বাঙালির আবদার আর আবদার পরবর্তী হতাশা বেশ পুরোনো এক চক্র। ছাতার উপর ছবি এঁকে দেয়ার আবদার পাওয়া শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের সব আর্টিস্টই এই আবদার চক্রের শিকার। পরিচিত, স্বল্প পরিচিত, মুখ চেনাচিনি কিংবা কোন ধরণের পরিচয় না থাকলেও আর্টিস্টদের ইনবক্সে 'ভাই একটা স্কেচ করে দিবেন? বিগ ফ্যান ভাই; ভাই, প্রেমিকার জন্মদিন, দুইটা লাইন লিখে দেন না' লিখে পাঠিয়ে দিতে মানুষ খুব একটা কুন্ঠাবোধ করে না। আর্টিস্টদের অপারগতার মাইনর হতাশায় মন খারাপ ও মেজর হতাশায় সমালোচনায় মত্ত হন ভক্তরা।
তবে সম্প্রতি লিনেরক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের 'ফটোল্যাব' নামক একটি অ্যাপ আর্টিস্টদের এনে দিয়েছে স্বস্তি। কয়েক ক্লিকে স্কেচ করে ফেলতে পারা এই অ্যাপ দিয়েই নাকি ভক্তদের আবদার মেটাচ্ছেন আর্টিস্টরা। এমনই একজন দেশের প্রথম সারির আর্টিস্ট মোরশেদ মিশু। ফ্রিতে স্কেচ চাওয়া কোন ভক্তকেই হতাশ করছেন না তিনি। জ্বি ধন্যবাদযোগে ধরিয়ে দিচ্ছেন ফটোল্যাপ অ্যাপের লিংক। ফটোল্যাব অ্যাপের নির্মাতাদের ধন্যবাদ দিয়ে মোরশেদ মিশু eআরকিকে বলেন, 'কয়েকদিন আগে রাত ৩টায় একজন স্কেচ আঁইকা দিতে কইলো। পারবো না বলতেই লোকটা বললো, আপনি মিয়া ভাব দেখান। বিখ্যাত এক কবিকে বলতেই ১০ লাইনের কবিতা লিখে দিলো। আপনি আর এমন কী!'
কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ফটোল্যাব অ্যাপের নির্মাতাদের স্কেচ আঁকতে আঁকতে মোরশেদ মিশু আরো বলেন, 'এখন আর টেনশন নাই। সবাইকে অ্যাপ লিংক দিয়ে দিচ্ছি আর বলতেছি, স্কেচ করা এত কঠিন না। এই অ্যাপ দিয়া ইচ্ছামতো করে নেন। আমিও এই অ্যাপ দিয়াই করি।'
দেশের প্রথম সারির অন্য আরেক কার্টুনিস্ট তন্ময়ও এমন একটা অ্যাপ আসায় মোরশেদ মিশুর মতো স্বস্তিতে আছেন। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, 'আমি শিওর ফটোল্যাপ অ্যাপের নির্মাতারাও আমাদের মতো আবদার পাওয়া আর্টিস্ট। নানান আবদারের জর্জরিত হয়েই মেবি তারা এটা বানাইছে।'
তবে এই অ্যাপের সন্ধান পেয়ে হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন আগের যুগের বিখ্যাত আর্টিস্টরা। পাবলো পিকাসো বলেন, 'আমার সময়ে এই অ্যাপ থাকলে কষ্ট করে নিজের এতগুলো এবড়োথেবড়ো পোট্রেইট আঁকতাম না।' শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তার বিখ্যাত দুর্ভিক্ষের ছবি এই অ্যাপের মাধ্যমে স্কেচ করে ইন্সটায় পোস্ট করেন, ক্যাপশনে লেখেন, 'এতদিনে একটা কাজের অ্যাপ পেয়েছি। এই অ্যাপকে আমি "অ্যাপাচার্য" উপাধিতে ভূষিত করলাম।'
এই অ্যাপ দিয়ে নিজের একটা ছবি আঁকার পর স্যাড খান ভ্যান গগ। দুঃখ ভারাক্রান্ত গলায় বলেন, 'অ্যাপটা সময়মতো পেলে জীবদ্দশায়ই ফেমাস হইতাম। আরেকটা কানও কেটে ফেলতে মন চাইতেছে।'
অন্যদিকে দেশের কবিরাও এখন আছেন এমন একটি গোস্ট অ্যাপের আশায়। এমনই একজন কবি বলেন, 'জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, প্রেম সবকিছুর ক্ষেত্রে কবিতার আবদার করে মানুষ। আজকাল ভাই পোলামাইয়ার নাম ঠিক করার আবদারও পাই। আবদার না মিটাইলে *লের কবিও আখ্যা দেয়। অ্যাপই কবিতা লিখে দেয়, এমন একটা অ্যাপ কেউ বানাইলে জানডা বাঁচতো।'