শহরের দেয়ালের নতুন চরিত্র ‘সুবোধ’, সে পালিয়ে যাবে কোথায়?

৪৬৯৬ পঠিত ... ১৭:৪৯, জুন ০৪, ২০১৭

মস্ত বড় সূর্যটাকে খাঁচার মধ্যে পুড়ে নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে এক যুবক। ‘ডেসপিকেবল মি’ মুভির ফেলোনিয়াস গ্রু’র ‘শ্রিংক রে’ হাতে থাকলে চাঁদ ছিনতাই করে পকেটে পুড়ে রাখা কোনো ব্যাপারই না। তবে খাঁচার মধ্যে সূর্য নিয়ে পালিয়ে যাবার এই দৃশ্য নতুন। কোনো মুভিতে নয়, ঢাকা শহরের দেয়ালে দেয়ালে এই যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। তার নাম সুবোধ।

সুবোধের গ্রাফিটির ব্যাপারে বলার আগে একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়। সব ধরণের দেয়াল লিখন নিষিদ্ধ। দেয়াল লিখন যেন পুরোপুরি বন্ধ থাকে, তা নিশ্চিত করতে পুলিশি টহল বাড়িয়ে দেয়া হলো। রাতের বেলা দেয়ালের সামনে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলেই গলা খাকারি দিয়ে পুলিশ জিজ্ঞেস করতো, ‘এখানে কী হচ্ছে?’ জিগা গাছের ডাল দিয়ে দেয়ালে আঘাত করতে করতে উত্তর আসতো, ‘চিকার উপদ্রব এতো বেড়েছে যে বাড়িতে থাকা যায় না। তাই চিকা মারি।’ভোর উঠতেই দেখা যায় প্রতিবাদী কথাবার্তা দেয়ালে লেখা। কে লিখেছে বা এঁকেছে তা কেউই বলতে পারে না। মূলত জিগা গাছের ডালের থেতলানো অংশ আর আলকাতরা দিয়ে দেয়াল লিখন গুলো করা হতো। দেয়াল লিখনের আরেক নাম তাই ‘চিকামারা’।

পুরাতন বিমানবন্দরের দেয়ালে পালানো 'সুবোধ'!

প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে দেয়াল লিখন বেশ আগে থেকেই জনপ্রিয়। রাজনৈতিক স্লোগান ছাড়াও এই সহস্রাব্দের শুরুর দিকে ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে ‘কষ্টে আছি-আইজুদ্দিন’ ও 'অপেক্ষায়...নাজির' দেয়াল লিখনও বেশ হইচই ফেলেছিল। এবার এই দেয়াল লিখন চরিত্রের তালিকায় নতুন সংযোজন ‘সুবোধ’!

আগারগাঁও থেকে শ্যামলীর শিশুমেলায় যাওয়ার পথে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছে জেলে আটক 'সুবোধ'!

সুবোধ সিরিজের গ্রাফিটিগুলো বেশ কৌতূহল তৈরি করেছে সবার মাঝে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও আলোচনা হচ্ছে সুবোধকে নিয়ে। কে এই সুবোধ? কেন তাকে পালাতে বলা হচ্ছে? এই সুবোধ কি কোনো যুবক, কোনো ক্ষ্যাপাটে কিশোর? নাকি রূপক কিছু, নাকি বিবেক, নাকি ন্যায়?

মিরপুর সাড়ে ১১তে পূরবী সিনেমা হলের কাছে। ওই গ্রাফিটিটিতে দেখা যায়, দুটি কাক কিছু নিয়ে উড়ে যাচ্ছে, নিচে কিছু হতদরিদ্র মানুষ হাত পেতে আছে।  সেখানে লেখা ছিল- ‘ওদের জীবনে দাও কিছু সুখ।’

বলা হয়, সব এড়ানো গেলেও শিল্প কখনো চোখ এড়িয়ে যায় না। তাই, ‘টাক, এখনই ঢেকে যাক’ এর মতন সাধারণ দেয়াল লিখনও মানুষের চোখ এড়ায় না। কিন্তু সুবোধ সিরিজের গ্রাফিটিগুলো বেশ অন্যরকম ঠেকেছে সবার কাছে। শহরের বিভিন্ন স্থানের দেয়ালে একেক সময় একেক রকমভাবে দেখা মিলছে সুবোধের। কোথাও কারাগারে বন্দি সুবোধ, তার পাশেই লেখা, ‘সুবোধ এখন জেলে! পাপবোধ নিশ্চিন্তে করছে বাস মানুষের হৃদয়ে।’ আবার কোথাও লেখা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, সময় এখন পক্ষে না। মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে।’ কখনো হতাশ হয়ে আছে সুবোধ, আবার কখনো জ্বলজ্বলে সূর্য ভর্তি খাঁচা আছে, সুবোধ নেই। কোথাও লেখা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছু নেই’। পুরাতন বিমান বন্দর, শিশুমেলা, শেরেবাংলা নগর বালক উচ্চবিদ্যালয়সহ বেশ কিছু স্থানে করা হয়েছে সুবোধ সিরিজের গ্রাফিটি।

ব্যাংকসির করা একটি গ্রাফিটি

গ্রাফিটিগুলো আঁকতে ব্যবহার করা হয়েছে স্টেনসিল। যুক্তরাজ্যের পথে পথে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে স্যাটায়ারধর্মী গ্রাফিটি এঁকে প্রতিবাদ করেন ব্যাংকসি। তার গ্রাফিটিগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অল্প সময়েই। গ্রাফিটি আঁকতে ব্যাংকসি স্টেনসিল ব্যবহার করতেন। এত জনপ্রিয়তার পরেও নিজের প্রকৃত নাম বা পরিচয় প্রকাশ করেননি ব্যাংকসি। শহরের দেয়ালে গ্রাফিটি আঁকা পৃথিবীর অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। তাই ২০১৪ সাথে খবর এসেছিল, লন্ডন পুলিশ বাংকসিকে গ্রেফতার করেছে গ্রাফিটি আঁকার দায়ে। পরে জানা গিয়েছিল খবরটি সত্যি নয়!

সুবোধ সিরিজের গ্রাফিটিগুলোও কে বা কারা আঁকছে তা এখনো জানা যায় নি। পরিচয় প্রকাশ না করলেও প্রতিটি গ্রাফিটির লোগো হিসেবে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘হবেকি?’।

৪৬৯৬ পঠিত ... ১৭:৪৯, জুন ০৪, ২০১৭

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top