ট্রেন্ড হয়ে ফিরে এসেছিল দু বছর আগেও একবার ট্রেন্ড হয়ে ওঠা 'ফেসঅ্যাপ'। আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সামান্য সময় কাটালেও নিউজ ফিডে অগণিত কিশোর-তরুণের ‘বুড়ো বয়সের’ ছবি দেখে ফেলেছেন বলে ধরে নেয়া যায়। একটি অ্যালগরিদমের সাহায্যে চেহারার বিশ্লেষণ করে বয়স ‘বাড়িয়ে’ ফেলা অ্যাপটি অর্জন করে নিয়েছে দুর্দান্ত জনপ্রিয়তা। তবে কোন অ্যালগরিদম কিংবা প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই বৃদ্ধ বয়সের ছবি কল্পনা করেছিলেন শিল্পী মাসুক হেলাল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের তারকাদের নিয়ে অনেককাল আগে তিনি করেছিলেন এমনই ‘এক্সপেরিমেন্ট’।
অ্যালগরিদম বা ইন্টারনেট তো দূরের কথা, তখনো বাংলাদেশে স্যাটেলাইট চ্যানেলের যুগই শুরু হয়নি। ‘আনন্দ বিচিত্রা’ তখন জনপ্রিয় সিনে ম্যাগাজিন। ঢাকাই চলচ্চিত্র দুনিয়ার খোঁজ-খবর আর সিনেমা তারকাদের জীবনের খবর নিয়েই চলত ম্যাগাজিনটি। আশির দশকের শেষদিকে সেখানেই কাজ করতেন মাসুক হেলাল। তখন আনন্দ বিচিত্রার সম্পাদক ছিলেন শাহাদাত চৌধুরী। পত্রিকায় নিয়মিত মজার কিছু দিতে চাইছিলেন তিনি। সেই শুনে মাসুক হেলাল ভাবলেন এক অভিনব আইডিয়া ‘বয়স যখন ষাট’।
তৎকালীন পর্দা কাঁপানো তারকাদের বয়স বেড়ে যখন ষাট হবে, তখন তাদের কেমন দেখাবে! এটিই ছিল আইডিয়া। প্রথম ‘শিকার’ ছিলেন ববিতা। তারপর একের পর এক তারকারা মাসুক হেলালের তুলির ‘শিকার’ হওয়া শুরু করলেন। কিছুদিন পর ছবির সাথে যুক্ত হলো ষাট বছর বয়সী তারকার কাল্পনিক সাক্ষাৎকারও। মজার এসব সাক্ষাৎকার লিখতেন সাংবাদিক মাহমুদা চৌধুরী।
বৃদ্ধ বয়সের ছবি ও কাল্পনিক সাক্ষাৎকারের নিয়ে তখন অনেকের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রশংসা। তবে অনেকের সমালোচনার শিকারও হয়েছেন। কেউ কেউ তো ক্ষিপ্ত হয়ে রীতিমত হুমকিও দিয়েছিলেন। নায়ক সোহেল রানাকে নিয়ে করা ‘বয়স যখন ষাট’ নিয়ে বেশ ক্ষেপে গিয়েছিলেন তিনি। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাসুক হেলাল অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন, ‘তখন সিনেমায় যেসব লোকজন এক্স্ট্রা হিসেবে ফাইটার চরিত্রে অভিনয় করতো, তারা দলবেঁধে আমাদের খোঁজে ঘোরাঘুরি করছিল। আমাদের সাবধানে চলাফেরা করতে হচ্ছিল।’
কাল্পনিক সাক্ষাৎকার পর্বটি নিয়েও সাংবাদিক মাহমুদা চৌধুরীর একটা আলাদা ভাবনা ছিল। আশির দশকে ঢালিউড তখনো বয়সীদের দখলে, নতুনরা জায়গাই পেত না। মাহমুদা চৌধুরীর ভাষায়, ‘ এদের সবার এত বয়স হয়ে গেছে, তবু কেউ নতুনদের জন্য জায়গা ছাড়ছিলেন না। মধ্যবয়স পেরিয়ে যাওয়া এই তারকারাই তখনো ঢাকাই ছবিতে মূল নায়ক বা নায়িকার ভূমিকা করে যাচ্ছেন। প্রোডাকশান হাউসগুলোও ছিল এদেরই নিয়ন্ত্রণে। এটা নিয়ে আমার ক্ষোভ ছিল। তাই বয়স যখন ষাট সিরিজের লেখায় আমি এটা নিয়ে খোঁচা দেয়ার চেষ্টা করতাম।’
এই সিরিজে ‘বৃদ্ধ হওয়া’ অনেকেই ৬০ বছর বয়স পেরিয়েছেন। কারো চেহারা বেশ অন্যরকম ছিল, আবার কারো চেহারা ছবির কাছাকাছিই রূপ নিয়েছে। আবার কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন ৬০ পূর্ণ করার আগেই। ৮৮-৯০ সাল পর্যন্ত চলা এই সিরিজের কয়েকটি ছবি থাকছে eআরকির পাঠকদের জন্য।
#১
#২
#৩
#৪
#৫
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন