পেঁয়াজের প্রত্যেকটা দামেরই একটা সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে : স্যার আইজ্যাক নিউটন

১২০৫ পঠিত ... ১৬:৫২, নভেম্বর ১৬, ২০১৯

পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হতে হতে একেবারে মহাকাশকে চুম্বন করে ফেলেছে। একবার পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলে, আবার কখনো কমে, কখনো আবার বেড়ে যায় হু হু করে। পেঁয়াজের দামের এমন অদ্ভুতুড়ে কিংবা ভুতূড়ে গতি কোনোধরনের গতিসূত্রের মাধ্যমেই বুঝতে না পেরে আমরা হাজির হয়েছিলাম গতিসূত্র প্রদানকারী বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের কাছে। পেঁয়াজের দামের গতি সম্পর্কে নতুন কোনো সূত্র জানতেই আমাদের এই অভিযান।

ফেসবুকে বিজ্ঞানী নিউটন সাহেবের একটি ফেসবুক পেজে (ফেক হতে পারে) ইনবক্স করে আমরা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করি। তিনি আমাদের শেওড়াপাড়ার একটি ভাতের হোটেলে দেখা করতে বললে আমরা একটু ভড়কে যাই। তবে নির্ধারিত সময়ে 'আল-পেঁয়াজদিয়া হোটেল' এ উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, নিউটন সেখানে কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছেন।

আমরা এগিয়ে গিয়ে 'হ্যালো নিউটন ভাই' বলে হাত বাড়িয়ে দিলে তিনি আমাদের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। তারপর মুখে ভাত নিয়েই উত্তেজিত হয়ে বলেন, 'নিউটন কী রে? বলো স্যার আইজ্যাক নিউটন।'

আমরা থতমত খেয়ে 'সরি সরি, স্যার আইজ্যাক নিউটন, কেমন আছেন?' বলে আবার হাত বাড়ালে তিনি আমাদের সাথে করমর্দন করে বলেন, 'যারা পেঁয়াজ খায়, তাদের স্যার ডাকবা।'

আমরা কাচের বোতলের দুইটা কোকের অর্ডার দিয়ে বসে পড়ি। নিউটন, থুক্কু, স্যার আইজ্যাক নিউটনকে পেঁয়াজের দামের গতিবিধি ব্যাপারে প্রশ্ন করার আগেই তাকে পেঁয়াজের দাম নিয়ে হোটেলের ওয়েটারের সাথে গ্যাঞ্জাম করতে দেখা গেলো। গ্যাঞ্জাম শেষে আরও মেজাজ খারাপ করে তিনি বললেন, 'দুইটা পেঁয়াজ কেটে দিলো, সেটার দাম নাকি গরুর মাংসের চেয়েও বেশি? আরে এইসব পেঁয়াজ তো আমার বাসার পেছনে পেঁয়াজক্ষেতেই পাওয়া যাইত। যত্তসব অপদার্থের দল!'

স্যার, এই পেঁয়াজের দামের গতিবিধি নিয়েই আলাপ করতে চাচ্ছি', এটা বলার পর তিনি একটু শান্ত হন।

'বাংলাদেশে এসে একটা জিনিস বুঝলাম, পেঁয়াজের প্রত্যেকটা দামেরই একটা সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।' গম্ভীর মুখে বললেন তিনি। এক ফাঁকে মোবাইলও টিপতে দেখা গেলো, হয়তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন।

এই পর্যায়ে তিনি জানালেন পেঁয়াজের দামের গতি নিয়ে আর একটি সূত্র, 'বাইরে থেকে বাজারের উপর কোন বল প্রয়োগ না করলে পেঁয়াজের দাম চিরকাল সুষম গতিতে সরল পথে বাড়তে থাকে।'

'শেষমেশ তবে পেঁয়াজ নিয়েই গবেষণা শুরু করলেন?' এই প্রশ্ন করার পর নিউটন, থুক্কু, স্যার আইজ্যাক নিউটন মুচকি হেসে বলেন, 'একটা জিনিস ভাইবা দেখলাম, বিজ্ঞানীদের মধ্যে আমার জনপ্রিয়তাই কম। আইনস্টাইনরে দেখো, একখান ফালতু সূত্র দিয়ে কি জনপ্রিয়তাটাই না পাইছে! এডিসন আর নীলসো বোর ব্যাটাও আমার চাইতে হিট। অথচ আমারে নিয়ে কোনো কথা দেখি না। এক মাথায় আপেল পড়া ছাড়া আমারে নিয়ে যেন কোনো গল্পই নাই। আপেল না পড়ে মাথায় একটা পেঁয়াজ পড়লেও মানুষ আমারে নিয়ে বেশি কথা বলতো!'

আমরা এই কথার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করতে গেলে তিনি আবারো উত্তেজিত হয়ে যান, 'তোমরা তোমাদের বিখ্যাতদের eআরকিতে কয়টা দিছো আমার ঘটনা? সেইদিনকার পোলাপানদেরটাও দেও, কিন্তু আমার কোনো ঘটনা আজ পর্যন্ত দেখলাম না!'

গোটা একটা সাক্ষাৎকার ছাপা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তিনি একটু শান্ত হয়ে আরও বলেন, 'এইজন্যই পেঁয়াজ নিয়ে সূত্র দেবো ভাবতেছি। পেঁয়াজ এমন এক পদার্থ, যা নিয়ে এখনো অনেক সূত্র দেয়া বাকি আছে বলে মনে হচ্ছে।'

তবে গতিসূত্রের পাশাপাশি পেঁয়াজ নিয়ে ব্যক্তিগত অনুভূতির কথাও জানালেন স্যার আইজ্যাক নিউটন, 'ছোটবেলা থেকেই আমি পেঁয়াজ খাই, আমি খাই, আমার ফ্যামিলির সবাই খাই। নামের আগে স্যার তো এমনি এমনি বসে নাই। উচ্চবংশীয় আর সম্ভ্রান্ত বলেই বসছে। ব্রিটিশ রাণীর নাইট-নুইটরে আমি কেয়ার করি না।'

পেঁয়াজ নিয়ে সামনে আরও কিছু গবেষণা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'এজন্য পেঁয়াজের ক্ষেতে বসে থাকতে হবে। মাথায় একটা পেঁয়াজ পড়লেই আরো সূত্র আসবে বলে আমার বিশ্বাস।'

১২০৫ পঠিত ... ১৬:৫২, নভেম্বর ১৬, ২০১৯

আরও

 
 

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top