উত্তর কোরিয়ার নির্বাচন যে কারণে সুষ্ঠু হয়নি

২৪৫৬ পঠিত ... ২১:২১, মার্চ ১২, ২০১৯

 

উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনে শতভাগ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন শীর্ষ নেতা কিম জং উন। অত্যন্ত সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শতভাগ ভোটার উপস্থিতি গণতন্ত্রের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে রইলো। উত্তর কোরিয়ার ভোটার উপস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে বিশ্বের অন্যান্য কথিত গণতান্ত্রিক দেশ জার্মানি, ক্যানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতের ভোটার উপস্থিতি অত্যন্ত নগণ্য। শতভাগ ভোটারের উপস্থিতি যারা নিশ্চিত করতে পারে না; তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা একেবারেই বেমানান।

উত্তর কোরিয়ার সংসদ ‘সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলি’র (এসপিএ) এই নির্বাচনে প্রার্থী মোট ৭০০ জন হলেও প্রতিটি আসনেই প্রার্থী মাত্র ১জন। কোনও আসনেই বিকল্প কোন প্রার্থী নেই। দেশটির প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সেখানকার ভোটারদের কোন সিল কিংবা ব্যালট পেপার পূরণ করা লাগেনা। ভোটের দিন ভোটারদের শুধু প্রতিটি আসনের জন্য নির্ধারিত প্রার্থীর নাম লেখা ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ফেলে দিয়ে হয়।’

সুচারু পদ্ধতিতে উত্তর কোরিয়ায় ভোট গৃহীত হওয়ায়; সেখানে রাত জেগে ভোট দেবার রোগ ভোটসমনিয়ার দেখা মেলে না। বস্তার মধ্যে ব্যালট পেপারসহ রিটার্নিং অফিসার ধরা পড়ার ঘটনা চোখে পড়ে না। উত্তর কোরিয়ার ফেসবুকে জালভোট দেবার ভিডিও ফুটেজ দেখা যায়নি। উগান্ডা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডির মতো নব্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর উচিত হবে বার বার ভোট চুরি করে ধরা পড়ার চেয়ে উত্তর কোরিয়ার মতো সরাসরি "এক প্রার্থী এক ভোট" পদ্ধতিতে চলে যাওয়া।

উত্তর কোরিয়ার নয়নের মনি কিম জং উন, তার বাবা কিম জং ইল আর দাদা কিম ইল সাং "এক বিশ্বাস, সহমত" ভাতৃত্ববোধের দর্শন যেভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন; তা অভাবনীয়।

কিম ইল সাং-এর নিজের বসবাসের জন্য কোন ঘর ছিলো না; পেশা ছিলো গোরখোদকের। কিন্তু পরে তিনি উত্তর কোরিয়ার মুক্তির প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তখন আর বসবাসের প্রাসাদের অভাব হয়নি। পারিবারিকভাবে উত্তর কোরিয়ার মালিক হয়ে গেছেন। তিনপুরুষের প্রায় সাতটি দশকের শাসন প্রমাণ করেছে; পরিবারতন্ত্রই আসল; গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র-ফন্ত্র এসব মিছে আলেয়া।

যোগ্য দাদার যোগ্য নাতি কিম জং উন সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু গুটিকতক কিম-সহমত- এলিট পরিবারের সদস্য ছাড়া উত্তর কোরিয়ার অন্য কোন নাগরিকের এরকম পড়তে যাবার অনুমতি নেই। এশিয়ার ব্যর্থ "না পরিবারতন্ত্র না গণতন্ত্রে"র দেশগুলোতে ভুল হয়েছে নাগরিকদের পশ্চিমে পড়ার অনুমতি রেখে। যত উচ্চ শিক্ষা, তত উচ্চ ভিন্নমত। ফলে নানাদেশে পড়ে নাগরিক সমাজ নামের সুশীল যন্ত্রণা তৈরি হয় সেখানে।

উত্তর কোরিয়ায় আনন্দময় সহমত-সমাজের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। কিম জং উনের জন্মদিন উত্তর কোরিয়ার খ্রিস্টের জন্মদিন যেন। অযথা রাজনৈতিক আদর্শ ও ধর্মের দোলাচল না রেখে; উনের দাদু কিম জং সাং নতুন ধর্মের সূচনা করেছেন। উনের বাবা কিম জং ইল সামরিক ও পারমানবিক শক্তি বৃদ্ধি করে সেই ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিয়েছেন।

কিম জং উন উত্তর কোরিয়ার তরুণ প্রজন্মের সামনে এক আইকন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সবাই উনের হেয়ার স্টাইল অনুসরণ করে। এই হেয়ারস্টাইলের নাম এম্বিশানস। উন তার চুলের স্টাইলের মাঝ দিয়ে উচ্চাকাংক্ষা প্রজ্জ্বলিত করেছেন।

পিয়াং ইয়াং সমৃদ্ধ নগরী; সেখানে উনের সহমত দর্শনের সেরা অনুসারীদের বসবাস। গোটা নগরীতে শুধু কিম ইল সাং আর কিম জং ইলের ছবি; সেইসঙ্গে উনের ছবি। জীবনে সাফল্যের প্রতীক সেখানে এই পরিবার। প্রত্যেক নাগরিক তার বুকের উপর কিম- প্রেমের পিন ঝুলিয়ে রাখে। যে যত কিম- প্রেম দেখাতে পারবে তার জীবনে তত উন্নতি; এলিট জীবনের রক্ষাকবচ এই কিম পরিবারের বন্দনা।

অন্যান্য দেশে দেশপ্রেমের প্যাকেটের মধ্যে নেতা ও পরিবার প্রেমের যে ছলনা করা হয়; উত্তর কোরিয়া সেসব ছলনার মধ্যে নেই। এক নেতা, এক মত, এক দেশ; ব্যাস কথা শেষ।

পঁচিশ লাখ কিম-সহমত নাগরিক পিয়াং ইয়াং-এ বাস করে; এর বাইরে দেশটির ৩ কোটি জনগণ; তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিম-সহমত হয়ে পিয়াং ইয়াং-এ বসবাসের উপযুক্ত হবার পরীক্ষা দিতে থাকে। পিয়াং ইয়াং শহর যেন কিম-ধর্মের স্বর্গ। কিম পরিবারের সন্তুষ্টির মাত্রার ওপর নির্ভর করে স্বর্গে প্রবেশ কিংবা নরকে বসে স্বর্গের অপেক্ষা। এইরকম পারিবারিক ধর্ম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা উগান্ডা কিংবা শুন্ডি রাজ্যে যথেষ্ট করা হয়েছে; কিন্তু কিম পরিবারের মত সফলভাবে কেউ করতে পারেনি।

২৪৫৬ পঠিত ... ২১:২১, মার্চ ১২, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top