আমার মতে, বুয়েটের হলগুলোর মতো অত্যাধুনিক জিমনেশিয়াম পৃথিবীর আর কোথাও নেই। হলের আনাচে-কানাচে আপনি পাবেন ব্যায়ামের সরঞ্জাম। কেনো এটিই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জিম, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১. প্রথমেই দেখা যাক, হাত এবং কাঁধের ব্যায়াম। এই ব্যায়াম করার জন্য আপনাকে যেতে হবে শৌচাগারে, তথা টাট্টিখানায়। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শৌচাগার যেখানে সাহিত্যের সূতিকাগার, সেখানে বুয়েটের শৌচাগার আপনাকে দেবে ব্যায়াম করার সুবিধা। এখানকার দরজাগুলো স্পেশাল অর্ডার দিয়ে অত্যন্ত টাইট করে বানিয়ে আনা। আপনি কখনোই এই দরজা লাগাতে পারবেন না। কিন্তু ইজ্জত বাঁচাতে আপনাকে লাগাতেই হবে। প্রাণপণে এক হাত দিয়ে টেনে আরেক হাত দিয়ে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে, মিনিট দুয়েক ধস্তাধস্তির পরে তবেই লাগবে এই আশ্চর্য দরজা। আর খোলার সময়েও বিশেষ কায়দায় হাত, কনুই, কাঁধ আর হাঁটুর সাহায্যে আপনি এই দরজা খুলতে পারবেন।
এই অত্যাশ্চর্য দরজার লাগানো আর খোলার ফলে আপনার বাইসেপ হয়ে যাবে ট্রাইসেপ আর ট্রাইসেপ হবে কোয়াড্রিসেপ। আপনার কাঁধ হবে আরও চওড়া, হাত এবং কাঁধের মাসল ফুলে আপনি হবেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পালোয়ান। শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে যাবে। তবে সাবধান, লুজ মোশন হলে যেন অন্যান্য তরল বেরিয়ে না আসে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
২. শরীরের ওপরের অংশের ব্যায়াম গেলো। এবারে পায়ের ব্যায়াম। আপনি সুঠাম দেহের অধিকারী হতে চাইলে আপনাকে থাকতে হবে পাঁচতলায়। এতে গড়ে দৈনিক আপনাকে ওঠানামা করতে হবে ৬-৮ বার। লিফট না থাকায় নিশ্চয় একশ মিটার দৌড়ে আপনি হারিয়ে দিতে পারবেন উসাইন বোল্টকে। আপনার পায়ের পেশি হবে সুগঠিত এবং মজবুত। জ্বালাতন ইব্রাহিমোভিচ আপনার গলায় আসল ফুটবলারের মেডেল জড়িয়ে দেবেন।
৩. এরপর এমন কিছু ব্যায়াম নিয়ে আলাপ করা যাক, যেগুলো সাধারণত মানুষজন ভুলেই যায়, কিন্তু বুয়েট হল ভোলেনি। সেগুলো হলো, দাঁত, চোয়াল আর আঙুল। মনে রাখতে হবে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে শরীরের সব অংশেরই ব্যায়াম করতে হবে। আপনার বান্ধবী যতই বলুক, আসলে শরীরের কোনো প্রত্যঙ্গই ছোট নয়।
দাঁত ও চোয়ালের ব্যায়াম করতে হলে আপনাকে খেতে হবে হলের ক্যান্টিনের পরোটা। ওয়ার্কআউটের বিষয়টি মাথায় রেখে হল কর্তৃপক্ষ ময়দার বদলে গাড়ির টায়ার দিয়ে পরোটা বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি ছেঁড়ার চেষ্টা করলে আপনার আঙুল কলার চেয়েও মোটা হয়ে যাবে। এরপরেও যখন আপনি ছিঁড়তে পারবেন না, তখন আপনি অনেক কষ্টে দাঁত দিয়ে ছিঁড়তে পারবেন। এতে কয়েকটি দাঁত ভেঙে গেলেও ক্ষতি নেই। কারণ ব্যায়ামবিশারদ মহেন্দ্র সিং বলেছেন, "What doesn't kill you, makes you stronger." এরপর সেটি চাবানোর মাধ্যমে আপনার চোয়াল হবে শক্তিশালী।
পাশাপাশি সেটি গেলার সময় গলার এবং হজম করার সময় পেটের ব্যায়ামও বোনাস হিসেবে পেয়ে যাবেন।
৪. শরীরচর্চা তো হলো। বুয়েট কর্তৃপক্ষ এর পাশাপাশি স্পিরিচুয়ালিটির ব্যবস্থাও রেখেছে। এমনিতেই শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝেই স্পিরিচুয়ালি হাই থাকে, আরও এমন ব্যবস্থা এখানে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বলছিলাম, ইদানীং জনপ্রিয় হওয়া ব্রিদিং এক্সারসাইজের কথা।
এর জন্যেও আপনাকে ফিরে যেতে হবে সেই শৌচাগারে। এখানে আপনাকে শ্বাস আটকে থাকতে হবে। শ্বাস নিলেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। কারণ এখানকার উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা নিম্নশিক্ষার অভাবে মাঝে মাঝেই ফ্ল্যাশ করতে (সরি, ওটা এমনিতেও কাজ করে না) পানি দিতে ভুলে যায়। এতে অনেকের মলমূত্র মিলিয়ে যে উৎকট এবং বিকট গন্ধের উদ্রেক হয়, তা অতুলনীয়। আপনি এখানে যতক্ষণই থাকুন না কেন, শ্বাস আপনাকে আটকে থাকতেই হবে। এতে আপনার ফুসফুস শক্তিশালী হবে, গলা ঝরঝরে হবে। নিন্দুকেরা বুয়েটের শৌচাগারকে হলুদ একটি পদার্থের খনি বললেও ব্যায়ামবিদদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে অন্য একটি হলুদ পদার্থের, তথা সোনার খনি। এরপরেও নিন্দুকেরা এটিকে কালো সোনার খনি হিসেবে আখ্যা দেবার চেষ্টা করলে এর তীব্র নিন্দা জানাই।
৫. এছাড়া সর্বশ্রেষ্ট ব্যায়াম সাঁতার কাটার ব্যবস্থাও মাঝে মাঝে বুয়েটের হলে প্রদান করা হয়। তবে এই সুবিধা শুধু নিচতলার বাসিন্দাদের জন্য, যেহেতু তাঁরা সিঁড়িতে ওঠানামা করে পায়ের ব্যায়াম করতে পারেন না। সামান্য বৃষ্টিতেই নিচতলার ঘরগুলোতে ব্যক্তিগত সুইমিং পুল সৃষ্টি হয়, এ যেন এক অভিনব নির্মাণশৈলী।
এত সুবিধার পরেও একটা অসুবিধার কথা বলা যেতে পারে। জিমের অন্যতম আকর্ষণ কমবাইন্ড জিম। এখানে বিপরীত লিঙ্গের সামনে জিম করলে একটা আলাদা মোটিভেশন পাওয়া যায়। তাই বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিষদের কাছে আকুল আবেদন, বুয়েটের হলগুলোকে কম্বাইন্ড হলের মর্যাদা দিয়ে নারী-পুরুষ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে শরীরচর্চার অধিকার দিয়ে বাধিত করবেন। এজন্য প্রয়োজনে ছাত্রীকল্যাণ পরিষদ খুলে সকলের কল্যাণে এগিয়ে আসবেন।
এতোকিছুর পরেও বুয়েটের হলগুলোকে সর্বশ্রেষ্ঠ জিম না বলে উপায় আছে?
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন