যেভাবে নিজের চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে ভার্সিটির সাবজেক্ট চয়েজ করবেন

১৬০৬ পঠিত ... ২১:২১, নভেম্বর ১৭, ২০১৯

এ বছরের ‘ভার্সিটি এডমিশন টেস্ট মৌসুম’ শেষের পথে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্টও প্রকাশিত হয়েছে। আপনি যদি চান্স না পেয়ে থাকেন, তাইলে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু যদি ভুল করে চান্স পেয়ে যান বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, আসল চ্যালেঞ্জ তো সবে শুরু! সেইসব চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ ও প্রধান চ্যালেঞ্জ, সাবজেক্ট চয়েজ। ‘চান্স তো পেলাম, এখন কোন সাবজেক্টে পড়বো’... এমন কোনো মহারথী নাই যে চান্স পাওয়ার পর একবারের জন্যও এই কনফিউশনে পড়ে নাই।

সাধারণত অভিভাবক, ময়-মুরব্বি, ভাই-ব্রাদার, টিচার কিংবা অনলাইন জগত, কোন বিষয় পড়বো এ ব্যাপারে এসব জায়গা থেকেই শিক্ষার্থীরা পরামর্শ নিয়ে থাকে। কিন্তু এত চিন্তাভাবনার কিন্তু কোনো দরকারই নেই। নিজের চরিত্র ও আচরণ বিশ্লেষণ করেই আপনি বুঝে যেতে পারেন, আপনার কোন সাবজেক্টে পড়া উচিত। আর তাও যদি সিদ্ধান্তে না আসতে পারেন তাহলে সহায়তা নিতে পারেন আমাদের সাবজেক্ট চয়েজের গাইডেন্স! নাবিলা কবির এবং সুমাইয়া কাফী লিজা গবেষণা করে তৈরি করেছেন এই গাইড। 

১# আপনি যদি বিজয় এবং অভ্র দুটো কিবোর্ডেই লিখতে পারদর্শী হন, কারো ফেসবুক পোস্টের বানানে ভুল হলে সবার আগে কমেন্ট করে শুদ্ধ বানান লিখে দেন, তাহলে বলাই যায় আপনার বাংলা ভাষার উপর ভালো দক্ষতা আছে। ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার বা কোন ছবি আপলোড দিতে গেলেই আপনার মাথায় যদি ঘুরঘুর করতে থাকে যে ক্যাপশনে দিতে হবে কোন কবিতার লাইন বা হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের চুম্বকাংশ, তাহলে বাংলা সাহিত্যের প্রতি আপনার ভালোবাসা অনস্বীকার্য। আপনার অবশ্যই ভর্তি হওয়া উচিত বাংলা বিভাগে। 

২# ফেসবুকে কেউ ভুলভাল ইংরেজি লিখলেই আপনার যদি ভুল ধরিয়ে দেয়ার স্বভাব থাকে, সবার কাছে যদি আপনি পরিচিত হন গ্রামার নাজি হিসেবে, তবে ইংরেজি বিভাগই আপনাকে খুঁজছে। আপনি যদি ফেসবুকে ছবি আপলোড দেয়ার সময় গুগলে সার্চ দিয়ে ইংরেজি জ্ঞানী কোটেশন খুঁজেন যার আপনার ছবির সাথে কোন সম্পর্ক নেই, ‘Miles to go before I sleep’, ‘I’m not weird, I’m limited edition’ এসব যদি হয় আপনার প্রিয় ক্যাপশন, তাহলে আপনার ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হওয়া উচিত।

৩# আপনি কি প্রেমিক/প্রেমিকাকে নিয়ে সারাক্ষণ সন্দেহে ভুগতে থাকেন? সারাদিনই তাদের ক্রিমিনাল মনে হয়? আপনি কি আপনার প্রেমিক/প্রেমিকার ফেসবুকে দেয়া ছবি, কমেন্টে কারা লাইক দিয়েছে তা খুঁজে বের করে তাদেরও ক্রিমিনাল ভেবে স্টক করেন? তাহলে ক্রিমিনোলজি সাবজেক্ট আপনার জন্যই।  

৪# আপনি একজন ফুড ব্লগার, রেস্টুরেন্টে খেয়ে রিভিউ লিখে বা ব্লগিং করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার বেশ ফ্যান ফলোয়ার হয়ে গেছে। কোনো রেস্টুরেন্ট আপনাকে স্পনসর করতে রাজি না হলে কিংবা ফ্রি না খাওয়ালে মাথা থেকে টুক করে একটা চুল তুলে কিংবা একটা দাঁত খুলে স্যুপের বাটিতে রেখে হইচই করে কান্ড করে ফেলতে পারেন এবং খাবারের হাইজিন নিয়ে মামলা করে দিতে পারেন। আপনার দক্ষতা যদি এমন হয়, তাহলে আপনার অবশ্যই খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগে পড়া উচিত।  

৫# কলেজ জীবনে আপনি যদি বাসার বাইরে থাকেন তাহলে গণিত বিভাগে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন। কারণ বাসা থেকে বাইরে থাকায় আপনাকে বাবা মা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা পাঠায় যা দিয়ে পুরো মাস কিভাবে চলবেন, কোন জায়গায় কতটুকু ব্যয় করবেন এসব কিছুর জটিল অংক মিলানো শিখতে হয়। হিসাব মিলানোই তখন আপনার একমাত্র দক্ষতার জায়গা হয়ে ওঠে। আর জানেন তো, কাজী মারুফ বাদে সবারই অংক মিলে। তাই মোটামুটি সবাই গণিত বিভাগে ভর্তি হওয়ার চান্স নিতে পারেন।  

৬# আপনি কি নিজে কিছু না করে বাপের টাকার গরম দেখান? বাবার গাড়িতে চলাফেরা করেন কিন্তু ঠিকমতো পড়াশুনা না করলে সব বাবার মতো রিকশা কিনে দেয়ার হুমকি খান? তাহলে আপনি ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্সে পড়ুন। কারণ ব্যাংকারদেরও হাতে অনেক টাকা থাকে কিন্তু সেগুলি তাদেরকে ব্যাংকেই রেখে আসতে হয় । 

৭# আপনি যদি স্বাভাবিকভাবে কথা না বলে নেতা হবার লক্ষ্যে সারাক্ষণ বক্তৃতার স্টাইলে কথা বলেন, অন্যদিকে আপনার চেয়ে বড় কেউ কোন কথা বললেই তার সুনজরে থাকার জন্য তার সাথে একমত হয়ে যান, তবে আপনার পড়া উচিত পলিটিকাল সাইন্স। পলিটিক্সে যখন ঢুকবেনই (শাইনও করবেন!), তাহলে একটু বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখা করেই ঢোকেন না!

৮# আপনার যদি বন্ধু-বান্ধব বা প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে ঝগড়া হলেই আগে তারা কী কী ভুল করেছে তা হড়বড় করে বলে দেয়ার স্বভাব থাকে, স্ক্রিনশটে যদি আপনার ফোনের গ্যালারি ভর্তি থাকে যা আপনি সুযোগ বুঝে প্রকাশ করার জন্য জমিয়ে রাখেন, সকলের হাড়ির খবর আপনার কাছে থাকে, তবে ইতিহাস বিভাগ আপনার জন্য। অবশ্য মোটামুটি সব মেয়েরা এসব গূণের অধিকারী হওয়ার কারণে ইতিহাসে পড়ার যোগ্যতা রাখেন...

৯# কোথাও কোন গ্যাঞ্জাম বাধলেই কি আপনি সেখানে গিয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন যে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক? ফেসবুকে আপনি বেশ খ্যাত বড় বড় স্ট্যাটাস দিয়ে কোন ঘটনাকে আইনসম্মতভাবে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য? তবে আপনার জন্য রয়েছে আইন বিভাগ। চিটার প্রেমিক/প্রেমিকাকে হাতেনাতে ধরে সকল সাক্ষ্য প্রমাণ জড়ো করে পিটুনি সহকারে ব্রেকাপদন্ড দেন তাহলে আপনার উচিত কোনো কিছু না ভেবে চোখ বুজে আইন বিভাগে চলে যাওয়া। 

১০# নতুন নতুন পোশাক পরে একদিন পর পর প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করা, দিনে ১০-১২টা স্টোরি দেয়া, আর কেউ ছবি দেখে ‘পোশাক কই থেকে কিনেছেন’ বা ‘কে ছবি তুলে দিয়েছে’ তা জিজ্ঞেস করলে নিজের পেজ অথবা স্পনসরড পেইজের কথা বলে বিজ্ঞাপন করা যদি আপনার নিয়মিত কাজ হয় তবে এই প্রতিভার জন্য মার্কেটিং বিভাগ আপনাকে লুফে নিবে। 

১১# আপনার পেটে যদি কোন কথাই না থাকে, একজনের খবর আরেকজনকে জানানো যদি আপনার হবি হয়, আর গুজব ছড়াতে যদি আপনি বেশ পারদর্শী হন তবে আপনার পড়া উচিত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায়। এছাড়া সারাদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুনিয়ার সবকিছু শেয়ার দেয়া যদি আপনার পছন্দের কাজ হয় তাহলেও আপনি এই বিভাগে ভর্তি হতে পারেন। 

১২# বিখ্যাত প্লেয়ারদের পোস্টে তাদের স্ত্রী হিজাব পরেন না কেন এধরনের কমেন্ট করা যদি আপনার স্বভাব হয়, বাসে কেন মহিলা সিট থাকবে তা নিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে দেন, তাহলে বোঝা যাচ্ছে আপনি মেয়েদের নিয়ে খুবই কনসার্ন। আপনার চিন্তা ভাবনার পরিবর্তনের জন্য পড়তে পারেন উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজে। 

১৩# আপনার যদি ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বিশাল কান্ড করে ফেলার অভ্যাস থাকে, যাকে সুন্দর বাংলায় বলে তালকে তিল বানানো, তবে বেছে নিতে পারেন থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ। আপনার যদি অসুস্থতার অযুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন প্ল্যান ক্যান্সেল করানোর বা অসুস্থতার কথা বলে সভানুভূতি নেয়ার স্বভাব থাকে তাহলেও ভর্তি হতে পারেন এই বিষয়ে।

১৪# স্কুলে থাকতে কি আপনিই সেই ব্যক্তি ছিলেন যে গান ও বিভিন্ন ভিডিও ডাউনলোড করে বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেন? বাসার রাউটার নষ্ট হলে তা অফ করে অন করে আপনিই কি বাসার সবাইকে রক্ষা করেন? তবে আপনার ভর্তি হওয়া উচিত কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

১৫# কেউ কোন কথা বললেই আপনি ভাবুক হয়ে যান, জীবন, প্রকৃতি থেকে শুরু করে চেয়ার, টেবিল, খাট সবকিছু নিয়েই গভীর এবং দীর্ঘ অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দেয়া যদি আপনার পছন্দের কাজ হয়, তবে আপনি দর্শন বিভাগে ভর্তি হতে পারেন।

১৬০৬ পঠিত ... ২১:২১, নভেম্বর ১৭, ২০১৯

Top