যুদ্ধ নিয়ে যেসব কালজয়ী সিনেমা না দেখলেই নয়

১২৫৪ পঠিত ... ১৭:৫৯, মার্চ ০২, ২০২২

juddho-niye-cinema

যুদ্ধ, সভ্যতার এক অনিবার্য নিয়তিতে পরিণত হয়েছে যেন। সময় পাল্টানোর সাথে সাথে যুদ্ধের ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। নিউ ওয়ার পলিসি অনুসারে যুদ্ধের প্রধান টার্গেট এখন মানুষ। যুদ্ধের করুণ বাস্তবতায় চাপা পড়ে আছে কত বেদনার ইতিহাস, কত নির্মম ঘটনা। এই যুদ্ধকে  সিনেমার পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে বারবার। পৃথিবী জুড়ে এমন সব দুর্দান্ত সিনেমার কথাই জানাব আজ।

 

The boy in stripped pajamas (2008)

274645521_660008108658688_455956161739480473_n

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ইতিহাসের দগদগে এক ক্ষত। এই যুদ্ধের প্রোটাগনিস্ট নাৎসি জার্মানি ও তার নেতা এডলফ হিটলার। জার্মানির ইহুদি বিদ্বেষের এক হৃদয়বিদারক ট্র‍্যাজেডি নিয়ে সাজানো হয়েছে The boy in stripped pajamas সিনেমাটি। জন বোয়েনের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে ২০০৮ সালে নির্মিত হওয়া এই মুভির প্রধান চরিত্র দুই শিশু। ব্রুনো নামের এক ৮ বছর বয়সী ছেলের বাবা নাৎসি বাহিনীর বড় এক অফিসার। কর্মস্থল থেকে বদলি হয়ে তার দায়িত্ব পড়ে জার্মান এক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। হঠাৎ করে ব্রুনো আবিষ্কার করে এই ক্যাম্পকে। ক্যাম্পের কাঁটাতারে বেড়ার সীমায় তার সাথে পরিচিত হয় শ্মুয়েল নামের এক ইহুদি শিশুর। শ্মুয়েলের সাথে বন্ধুত্ব হয় ব্রুনোর। ব্রুনো একদিন ক্যাম্পের ভেতরে যেতে চায়। শ্মুয়েলের মত স্ট্রাইপড পাজামা পড়তে চায়। একদিন ব্রুনো ক্যাম্পে ঢুকে পড়ে। তারপরের ট্র‍্যাজেডি জানতে হলে অসাধারণ এই মুভিটি দেখতে হবে। ব্রুনো চরিত্রে অভিনয় করেছেন আশা বাটারফিল্ড আর শ্মুয়েল চরিত্রে ছিলেন জ্যাক স্ক্যানলন। মুভিটি পরিচালনা করেছেন মার্ক হারমান। মুভিটির IMDB রেটিং ৭.৪।

 

Admiral : The roaring currents (2014)

80011706

সাড়া জাগানো কোরিয়ান মুভি Oldboy এর অভিনেতা চই মিন সিকের দানবীয় অভিনয়ের আরেক উদাহরণ হচ্ছে Admiral: The roaring currents নামের এই মুভিটি।

১৫৯৭ সাল। কোরিয়ান জসেন সাম্রাজ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আগ্রাসন চালাচ্ছে জাপানি সৈন্যরা। স্থল বাহিনী যখন পর্যুদস্ত এমন বাস্তবতায় কোরিয়ান নৌবাহিনীও মুখ থুবড়ে পড়েছে। সমুদ্রে জাপানিদের প্রতিরোধ করতে হাতে আছে মাত্র ১২ টি জাহাজ! অপরদিকে জাপানি নৌবহরে আছে ৩৩০ টি জাহাজ। পরাজয় যখন সময়ের ব্যাপার তখন জাপানি ডাবল এজেন্ট হিসেবে অভিযুক্ত (যে এজেন্ট এক দেশের গোয়েন্দা সংস্থায় থেকে অন্য দেশের উদ্দেশ্য পূরণ করে) এডমিরাল জেনারেল Yi sun shin কে দায়িত্ব দেয়া হয় এই আক্রমণের। নিজের আনুগত্য প্রমাণ করার জন্য Yi sun shin এক অসম যুদ্ধে নামেন। সমুদ্রের ঘূর্ণিকে কাজে লাগিয়ে এক অসাধারণ রণকৌশলের ওপর ভর করে তিনি তার আক্রমণের ছক সাজান। চই মিন সিকের একজন জেনারেল সুলভ গাম্ভীর্য আর রণ হুংকার মুভিটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। সিনেমাটি ১৫৯৭ সালের মিয়াংওয়াং যুদ্ধের বাস্তব রূপায়ন। মুভিটির IMDB রেটিং ৭.১

মুভির সেরা উক্তি, ‘It is said a commander's loyalty must lie with the king and the king must follow his subject।‘

 

The 12th man (2017)

274666038_995459804700981_4226758206880297122_n

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে৷ নরওয়ে চলে গেছে নাৎসি জার্মানির অধীনে। অপারেশন রেড মার্টিন নামের এক বিশেষ অভিযানে ১২জন নরওয়েজিয়ান মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানো হয় নরওয়েতে। ব্রিটিশরা এদের প্রশিক্ষণ দেয়। কিন্তু নিরাপত্তা দুর্বলতায় ১২জনকে বহন করা নৌকাটি গেস্টাপো অফিসাররা ধরে ফেলে। ১১জনকে ধরতে পারলেও এদের মধ্যে জ্যান বালস্রুদ নামের একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তাকে ধরতে এক চিরুনি অভিযানে নামে জার্মান বাহিনী। তীব্র হিমশীতল পানি আর বৈরি আবহাওয়ার সাথে পেছনে থাকা জার্মান সৈন্যদের হাত থেকে পালিয়ে বেড়ানোর এক মহাকাব্যিক গল্প জুড়ে সিনেমাটি টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। জ্যান বালস্রুদ কি সফল হয়? তা জানতে হলে মুভিটির বাকি অংশ দেখতে হবে। মুভিটির IMDB রেটিং ৭.৪

 

Quo vadis. Aida? (2020)

274632605_458978599285269_6514733768155846477_n

২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া এই বসনিয়ান মুভিটির গল্প বসনিয়ান মুসলিমদের ওপর সার্বিয়ান সৈন্যদের পরিচালিত সেব্রেনিকা গণহত্যাকে কেন্দ্র করে। ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে প্রায় ৮ হাজার বসনিয়াক পুরুষকে হত্যা করে সার্বিয়ান সেনাবাহিনী। মুভির প্রধান চরিত্র এইদা। যিনি পেশাগত জীবনে একজন স্কুল শিক্ষিকা। বসনিয়ায় সার্ব সৈন্যরা যুদ্ধ শুরু করলে জাতিসংঘ শরণার্থী ক্যাম্পে তিনি দোভাষী হিসেবে কাজ করেন। অন্যান্য মানুষের মত এইদার পরিবারও প্রাণ বাঁচাতে জাতিসংঘ ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়; কিন্তু বিধি বাম! কোনভাবেই এইদার স্বামী ও দুই পুত্রের সবাইকে ক্যাম্পে ঢুকার অনুমতি দেয়া হবে না। শেষ পর্যন্ত নিজের প্রভাব খাটিয়ে ও অনেক কাকুতি মিনতি করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসে এইদা। ক্যাম্পের ভেতরে শুরু হয় আরেক লড়াই। এইদার পরিবারের ভাগ্যে কি লিখা থাকে তা জানার জন্য এই মুভিটা শেষ করতে হবে। এই মুভিতে জাতিসংঘ ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কড়া সমালোচনা করা হয়েছে৷ যুদ্ধাবস্থায় তাদের ভূমিকা যে নড়বড়ে তা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে। মুভিটির IMDB রেটিং ৮

 

Hacksaw Ridge (2016)

274681005_710768919912274_4349031317644556059_n

‘While everyone else is taking life, I'm gonna be saving it. And that's gonna be my way to serve.’

--Desmond Doss, Hacksaw Ridge

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপে। সে যুদ্ধে কোন বন্দুক ছাড়াই ৭৫ জন আমেরিকান সৈন্যকে বাঁচিয়ে এনে আমেরিকার বিখ্যাত সামরিক পদক Medal of honor প্রাপ্ত হয়েছিলেন ডেসমন্ড থমাস ডস নামের এক কমব্যাট মেডিক। তার দুঃসাহসী এই কাজের উপরই ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে হলিউডের অন্যতম সেরা ওয়ার মুভি হেকশো রিজ।

মুভিটিতে ডেসমন্ড ডস চরিত্রে ছিলেন স্পাইডার ম্যান এন্ড্রু গারফিল্ড। ছোটবেলায় মা শিখিয়েছিলেন মানুষ হত্যা করা পাপের কাজ। যুদ্ধে যাবেন তিনি কিন্তু মানুষ মারতে নয়, মানুষ বাঁচাতে। আমেরিকান করপোরাল হতে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বন্দুক না ছোঁয়ার কারণে তাকে জেলও খাটতে হয়। শেষ পর্যন্ত একজন কমব্যাট মেডিক হিসেবে তিনি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে অসম বীরত্বে ৭৫ জন সৈন্যেকে প্রাণে বাঁচাতে সক্ষম হোন। মুভিটি পরিচালনা করেছেন মেল গিবসন। IMDB রেটিং ৮.৪।

মুভির আইকনিক উক্তি, ‘Lord, please help me to get one more।‘

১২৫৪ পঠিত ... ১৭:৫৯, মার্চ ০২, ২০২২

Top