এসএসসির ফলাফলের পরে ফেসবুক সেলিব্রিটিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য : একটি eআরকি গাইডলাইন

৮৩৬ পঠিত ... ১২:১৮, মে ০৬, ২০১৯

এসএসসির ফল প্রকাশিত হলো। অনেকে এ প্লাস পেয়েছে। অনেকেই পায়নি। স্বাভাবিকভাবেই এ প্লাস না পাওয়ারা হতাশ। তোমরা যারা দুই তিন বছর আগে এসএসসি ডিগ্রি অর্জন করে এখন ফেসবুক সেলিব্রিটি হয়ে গেছো তারা এই সময়টাতে ওইসব হতাশদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারো। ফেসবুকে এই সময়টাতে উৎসাহমূলক, অনুপ্রেরণাদায়ক কিছু লেখা তোমাদের সামাজিক দায়িত্ব। এখনই ঝাপিয়ে পড়ো। কিন্তু কীভাবে একটু গুছিয়ে সেগুলো লিখবে তার কয়েকটি নমুনা দিয়ে দেয়া হলো: 

এসএসসি+নিজের অভিজ্ঞতা
এবার যারা এসএসসিতে আশানুরূপ ফলাফল করতে ব্যার্থ হয়েছে তাদের অতীত ঘাটলে দেখা যাবে অনেকেই পড়ালেখা না করে ফেসবুকে সময় ব্যয় করেছে বেশি। ফেসবুক সেলিব্রিটি হওয়ার চেষ্টা করতে ব্যাস্ত থাকায় পড়ালেখায় মনযোগ দিতে পারেনি। একজন সেলিব্রিটি হিসেবে তুমি তাদেরকে স্বান্তনা দিতে পারো। তাদেরকে বুঝাতে পারো যে এ প্লাসই  জীবনের সবকিছু নয়। তুমি যেভাবে সেলিব্রিটি হয়েছো, তারাও এভাবে হতে পারবে।

ছবি সৌজন্যে : বিডিনিউজ২৪ ডটকম

নমুনা
ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। তোমরাই আগামী দিনের যাত্রী। খারাপ করেছ তার মানে এই না যে তুমি হেরে গেছো! কই? আমি তো ভেঙ্গে পড়িনি! আমরা তো উঠে দাঁড়িয়েছি। দেখিয়ে দিয়েছি, এ সিস্টেম আমার জন্য নয়। প্রমাণ করেছি, এ সিস্টেম আমাকে জাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তুমিও পারবে। তোমাকে পারতেই হবে। চোখের পানি মুছে মেরুদণ্ড সোজা করে উঠে দাঁড়া পাগলা ভাইবোনগুলা আমার...।

এসএসসি+ক্রিকেট
এই মিক্সচারটা মানুষ খাবেই, অতীতেও খেয়েছে। এসএসসিতে খারাপ করা বাচ্চাকাচ্চারা এমনিতেই ইমোশোনাল হয়ে আছে। তাদেরকে এই জিনিস দিলে খেতে বাধ্য। একজন সেলিব্রিটি হিসেবে এসএসসির সাথে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারকে মেশানো তোমার পবিত্র দায়িত্ব। তাছাড়া এই টপিকে ৫০০০ লাইক একদম কনফার্ম। ভাগ্য খারাপ হলেও কয়েকশ শেয়ার তো পাবেই।

 

 

নমুনা
মাশরাফি কি এ প্লাস পেয়েছিলো? না, পায় নাই। সাকিব কি দিনে ১৪ ঘন্টা পড়ালেখা করেছিলো? না, করে নাই। মুস্তাফিজ কি বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিলো? না, করে নাই। তাসকিন কি গোল্ডেন পেয়েছিলো? না, পায় নাই।

তাহলে ভাই আমার, তুমি পাবে কেন? এ প্লাসই কি সব? এ প্লাস কি এমন রসগোল্লা? এ প্লাস না পেয়েই তুমি সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারবে। কি পারবে না? এসো বুকে...
এসো, এসে চিৎকার করে বলো, আমি পারবো।

এসএসসি+প্রেম
ইমোশন মিশিয়ে ভালো রকম ঝাঁকি দিতে পারলে এই মিক্সচারও লোকে খেতে বাধ্য। বিশেষ করে মেয়েরা এটা খাবেই। ৪০০০ লাইক নিশ্চিত।

 

নমুনা
নবম শ্রেণী, একটা মেয়ে চোখে কাজল দেয়া শেখে তখন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করে এই বয়সে। 'আয়নাতে ওই মুখ রাখবো যখন' এই বয়সেই একটা মেয়ে প্রথম রাজপুত্রের স্বপ্ন দেখে। রাজপুত্র আসেও। এসে হারিয়েও যায়। তারপর মেয়েটার চোখের পানির হিসেব রাখে কেবল বাথরুমের বেসিন, আর পাশবালিশ।

দশম শ্রেণী, একটা ছেলে এই বয়সে প্রথম চুলে জেল দেয়া শেখে। গিটার হাতে নিয়ে টুংটাং সুর তোলে--পেহলা নাশা, পেহলা হুয়া। ফেসবুকে খুঁজে বেড়ায় তার রাজকন্যাকে। রাজকন্যা আসে, আবার হারিয়েও যায়। তারপর শুধু চোখের পানি। সে পানির হিসাব রাখে কেবল ছাদের রেলিং আর সিগারেটের ধোঁয়া।

...এত কষ্ট এত ব্যাথা নিয়ে কি পরীক্ষা দেয়া যায়? এ প্লাস পাওয়া যা? না যায়না। যারা এসব কারণে এবার ভালো ফলাফল করতে পারিসনি তোরা বুকে আয়। দেখিয়ে দে, তোরা শেষ হয়ে যাসনি। আমি আছি তোদের সাথে।

এসএসসি+মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্ট
এটাও একটা অব্যর্থ অস্ত্র। প্যাঁচটা দিতে পারলে ৩০০০ লাইক কনফার্ম।

 

নমুনা
বই কিনতে গেলে মোবাইলে এমবি কেনার টাকা থাকে না। বাইক দিয়ে একদিন লং ড্রাইভে গেলে এক সপ্তাহ গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করা যায় না। বন্ধুরা সারাদিন থাকে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ব্যস্ত। তাদের দামি গাড়ি, দামি বাড়ি। আর ছেলেটি? দীর্ঘশ্বাস, মধ্যবিত্ত বাস্তবতা আর একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছাড়া কী আছে তার জীবনে?
সেই ছেলে কীভাবে এ প্লাস পাবে? জীবন নামক যুদ্ধে সে লড়াই করবে নাকি এ প্লাস পাবে?

তোমরা যারা এভাবে যুদ্ধ করায় ব্যস্ত ছিলে বলে এ প্লাস পাওনি তারা বুকে আসো। তোমাদের এই কম গ্রেড ওদের এ প্লাসের চেয়েও অনেক দামি। অনেক অনেক দামি। এই কম গ্রেডের সাথে মিশে আছে চোখের পানি, আর শরীরের ঘাম।

এসএসসি + দেশপ্রেম
দেশপ্রেম খাওয়াতে পারলে লোকজন সে স্ট্যাটাসে ঝাপিয়ে পড়বেই।

 

নমুনা
দেশকে ভালোবাসতে কি এ প্লাস লাগে? না লাগে না। গরীব দুঃখি মানুষের পাশে দাঁড়াতে কি এ প্লাস লাগে? লাগে না। দেশের প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়তে কি এ প্লাস লাগে? না লাগে না।

তোমরা যারা এ প্লাস পাওনি তারা একদম মন খারাপ করো না। তোমরা দেশের কাজে ব্যস্ত থাকায় এ প্লাস পাওনি, এটা ইতিহাস মনে রাখবে। সেই একইভাবে দেশের প্রয়োজনে তোমরাই সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়বে এটাও দেশ জানে। এখনই এই স্ট্যাটাসটা শেয়ার দিয়ে দেশের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ো।

স্ট্যাটাস লেখার পর অনেক মন্তব্য আসবে। নিচে কয়েকটি মন্তব্যের নমুনা দেয়া হলো : 

নমুনা ১
সন্ধ্যা থেকে মন খারাপ করে বসে ছিলাম ভাইয়া। আপনার স্ট্যাটাসটা দেখে খুব শান্তি লাগছে।

নমুনা ২
আপনি কীভাবে পারেন ভাইয়া, এভাবে মনের কথা লিখতে? আপনি না থাকলে কী যে হতো! আপনাদের মতো মানুষগুলো আছেন বলেই এখনো আমরা স্বপ্ন দেখে যাই।

-d2ycr79

 

নমুনা ৩
Tajul Islam (ম্যানশন করে) দেখ, তোর জন্য ভাইয়া এই লেখাটা লিখেছে। আর মন খারাপ করে থাকিস না। পড়। পড়ে আমাকে ফোন দে।

নমুনা ৪
ভাইয়া, জীবনকে এভাবে দেখতে পারেন বলেই আপনারা আজ সফল। আমরাও কি পারবো আপনাদের মতো হতে? দোয়া করবেন ভাইয়া।

নমুনা ৫
ভাইয়া, এই স্ট্যাটাসটা আমার বাবা মাকে দেখাতে পারলে শান্তি পেতাম। তারা বুঝতো আমি শেষ হয়ে যাইনি।

নমুনা ৬
আজ থেকে আমি ফেসবুকে আরও অনেক সময় দেবো। আপনার প্রতিটি স্ট্যাটাস ফলো করবো। আমাকে সফল হতেই হবে। ভাইয়া, আমাকে অ্যাড করবেন?

এরকম অনেক কমেন্ট আসবে। আর এভাবেই স্ট্যাটাস দিয়ে এবং স্ট্যাটাসে আসা কমেন্টের রিপ্লাই দিয়ে এসএসসি ইস্যুতে সুষ্ঠুভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করে ফেলা সম্ভব।

তো? আর দেরি কেন সেলিব্রিটি বন্ধুরা? শুরু করে দাও। আজ তোমাদেরই দিন।

 

৮৩৬ পঠিত ... ১২:১৮, মে ০৬, ২০১৯

Top