মশার অধিকার রক্ষায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হচ্ছে 'মশা মেলা'

২৩০৯ পঠিত ... ১৯:৩৬, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯

বাস্তু সংস্থানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মশা। বেঁচে থাকার জন্য স্বল্প মাত্রায় রক্ত খেয়ে থাকে। তবু তাদের উপর মানুষের শত আক্রোশ। মশা একটু কাছে আসলেই যেন মানুষের মাথায় রক্ত চেপে যায়। তারা খুন করতে উদ্যত হয় নিরীহ এই প্রাণিদের। মশা দমনে কয়েল, ধোঁয়া, ইলেক্ট্রনিক ব্যাটসহ মানুষ আরো কত কি যে উদ্ভাবন করেছে, তা হিসাব করা কষ্টসাধ্য। সম্প্রতি মশাদের উপর এদেশের মানুষের ক্ষোভের মাত্রাটা যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠার পায়তারা করছে কিছু ধ্বংসকামী মানুষ। তাদের কথা বার্তা, আলোচনা কিংবা ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঠাই নিচ্ছে মশা নিধনের নীল পরিকল্পনা।

এমন অবস্থায় মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিছু মশাপ্রেমী মানুষ। ফেসবুকে মশা রক্ষা ও মশার বংশ বিস্তারের পক্ষে কাজ করার জন্য আয়োজন করতে যাচ্ছেন ‘মশা মেলা’। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি মশার অভয়ারণ্য হিসেবে অবহিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মেলার আয়োজন হবে বলে তারা ঘোষণা দিয়েছেন মশা মেলা নামের একটি ফেসবুক ইভেন্টে।

ফেসবুক ইভেন্টটিতে লেখা আছে এই ইভেন্টের মূল উদ্দেশ্য- ‘অতিথি পাখির মত মশা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর একটি ঐতিহ্য। সৃষ্টিকর্তা কোন কিছুই বিনা কারণে সৃষ্টি করেননি। মশাও জীবগজগতের খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে এসে নানান কারণে অলস হয়ে যায়, ঠিকঠাক পড়তে পারে না। মশা তাদের ঘুমানোর ব্যাঘাত ঘটিয়ে লেখাপড়া করতে সাহায্য করে। অথচ কিছু ছাত্রছাত্রী ইদানিং মশা নিধনের দাবি তুলছে! ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে হলে থাকে, আবার কত দাবি! তাই সময় এসেছে প্রশাসনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার। প্রশাসনের মশক-প্রেম যদি বিশ্ববাসী যদি জানতে পারে তবে এটা গিনেজ বুকে রেকর্ড হবে। হ্যাঁ বন্ধুরা, আমরা এটাই করতে চাচ্ছি। এজন্য প্রাথমিকভাবে একটা মশামেলার আয়োজন করতে চাচ্ছি। এই মেলায় মশকপ্রেমীদের একটা আলোচনা হবে যেখান থেকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। মরা পাখি মরা প্রজাপতি দিয়ে যদি জাবিতে মেলা হতে পারে তবে লক্ষ কোটি মশা দিয়ে কেন মশামেলা আয়োজন করতে পারব না? অবশ্যই পারব আপনারা সাথে থাকলে। আপনাদের সাথে মশার সম্পর্ক রক্তের, তাই আপনারা যে সাথে থাকবেন এটা আমি নিশ্চিত। তাই নির্ধারিত সময়ে চলে আসুন। কোন জিজ্ঞাসা থাকলে যোগাযোগ করুন।’

মশা মেলার উদ্যোক্তা সাজ্জাদ আহমেদ জানান, ‘মশা মেলা নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা হলো, যেভাবে ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া ম্যালেরিয়া ইত্যাদি প্রতিরোধের নাম করে মানবজাতি নির্বিচারে মশাদের হত্যা করছে, এতে অদূর ভবিষ্যতে মশা এনডেঞ্জারড প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এমনটা চাই না। মশা প্রতিরোধে মশারী ব্যবহার করা যেতে পারে। জীবিকার তাগিদে রক্ত খেয়ে বাঁচা মশাদের জন্য অভয়ারণ্য বানানো যেতে পারে। কিন্তু এমন মশাদের উপর জেনোসাইড মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা মশা নিধন রোধে ২৮ তারিখ একটা মশারি মিছিল নিয়ে রেজিস্ট্রারের সামনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি। মশারীর চার মাথা ধরে থাকবে চারজন। মিছিল শেষে ‘মশাকে বাঁচতে দিন’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হবে। সর্বশেষ মশাবান্ধব কয়েল প্রদর্শনী, মশাকে নিয়ে গান কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।’ 

মশা মেলাকে নিয়ে বেশ শোরগোল হচ্ছে পুরো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে। একজন শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন ‘মশাই একমাত্র প্রাণী যে জীবনের রিস্ক নিয়ে আমাদের গান শোনায়। নির্ঘুম রাতে এমন দরদি টানে পিনপিন করে কে আমাদের সঙ্গ দিবে? এমন নিবেদিতপ্রাণ প্রাণি হত্যা করার আগে একবার হলেও আমাদের ভাবা উচিৎ। এভাবে কত মশা আর অকালে প্রাণ হারাবে। যখন পুরো ক্যাম্পাসে মশা নিধন অভিযান শুরু হয়, তখন কোথায় থাকে ঐসব মানবাধিকার সংগঠনগুলো?’

আরেকজন বলেন, ‘লঘু পাপে গুরু দন্ড দেওয়া নীতিবিরুদ্ধ কাজ! মশা পেটের দায়ে ক্ষুধার জ্বালায় অল্প একটু রক্ত খেতে আসে। কিন্তু আমরা তাদের তখন হয়ে উঠি হিংস্র। নিষ্ঠুর থাপ্পরে তাৎক্ষণিক মেরে ফেলি তাদের। মেরে ফেলার পরিবর্তে মশাদের বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা করা হোক! তাদের জীবনধারণ করা কি অপরাধ? তাদের জন্মই আজন্ম পাপ?’

অন্যদিকে মশা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমাদের বলেন, মশা আমাদের অনেক উপকারী বন্ধু। রাত গুনগুনিয়ে ঘুম পাড়ানো থেকে শুরু করে সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়ে আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। আমাদের রক্ত খেয়ে শরীরে রক্তের উৎপাদন বাড়ায়, বাংলা সাহিত্যে মশার ব্যাপক অবদান রয়েছে। বীর প্রাণি মশার বীরত্বের দিকে বাংলা সাহিত্যে আলোকপাত করা হয়েছে। লেখা হয়েছে 'মশা মারতে কামান দাগা'র মত বহু বাগধারা। এছাড়া মশার প্রতি ভালবাসা থেকে কবি মর্শেনেন্দু গুন লিখেছেন-

আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমাকে মশারী টাঙাতে সাহায্য করুক,
শুধু মশার কামড় থেকে বাঁচানোর জন্য।
সিঙ্গেল মশারী টাঙাতে টাঙাতে আমি এখন ক্লান্ত।

আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করুক
মশার কয়েল লাগবে কিনা

এরোসেল স্প্রে আমি নিজেই ছিটাতে পারি।

আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন বাহির থেকে মশারীর ভেতরে মশা ঢুকিয়ে দিক।

মশার কামড় খাওয়ার সঙ্গী না হোক,
কেউ অন্তত আমাকে জিজ্ঞেস করুক
‘তোমার রক্ত এত লাল কেন?’

এই মশা মেলার কথা জানতে পেরে তাবৎ মশকশ্রেণির মধ্যে ব্যপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। আবেগাপ্লুত হয়ে তাদের চোখ থেকে ঝরে পড়া দু’ফোঁটা চোখের জলের প্রভাবে এই মেলার ৩ দিন আগে থেকেই, অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই ঘন বর্ষণ নেমেছে দেশজুড়ে। চিত্রনায়িকা শাবনূরের মতো আবেগী এক মশাকে এই মেলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি আমাদের বলেন, ‘আমাদের দুঃখ কেউ বুঝতো বলে আগে তো বিশ্বাসই করতাম না। এই আয়োজন দেখে বুঝলাম, মানবতা এখনো বেঁচে আছে।’

২৩০৯ পঠিত ... ১৯:৩৬, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top