দেখে নিন চল্লিশ থেকে ষাটের দশকে আমাদের ক্রিকেটাররা কেমন ছিল!

৮১১১ পঠিত ... ১৩:২৫, মার্চ ০৬, ২০১৬


বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলার চল সেই প্রাচীন আমল থেকে। সেই আমলে কারা খেলতো ক্রিকেট? চলুন তাদের চিনে নেওয়া যাক। তাদের এসব দূর্লভ ছবি আর্কাইভ ঘেটে বের করেছে eআরকি।

ষাটের দশকে যে কয়জন ক্রিকেটার মাঠ দাপিয়ে বেড়াত তাদের মধ্যে রাকিব আল হাসান অন্যতম। তিনি মূলত ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তবে দলের প্রয়োজনে কখনো কখনো স্পিন আক্রমনেও এগিয়ে আসতেন। সম্পর্কে তিনি বর্তমান জাতীয় দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রপিতামহ। 


পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে এদেশের যে কয়জন বাঁহাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের আতঙ্ক হিসেবে দেখা গিয়েছিল তাদের মধ্যে মোহাম্মদ নাফীস অন্যতম। বলা হয়ে থাকে তিনি ক্রিকেট রেকর্ডবুক চালু করেন। সম্পর্কে তিনি এ সময়ের ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীসের দাদার দাদা।


ইকবাল খান চল্লিশের দশকে জন্মগ্রহণকারী একজন সনামধন্য ক্রিকেটার। তিনি শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। ইকবাল খান প্রিমিয়ার লীগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের হয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেন। তিনি টেস্টে ৪,০০০ রান সংগ্রহকারী দ্বিতীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর সে রছরই মার্চে তিনি আইপিএলের পুনে ওয়ারিয়র্স ক্রিকেট দলে যোগ দেন। সম্পর্কে তিনি এ সময়ের জাতীয় দলের ওপেনার তামিম ইকবালের দাদার দাদা।


মোহাম্মদ রাজ্জাক ১৯৩৪ সালে খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। খুলনা বিভাগীয় ক্রিকেট দলের পক্ষে ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে বাংলাদেশ ঘরোয়া ক্রিকেট পর্যায়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। অভিষেক বর্ষেই রাজ্জাক বামহাতি স্পিনার হিসেবে সকলের নজর কাড়েন এবং নিজ দলকে জাতীয় ক্রিকেট শিরোপা পেতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেন। অতীতে ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিং করার সময় রাজ্জাক থ্রো বা চাকতি নিক্ষেপের অভিযোগে বেশ কয়েকবার অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এরই রেশ ধরে ১৯৪৯ সালে সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের খেলায় আইসিসির ম্যাচ রেফারি রোশন মহানামা কর্তৃক তিনি পুণরায় অভিযুক্ত হন এবং তাকে বোলিং ভঙ্গীমা পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। পরবর্তীকালে রাজ্জাক ধরণ পরিবর্তন করে বৈধভাবে বোলিং করে আস্থা অর্জন করেন। ফলে, আবারো তিনি নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক দলে ফিরে আসলেও তাড়াতাড়ি তার নিজস্ব ছন্দ খুঁজে পাননি। কিন্তু ধীরে ধীরে পুনরায় তিনি ধারাবাহিকভাবে ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে জাতীয় দলের একজন নিয়মিত সদস্য খেলোয়াড় হয়ে নিজেকে গড়ে তোলেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী বোলার হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০ উইকেট নেন। তিনি সম্পর্কে কয়েক বছর আগে জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় আব্দুর রাজ্জাকের বাবার বাবার বাবা। 


ষাটের দশকে মোহাম্মদ আখরাতুলকে বলা হলো সেসময়ের বাংলাদেশের আশার কলি। পরবর্তী সময়ে তার দৌহিত্রকে বলা হলো আশার ফুল। ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করার রেকর্ডের অধিকারী। এই কৃতিত্ব তিনি অর্জন করেন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কারই মাটিতে। ব্যাটিংয়ে দক্ষতা ছাড়াও তিনি মাঝে মাঝে ডানহাতে লেগ স্পিন বল করতেন।


মোহাম্মদ রহিম সত্তুরের দশকের একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ থেকে রহিম জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক ছিলেন। মূলত তিনি একজন উইকেট-রক্ষক এবং মাঝারি সারির ব্যাটসম্যান ছিলেন। ছোটখাটো গড়নের এই সদা হাস্যোজ্জ্বল খেলোয়াড়টি স্ট্যাম্পের পেছনে বকবক করার জন্য পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তথা সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেন। সম্পর্কে তিনি বর্তমান জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের চাচার চাচা।


আশির দশকে মোহাম্মদ মর্তুজা ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলিং স্তম্ভ। তিনি সেসময় একদিনের আন্তর্জাতিকে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার বোলিংয়ের ধরণ ডানহাতি পেস বোলার। বাংলাদেশ জাতীয় দল ছাড়াও তিনি এশিয়ান একাদশের একদিনের আন্তর্জাতিক দলে খেলেছেন। সম্পর্কে তিনি বর্তমান জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার দাদা।


দুষ্প্রাপ্র ছবিতে ১৯৫০ সালের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। (নিচে বসা অবস্থায়) মোহাম্মদ রাজ্জাক, মোহাম্মদ আখরাতুল এবং মোহাম্মদ মর্তুজা।(মাঝখানে চেয়ারে উপবিষ্ট) মোহাম্মদ নাফীস, ইকবাল খান, রাকিব আল হাসান, সাহাদাত হোসাইন এবং নাঈম ইসলাম। (পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায়) সোহরাওয়ার্দী শুভ, মেহরাব হোসেন জুনিয়র, মাহমুদুল্লাহ, কোচ জেমি সিডন্স, মোহাম্মদ রহিম এবং নির্বাচক আকরাম খান।

৮১১১ পঠিত ... ১৩:২৫, মার্চ ০৬, ২০১৬

Top