প্রবারণা পূর্ণিমা: যে কারণে পালন করা হয়

২০৩২ পঠিত ... ২১:০৮, অক্টোবর ০১, ২০২০

আজ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব 'প্রবারণা পূর্ণিমা'। প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পালিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব যা আশ্বিনী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত।

 

প্রবারণা শব্দের অর্থ কী?

‘প্রবারণা’ শব্দের পালি আভিধানিক অর্থ— নিমন্ত্রণ, আহ্বান, মিনতি, অনুরোধ,সমাপ্তি, ভিক্ষুদের বর্ষাবাস পরিসমাপ্তি, বর্ষাবাস ত্যাগ, বর্ষাবাস ত্যাগের কার্য অথবা শিষ্টাচার।
প্রবারণা দ্বারা আত্মশুদ্ধি বা আত্মসমালোচনাকেও বোঝায়। আজকের দিনে ভিক্ষুরা হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে চারিত্রিক শুদ্ধির জন্য একে অন্যকে করজোড়ে বলেন, বন্ধু, যদি আমার কোনোরূপ দোষত্রুটি দেখো বা কারও থেকে শুনে থাকো এবং এ কারণে যদি আমার ওপর সন্দেহ হয়ে থাকে তাহলে আমাকে বলো, আমি তার প্রতিকার করব।
বিনয় পিটকের পরিভাষায় একেই বলে ‘প্রবারণা’।

 

কী হয়েছিলো এই দিনে?

আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ 'বুদ্ধত্ব' লাভের পর আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা উৎসব পালন করেন। সেই থেকে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুরা বর্ষাবাস শেষে দিবসটি পালন করে আসছেন।
এই শুভতিথিতে ভগবান বুদ্ধ দেবলোক থেকে সাংকশ্য নগরে অবতরণ করেছিলেন। ভিক্ষুদের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রতাদিও সম্পন্ন হয় আজকের দিনে।
কথিত আছে, এই তিথিতে গৌতম বুদ্ধ ৬০ জন প্রশিক্ষিত শিষ্যকে ধর্ম প্রচারণার জন্য বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেন এবং তাদের বলেন, 'চরত্থ ভিকখবে চারিকং, বহুজন হিথায় বহুজন সুখায়'- অর্থাৎ, তোমরা বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য চারিদিক ছড়িয়ে পড়।

এ কারণে আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের পরম পবিত্র দিন। পরবর্তী একমাসব্যাপী প্রতিটি বৌদ্ধ গ্রামে পালাক্রমে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় শুরু হয় দানশ্রেষ্ঠ ‘কঠিনচীবর দান’ উৎসব।

 

এক নজরে কঠিন চীবরদান

'কঠিন চীবর দান' বৌদ্ধ ধর্মের একটি ধর্মীয় আচার ও উৎসব, যা সাধারণত বাংলা চন্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী প্রবারণা পূর্ণিমা (ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা) পালনের এক মাসের মধ্যে যেকোনো সুবিধাজনক সময়ে পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে 'ত্রি-চীবর' নামে বিশেষ পোশাক দান করা হয়। ধর্মাবলম্বীগণ পূণ্যের আশায় প্রতি বছর এভাবে চীবরসহ ভিক্ষুদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রীও দান করে থাকেন।
(ত্রি-চীবর হলো চার খণ্ডের পরিধেয় বস্ত্র, যাতে রয়েছে দোয়াজিক, অন্তর্বাস, চীবর ও কটিবন্ধনী। এই পোশাক পরতে দেয়া হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের)

কঠিনচীবর দান প্রদানকারী এবং দান গ্রহণকারী উভয়ের ফল পুণ্যময়। কঠিনচীবর লাভের ভিক্ষুর পঞ্চফল এবং তিনি পাঁচটি দোষমুক্ত হন। এর মাধ্যমে কায়িক, বাচনিক ও মানসিক অতিরিক্ত পুণ্য সঞ্চয় হয়। এটাই কঠিনচীবর দানের বিশেষত্ব। তাই এ দানকে ‘দানশ্রেষ্ঠ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

মহাকারুণিক বুদ্ধ পাথ্যেয়কবাসী ত্রিশজন ভিক্ষুকে উপলক্ষ করে দানোত্তম কঠিনচীবর দানের প্রবর্তন করেছিলেন।


প্রবারণার কর্মসূচি

প্রবারণার কার্যসূচি শুরু হয় ভোরে বিশ্বশান্তি কামনায় বিশেষ সূত্রপাঠের মধ্য দিয়ে। প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে এ নিয়ম পালিত হয়। সকাল ৭টায় বিহার প্রাঙ্গণে উত্তোলন করা হয় জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা। সকাল ৯টা-১০টার মধ্যে শুরু হয় বুদ্ধ পূজা। উপাসক-উপাসিকা, দায়ক-দায়িকারা পঞ্চশীলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কেউ কেউ অষ্টশীল গ্রহণ করেন। এভাবে বেলা ১২টার মধ্যেই দিনের প্রথমভাগের কার্যসূচি শেষ হয়।

দুপুর দুইটার দিকে স্ব-স্ব বিহারের অধ্যক্ষের সভাপতিত্বে আজকের দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভিক্ষুসংঘের পাশাপাশি গৃহীরাও ধর্মীয় আলোচনায় অংশ নেন।
সন্ধ্যায় আলো ঝলমলে বাতি দ্বারা বিহারে করা হয় আলোকসজ্জা। প্রবারণা পূর্ণিমার অন্য একটি উৎসবময় দিক হলো ফানুস উত্তোলন।
তখন এক অনুপম দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রদীপ পূজার পাশাপাশি সকালের মতো প্রার্থনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়। ছেলেমেয়েদের বাজি ফুটানো, ফানুস ওড়ানো ও বুদ্ধ কীর্তনে আনন্দে উল্লাস ধ্বনিতে দিনের কার্যসূচির সমাপ্তি ঘটে।
এখানে উল্লেখ্য, এই দিন থেকেই ভগবান বুদ্ধের আদেশে আদিষ্ট ভিক্ষুসংঘ বুদ্ধবাণী প্রচার করে আসছে সাধারণ জনগণের হিতের ও সুখের জন্য।

ধর্ম বিশ্বাস মানুষের চিরন্তন বিশ্বাসগুলোর মধ্যে একটি। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর সকলকে জানাই প্রবারণা পূর্ণিমার শুভেচ্ছা। জগতের সব প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক।

২০৩২ পঠিত ... ২১:০৮, অক্টোবর ০১, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top