ক্রিকেট যদি অন্যান্য সরকারি অফিসের কায়দায় চলে, তাহলে যা যা ঘটবে

৫০৮০ পঠিত ... ২২:১৮, মার্চ ০৫, ২০১৬


বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদি সরকারি সংস্থা হয়, তাহলে এর অধীনস্থ ক্রিকেটারদের সরকারি কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীই হওয়ার কথা। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। সরকারি অনেক নিয়মই সেখানে খাটে না। জাতীয় ক্রিকেট দলের অনেক ক্রিকেটারই এখন লাখের ওপর বেতন পাচ্ছেন, ম্যাচ জিতলে গাড়ি-বাড়ি পাচ্ছেন পুরস্কার হিসেবে। যদি ক্রিকেট বোর্ড পুরোপুরি সরকারি কায়দায় চলে, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াতে পারে, চলুন দেখা যাক একনজর: 


ক্রিকেট বোর্ডের জনবল

  • সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে নোয়াখালীতে কর্মরত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিচালককে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
  • কৃষি মন্ত্রণালয়, সড়ক ও রেলপথ বিভাগ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন করে প্রতিনিধি জাতীয় ক্রিকেট দলের মূল নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে যে কোনো ম্যাচে দলের ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করবেন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের একজন সহকারি সচিব।
  • পালাক্রমে দলের কোচ হবেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বনসংরক্ষক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। এছাড়া সরকারের চাহিদামোতাবেক যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়া) উক্ত পদে কাজ করতে বাধ্য থাকবেন।
  • ক্রিকেট বোর্ড শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি হবেন মাশরাফি বিন মোর্তজা এবং সাধারণ সাকিব আল হাসান।


বেতনভাতা

প্রচলিত সরকারি কর্মচারী মজুরি কাঠামো অনুযায়ী ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। তবে দেশের বাইরে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে ক্রিকেটাররা হাতখরচ বাবদ দৈনিক এক হাজার ১২৫ টাকা হারে ভাতা পাবেন। আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতলে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটাররা ৬৮০ টাকা হারে সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত উৎসাহ ভাতা পাবেন।


কোটা সংরক্ষণ

বিশ্বব্যাংক ও নারীবাদী সংগঠনগুলোর অব্যাহত চাপে জাতীয় ক্রিকেট দলের ৩০ ভাগ জায়গা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ এবং উপজাতীয় কোটায় একটি আসন সংরক্ষণ করা হবে।


গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি আইন

  • সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে কোনো ধরনের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে না।
  • যে কোনো ম্যাচের বিরতি চলাকালে মন্ত্রী এবং সরকারদলীয় নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করবেন। এ সময় সকল ক্রিকেটারকে বাধ্যতামূলকভাবে ড্রেসিং রুমে উপস্থিত থেকে বক্তব্য শ্রবণ করতে হবে।
  • ম্যাচ চলাকালে কোনো বোলার কিংবা ব্যাটসম্যান ইনজুরিতে পড়লে ১০ জন নিয়েই খেলতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আদেশ ব্যতিরেকে তার বদলি হিসেবে অন্য কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। ইনজুরি আক্রান্ত ক্রিকেটারকে অবশ্যই দুজন গেজেটেড অফিসারের প্রত্যয়ন ও ১৫০ টাকার স্টাম্পসহ সরকারি নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হবে। ৭২ ঘন্টার মধ্যে একজন সরকারি চিকিৎসক এবং নিকটস্থ থানার একজন উপ-পরিদর্শকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই একজন ক্রিকেটার ইনজুরি আক্রান্ত বলে গণ্য হবেন।
  • ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে যে কোনো ধরনের লাফালাফি, হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি, হাস্যরস ১৯৭৭ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির পরিপন্থী বলে গণ্য হবে। শুধুমাত্র বোলিংয়ের সময় সরকারি বিধিমোতাবেক একটি বিশেষ উচ্চতা পর্যন্ত লাফানো যাবে।
  • ক্রিকেট ম্যাচে আম্পায়ারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের একজন উপ-হিসাবরক্ষক পরীক্ষা করে দেখবেন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত থার্ড আম্পায়ার পর্যন্ত গেলে আইন ও বিচার সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সেটা পুনঃ পর্যালোচনা করবে।

থার্ড আম্পায়ারের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর সরেজমিনে পিচ পরিদর্শন করতে গেলেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ।
উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন

  • কৃচ্ছতা সাধনের লক্ষ্যে প্রচলিত ক্রিকেট বলের পরিবর্তে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা কর্তৃক উদ্ভাবিত বিশেষ পাটজাত বল ব্যবহার করা হবে।
  • কোনো মাসে সরকার যদি ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনে অপারগ, তাহলে শুধু ওই মাসের জন্য নির্ধারিত ক্রিকেট ম্যাচগুলো উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হবে। ইজারাগ্রহীতা দর্শকদের কাছ থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ করবে।
  • ক্রিকেট মাঠে চিয়ারলিডার সরবরাহ এবং বিরতির সময় সঙ্গীত পরিবেশনের দায়িত্ব পাবে যৌথভাবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ঐক্য লীগ/দল।
  • শুধুমাত্র উল্লেখযোগ্য ক্রিকেট রেকর্ডগুলোই পরিসংখ্যান ব্যুরোতে সংরক্ষণ করা হবে অনধিক পাঁচ বছরের জন্য।


অবসর ও পেনশন

নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ক্রিকেটারই ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে পারবেন। তবে সরকার চাইলে অবসরভোগীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে ম্যাচ খেলাতে পারবে। অবসরের পর বিধিমোতাবেক পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন সকলেই।


টিকেট প্রাপ্তিস্থান

ক্রিকেট ম্যাচের টিকেট পাওয়া যাবে শুধুমাত্র বাংলাদেশের ডাকবিভাগের সকল শাখা এবং জীবন বীমা কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে, সকাল সাড়ে দশটা থেকে পৌনে একটার মধ্যে। ওয়েবসাইট, মোবাইল কিংবা সরকারি অনুমোদনহীন কোনো প্রতিষ্ঠান টিকিট বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকলে সেটা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সরকারি গুদামে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেট ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডসমূহ।
টেলিভিশন সম্প্রচার

প্রতিটি ক্রিকেট ম্যাচ বাধ্যতামূলকভাবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনেই প্রদর্শিত হবে, অফপিক আওয়ারে। যদি কোনো ম্যাচ সরাসরি দেখানো হয়ে থাকে, তাহলে বিটিভির সংবাদ এবং নিয়মিত অনুষ্ঠানমালার ফাঁকে ফাঁকেই ওই ম্যাচ প্রদর্শিত হবে যথাসম্ভব।


ঘরের রাজনীতি, বাইরের চাপ

  • সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন দাবির মুখে ৫০ ওভারের ম্যাচ তাদের চাহিদামতো ৩০ ওভার বা তারও কম ওভারে হতে পারবে।
  • বিলাসদ্রব্য ক্রয় খাতে ঋণ দেওয়ার আগে ক্রিকেট বোর্ডকে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তরের জন্য সরকারের ওপর জোর চাপ প্রয়োগ করবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক।


সরকারি সংস্থায় কর্মরত ক্রিকেটারদের অবস্থান

ম্যাচের বাইরে ক্রিকেটারদের যেসব পদে নিয়মিত সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা নিম্নরুপ: 

মাশরাফি বিন মুর্তজা : উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
সাকিব আল হাসান : সিনিয়র হিসাব সহকারী, গণপূর্ত বিভাগ
তামিম ইকবাল : উপ-পরিচালক (যানবাহন), চট্টগ্রাম বন্দর
সৌম্য সরকার : খাদ্য পরিদর্শক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়
মুশফিকুর রহিম : মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য অফিস
মোঃ মিঠুন : উচ্চমান সহকারী, জেলা পশুসম্পদ বিভাগ
মাহমুদউল্লাহ : সহকারী পরিচালক, সমাজ সেবা অধিদপ্তর
নাসির হোসেন : পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
সাব্বির রহমান: সমবায় কর্মকর্তা, জেলা সমবায় অফিস
আরাফাত সানি : হিসাবরক্ষক, জেলা আনসার ও ভিডিপি অফিস
আবু হায়দার রনি : উপ-সহকারী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড
আল-আমিন হোসেন : সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর
তাসকিন আহমেদ: ভান্ডাররক্ষক, সিভিল সার্জনের কার্যালয়
কাজী নুরুল হাসান: রাজস্ব কর্মকর্তা, শুল্ক ও আবগারী কার্যালয়
মোস্তাফিজুর রহমান : সিনিয়র প্রশিক্ষক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর

৫০৮০ পঠিত ... ২২:১৮, মার্চ ০৫, ২০১৬

Top