২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিপার) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হয় প্রায় ৮১০ কোটি টাকা। অরক্ষিত নিরাপত্তাব্যবস্থা ও কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতায় পাসওয়ার্ড জেনে নিয়ে চুরি করা হয় এই বিশাল অংকের টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই চুরির খবর জানতে পারে একদিন পর ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে। সেদিন জানতে পারলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে সেটি তখনই সরকারকে জানানো হয়নি। ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় এই অর্থ জালিয়াতির সাথে সে দেশের একটি ব্যাংকের জড়িত থাকার খবর প্রকাশের পর অবশেষে এই চুরির খবরটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে জানানো হয় সরকারকে। খবর: প্রথম আলো।
এই সুবিশাল অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনে এর মাঝেই জড়িত একজনের তিন যুগের জেল ও জরিমানা এবং দায়িত্বে অবহেলায় একটি ব্যাংকের মোটা অংকের অর্থদণ্ড হয়ে গেলেও, যে দেশের টাকা চুরি গিয়েছে সেই বাংলাদেশে হয় নি কিছুই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতেই পারে, এইটা টাকা নিয়ে তেমন একটা চিন্তা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে দেশের এতগুলো টাকা লাপাত্তা হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত হয়েছিল eআরকি। eআরকির অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ দল দীর্ঘ গবেষণায় বের করেছেন এমন ১০টি অব্যর্থ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ৮১০ কোটি টাকা রিকভার করতে পারবে।
১# ওশান্স ইলেভেন, ইটালিয়ান জব বা মানি হেইস্ট টাইপ সিনেমা-সিরিজ দেখে থাকলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন, এইসব চুরির কাহিনী সিনেমা আকারে খুব চলে! আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনা তো যেকোনো সিনেমাকে হার মানায়। তাই এই ফিল্মি স্টাইলে রিজার্ভ চুরির গল্প নিয়ে তারা বানিয়ে ফেলতে পারে দারুণ একটি সাইফাই থ্রিলার সিনেমা। সত্য কাহিনী নির্ভর হওয়ায় এই সিনেমার ‘বক্স অফিস রক্স’ করার সম্ভাবনা প্রচুর।
২# সব ধরনের ব্যাংকিংয়ে ভ্যাটের পাশাপাশি ১০-২০ টাকা টোল বসানো যেতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশে যেকোনো টোল পাবলিককে অনন্তকাল পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয়, ২০-৩০ বছরের মধ্যে রিজার্ভের টাকা উঠে যাওয়ার পর আরও কোটি কোটি টাকা জমা পড়তেই থাকবে, পড়তেই থাকবে...
৩# একদা আমাদের এক মন্ত্রীমশাই বলেছিলেন, ৪ হাজার কোটি টাকা কিছুই না। তাকে দিয়ে যদি একবার বলানো যায়, ৮০০ কোটি টাকা কিছুই না, তাইলেই তো ল্যাঠা চুকে গেলো! ৪০০০ কোটি টাকাকে থোড়াই কেয়ার করা উনার কাছে ৮০০ কোটি এক তুড়ির ব্যাপার হওয়ার কথা।
৪# বিটিভিসূত্রে আমরা জানি, দেশে বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলন হচ্ছে। সুতরাং বিশিষ্ট টিভিকৃষিব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাতাবি লেবু চাষ করতে পারে। বিটিভিতে দেখানো বাম্পার ফলনের খবর নির্ভুল হলে, ডাবল টাকা উঠে আসার কথা!
৫# ডিজিটাল চুরির উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দলকে বলিউড বা তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পাঠানো যেতে পারে। সেখান থেকে উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দলটি অন্য কোনো দেশের রিজার্ভ চুরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।
৬# ট্রাফিক সপ্তাহ, রেল সপ্তাহের মতো করে চালু করা যেতে পারে ঘুষ সপ্তাহ। বেশিরভাগ সরকারি কর্মকর্তারা তো এমনিতেও ঘুষ খানই (সহনীয় মাত্রায় হলেও!)। ঘুষ সপ্তাহেও তারা ঘুষ খাবেন, তবে এই ঘুষের পুরো টাকাটা সরকারি খাতে জমা হবে। প্রয়োজনে কয়েক দফায় এই কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে।
৭# তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটের মতো এতটা অরক্ষিত সুইফট আর কোন ব্যাংকের ছিলো না। আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সহজ, সরল ও মানুষের প্রতি বিশ্বাসী। পৃথিবীতে কোন খারাপ মানুষ থাকতে পারে এমন ধারণাই তাদের ছিলো না। সেজন্যই সুইফটের নিরাপত্তা নিয়ে তারা অতটা উদ্বিগ্ন ছিলেন না। সন্দেহ, অপরাধ আর অবিশ্বাসের এই পৃথিবীতে এমন সহজ সরল ও বিশ্বাসী মানুষ আছে তা যদি কোন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়ে দেয়া যায় তাহলে গিনেজ বুকে এদের নাম উঠে যাবে। ও এই বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের প্রদর্শনী করলে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ তাদেরকে দেখতে আসবে। সেই প্রদর্শনীর টাকা দিয়েও ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে।
৮# বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে যেসব ‘উন্নতমানের’ পর্দা, টিন, বালিশ, বই ইত্যাদি জিনিস কেনা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব উদ্যোগে সেগুলো তৈরি করে বিক্রি করতে পারে।
৯# রিজার্ভ চুরির ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংক ২৪ দিন গোপন রেখেছে। সরকার ও জনগণ কিছুই টের পায়নি। ঠিক একইভাবে রিজার্ভ ফিরে এসেছে বলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য রিজার্ভ জিনিসটারেই গোপন করে দেয়া যেতে পারে। তাহলে কেউ কিছু টের পাবে না, ক্ষতি পোষানোর চিন্তাও করা লাগবে না।
১০# ক্ষতি পোষানোর জন্য গণিতের ‘ধরি’ নিয়মে চলে যাওয়া যেতে পারে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলতে পারেন, ধরি রিজার্ভ থেকে X পরিমাণ টাকা চুরি হয়েছে। এরপর জোড়াতালি দিয়ে কোনভাবে X এর মান শূন্য প্রমাণ করে দিতে পারেন। তাইলে কাগজে কলমে প্রমাণ হয়ে যাবে, কোন টাকাই আসলে চুরি হয়নি।