বন্ধু তুমি শত্রু তুমি: চোখের বদলে চোখ!

৩০৭ পঠিত ... ১৭:৪৪, মে ১৩, ২০২৩

bondhu-tumi-shotru-tumi

এথেন্সের দার্শনিকেরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, যার সবাই বন্ধু; সে বন্ধুদেরই কারো হাতে মারা পড়ে। কিংবা এমন কথা প্রচলিত আছে, যে সবার বন্ধু; সে কারো বন্ধু নয়।

আজ অনুজপ্রতিম অধ্যাপক ফাহমিদুল হক তার হক কথা অনুষ্ঠানে ডেকেছেন, কেমন আছে শত্রুরাষ্ট্র পাকিস্তান! এ বিষয়ে কিছু হক কথা বলার জন্য।

আমি যেহেতু বন্ধুত্বের মানুষ; ফলে শত্রু শব্দটি আমার কাছে অচেনা।

১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর বৃটিশ সহমত ভাই পূর্ব বঙ্গে জমিদারি করে; সম্পদ লুণ্ঠন করে কলকাতায় সেকেন্ড হোম বানায়। কৃষক প্রজা নিগ্রহের কারণে, নিম্নবর্গের জ্ঞান করে নিরন্তর উপহাস ও অপমান করায় সেই জমিদার হিন্দুদের ওপর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে ক্ষত রয়ে গেছে। সে কারণে আজো বাংলাদেশে হিন্দু বিদ্বেষ; সেখান থেকে ভারত বিদ্বেষ বিদ্যমান।

কিন্তু আমি যখন বাংলাদেশের প্রাচীন জমিদারদের তৈরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেখি; তখন খানিকটা নির্মোহভাবে দেখি যেন ঐ জমিদারদের। বৃটিশদের ক্ষেত্রেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রেলপথ দেখে তাদের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়েও ভাবি। বৃটিশ কলোনির নেতির অভাব নেই; সেসব কথা অসংখ্যবার বলেছি-লিখেছি; কিন্তু ইতিটুকুও মনে রাখি।

একটা ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কে যেমন সবকিছুই তিক্ততার নয়; সেখানে কিছু বন্ধুত্বের স্মৃতিও রয়ে যায়।

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১; পাকিস্তান উপনিবেশের পাঞ্জাবি জমিদার বাংলাদেশের কৃষকের হক মেরে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রাসাদ তুলেছে। গম খেতের শেয়াল পাকিস্তানের সেনা শাসকের সহমত ভাই হয়ে ফরচুন বানিয়েছে; অভিজাত সেজেছে। অশিক্ষিত এই পাঞ্জাবি পাটোয়ারিরা বাঙ্গালিকে ‘বেঁটে, কালো, গায়ে মাছের গন্ধ’ বলে উপহাস করেছে। আর একাত্তর সালে বাংলাদেশ গণহত্যা করে অনুতাপহীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একাত্তরের পর থেকে আজ অব্দি পাকিস্তানের সাধারণ মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে চলেছে। প্রমাণ হয়ে গেছে যুদ্ধাপরাধীর বিচার না করলে সে মানুষ খেকো রাক্ষসে পরিণত হয়।

আমি তবু পাকিস্তান আমলে তৈরি বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাডেট কলেজগুলো দেখে খানিকটা ইতি মনে রেখেছি। সে আমলের ঢাকা-করাচী-লাহোর যৌথ চলচ্চিত্র-সংগীতে বন্ধুত্বের চিহ্নও খুঁজে পেয়েছি।

আমি ভারত-পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামো আর সাধারণ মানুষকে আলাদা করে দেখি। কারণ শোষণ-লুন্ঠন-হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক থাকে না। আর ঘৃণার দোকান খুলে অনলাইন হিট বাড়াতে হয় না। যাদের পড়ার তারা সেই ভোরের কাগজে লেখা বিষণ্ণতার শহর থেকে আজকের ই আরকিতে লেখা রসক্ষেত্রের যুদ্ধ পড়ে। চিহ্ন দেয়, পাঠ প্রতিক্রিয়া দেয়।

পাকিস্তানের করাচীতে সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা আর বসবাস করতে দেখে; সহমত ভাইয়েরা আমাকে পাকিস্তান পন্থীর সনদ দিয়ে গেছে। ভারতের কলকাতায় সাহিত্য সম্মেলন হোস্ট করতে দেখে কিংবা সেখান থেকে বই প্রকাশিত হতে দেখে; রহমত ভাইয়েরা আমাকে ভারত পন্থীর সনদ দিয়ে যায়। অনলাইন এসব সনদ পেয়ে মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামাটিকসের শিক্ষাসনদগুলো অযথাই ফাইলে রেখেছি।

আমি আসলে ঈশ্বরদীতে-রাজশাহীতে এমন পরিপার্শ্বে বেড়ে উঠেছি; যেখানে আমার বাবা-মা'র সঙ্গে সম্পর্কে চাপানোতর আছে এমন মানুষেরা আমাকে স্নেহের উষ্ণতা দিয়েছেন। ফলে আমার কাছে শত্রুতার সংজ্ঞা স্পষ্ট হয়নি কখনও।

আমার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-কর্মক্ষেত্রের বন্ধুরা অভিযোগ করতো, তোর সবার সঙ্গে এতো হেসে হেসে গলে যেতে হয় কেন! জানিসনা ওরা আমাদের শত্রু। এই আমরা বনাম ওরার বিভেদ আমি আজো বুঝি না।

আমার ছেলে একবার বিস্ময়ে হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো, যে লোকের সঙ্গে তোমার একটু আগে ঝগড়া হলো; তাকে কেন জার্মানি থেকে আনা গিফটা দিয়ে দিলে বাবা!

বন্ধুত্ব বা শত্রুতার মানসিক চাপ আসলে নিতে পারিনা। কেউ গালি দিয়ে গেলে তাকে নিয়ে রম্য লেখার পর; লেখার চরিত্র হিসেবে তাকে ভালোবেসে ফেলি। আমার জীবনের খলচরিত্ররা বেশিদিন সটান দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। ভেঙ্গে পড়েছে ক্রিস্টালের পুতুলের মতো। অথচ খল চরিত্র না পেলে গল্প লেখা কঠিন। গল্পে সব রকম চরিত্র লাগে।

কেউ যখন ঝগড়া করতে চায় না; তখন ইচ্ছা করে ঝগড়া বাধাই; জানি এটা নির্দোষ ঝগড়া। এ আসলে রম্যের চরিত্র খুঁজতে স্টিং অপারেশন।

তাই আমার শাশ্বত প্রশ্ন; বন্ধু কী আবার শত্রুই বা কী! ঘৃণা দিয়ে কী আনন্দের মুহূর্তগুলো- সুখের স্মৃতিগুলো কখনো তৈরি হয়! বরং ভালোবাসাই শ্রেয়; যা জীবনের আনন্দময় ভ্রমণের স্মৃতিগল্প তৈরি করে।

৩০৭ পঠিত ... ১৭:৪৪, মে ১৩, ২০২৩

আরও

 
 

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top