প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি 'ডাকসু নির্বাচন' হতো

৭৭৪৭ পঠিত ... ২০:১২, মার্চ ১২, ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেলো এত বছরের চির আকাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন। সেটা নির্বাচন হলো নাকি সিনেমা, সে বিষয়ে আমরা কোনো মতামত না দিলেই ভালো। তবে একটু ভাবুন তো, ডাকসু নির্বাচনের মতো যদি বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ইলেকশন হতো? কী কী ঘটতে পারতো তা ভাবতে বসেছিলেন কুইজ-প্রেজেন্টেশনের চাপে পিষ্ঠ eআরকির প্রাইভেট ভার্সিটি গবেষক দল!

 

১# নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করলেও মূলত নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক সকল আড্ডা হত ক্যাম্পাসের পাশের টং দোকানে। নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী সিনিয়র ভাইয়ারা ভোটারদের কাপের পর কাপ চা খাওয়াতেন। এক্ষেত্রে, চা-পানি খাওয়ার পরবর্তী সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যেত প্রার্থী ভাইয়াদের মানিব্যাগে ভাংতি টাকার অভাবে দোকানের বিল পরিশোধ করত ভোটার জুনিয়ররাই।

 

২# জুনিয়র নারী ভোটারদের অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন করে দিতে বাধ্য থাকত মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা। ভোটাররা তাকেই ভোট দিত যে সবচেয়ে কম সময়ে সুন্দর অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন তৈরি করে দিতে পারে।

৩# নির্বাচনী প্রচারণার মাঝে যেকোনো সময় যেকোনো কোর্স টিচার কুইজের নোটিশ দিয়ে দিতে পারেন। এমতাবস্থায় ভোটাররা নির্বাচনী আমেজে ক্লাসে উপস্থিত না হলেও প্রার্থীরা উপস্থিত হতে এক সেকেন্ডও দেরি করত না। কারণ সিনিয়ররা জানে, একটা কুইজ মিস হয়ে গেলে একটা কোর্সে রিটেক এসে গেলে রিটেক ফি'র মত আজাব তাদের কপালে জুটে যাবে।

 

৪# নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, ভোটারদের ভেতর ভোটের আমেজ তত কমে যাবে। আকাশের মেঘ থমকে যেতে পারে, শহরে প্রচন্ড জ্যাম থাকতে পারে কিন্তু ভাই! প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডের রুটিনের নোটিশ মেইলে আসতে কখনোই দেরি হয় না...

৫# এদিকে প্রচারণার কাজে ব্যস্ত ‘সহমত ভাই’ গ্রুপের সকল ছোট ভাইদের কাছে হুমকি আসতো, 'প্রচারণা থেকে সরে না দাঁড়ালে তোর বাপের কাছে ফোন যাবে'। এমন মারাত্মক হুমকি পেয়ে রাজপথের লড়াকু সৈনিক মিছিল মিটিং রাখিয়া বই খাতা লইয়া ক্লাসের দিকে হনহন করিয়া ছুটিত। নির্বাচনের চেয়ে বাপের মাইর বড়...

৬# দিন যাচ্ছে, ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন। মিড টার্ম পরীক্ষার রেজাল্টের পর অর্ধেক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করে কোর্স টিচারের ডেস্কের সামনে আমরণ অনশন করতো এপ্লিকেশন হাতে নিয়ে। যদিও বা নির্বাচনী ব্যস্ততায় ফেল করেছেন, এপ্লিকেশনে লেখা থাকত, ‘অসুস্থতাজনিত কারণে পরীক্ষা খারাপ হওয়াতে ইম্প্রুভমেন্ট দিতে চাই’।

৭# ক্যাম্পাসে ফাইনালের রুটিন ঝুলছে, নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। প্রচারবিমুখতায় রাগান্বিত জুনিয়র নির্বাচন বর্জন করে ট্যুর প্ল্যান করতে থাকে। তার আগে প্রার্থীদের খুঁজে পাওয়া যায় 'হাই সিজিধারী' বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডিতে। প্রতিপক্ষের মিছিলে দেখে যেই বন্ধুকে দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলো প্রার্থী, সেই বন্ধুর স্লাইড দেখে বিস্মিত হয়ে বলে, ‘মামা, এই স্লাইডটা দে, এইটা না পড়লে আমি এবারও ফেল করমু। এই কোর্সে অলরেডি দুইবার ফেল করছি, আরেকবার করলে পড়ালেখা এইখানেই ছাইড়া দেয়া লাগব...'

৮# সেমিস্টার ফাইনালের আগে প্রত্যেক ভোটার তাদের সেমিস্টার ফি দিতে গিয়ে জানতে পারত, পাঁচ হাজার টাকা বেশি দিতে হবে। কারণ হিসেবে দেখতো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই নোটিশ দিয়ে রেখেছেন প্রত্যেক ভোটারকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে!

 

৯# এদিকে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় 'রাজনীতির মাঠে কিভাবে লড়বে' সেমিনারের আয়োজন করতো, যেখানে মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে আসতে পারত সোলায়মান সুখনসহ আরও অনেকে। এমন সেলিব্রেটিদের স্পিচ শুনতে প্রত্যেক প্রার্থীকে অবশ্যই অ্যাকাউন্টসে পাঁচ/সাত হাজার টাকা জমা দিয়ে এন্ট্রি টিকেট কাটতে হত।

১০# টাকা চাহিয়া পিতার নিকট ফোন করার পর প্রার্থী বা ভোটারদের অভিভাবকেরা ছুঁটে আসতেন আদরের সন্তানের কাছে। পড়ালেখাই জীবনের মূখ্য বিষয়, এমন বিষয়ে সন্তানদের সতর্ক করে অভিভাবকরা সিজিপিএ হাই করার দিকে ফোকাস দিতে বলতেন।

১১# অপরদিকে ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন ভোটারদের ‘হাউ টু বি আ সাক্সেসফুল ভোটার’ নামক ডে-লং ওয়ার্কশপের আয়োজন করতো বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি। হাতে-কলমে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ শেষে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ভোটারকে একটি করে সার্টিফিকেট ও একটি ক্রেস্ট প্রদান করা হত। বলা বাহুল্য, এমন ওয়ার্কশপটিতে অংশগ্রহণ করতে অবশ্যই অ্যাকান্টস ভবনে গিয়ে নির্দিষ্ট অংকের টাকা জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।

 

১২# প্রতিটি ব্যাচ ও সেকশনের সি.আররা ফেসবুকে গ্রুপে পোষ্ট দিতে ব্যস্ত থাকতেন। তাদের বেশিরভাগ পোস্ট হতো এমন- ‘নির্বাচন হউক না হউক, ক্লাস হবেই’। এক্ষেত্রে কোর্স টিচারদের বক্তব্য থাকত, ‘জাতীয় নির্বাচনের দিন যেই ক্লাস মিস দিয়েছিলা, ওটারই মেকাপ ক্লাস হয়নি। আর কত মেকাপ ক্লাস নিবা?’

৭৭৪৭ পঠিত ... ২০:১২, মার্চ ১২, ২০১৯

Top