বেনজীর মিয়া এমনিতে হাড়কিপটে লোক। অফিস ব্রেকে একটি সিগারেট চাইলেও ঠিকঠাক পাওয়া যায় না। কিন্তু আজকের দিকে তার অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখে পুরো অফিস অবাক। বেনজীর অফিসে এসেছেন ৮ প্যাকেট কালোজাম, ৫ হাঁড়ি কুমিল্লার রসমালাই, ৫ হাঁড়ি বগুড়ার দই নিয়ে। ধারণা করা যাচ্ছে, আজ বিশেষ কোনো দিন। কলিগরা মিষ্টি খেয়ে তৃপ্তির সাথে টিস্যুতে মুখ মুছছেন। কারো বেনজীর মিয়ার খুশির পেছনের ঘটনা জানবার আগ্রহ নেই।
চোখে মুখে খুশির হিড়িক দেখে কেউ কেউ যে কৌতূহলো হননি—একথা বললে পুরোপুরি সত্য হবে না। শিমুল উল্লাহ নামের এক কলিগ অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছেন বেনজীরকে। ভদ্রলোকের খুশির কারণ নিরামিষের মতো। হয়তো বাচ্চা হয়েছে, ছেলে-মেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে কিংবা প্রমোশন হয়েছে। ভদ্রলোকের খুশির কারণ জেনে বিশেষ কোনো অনুভূতি হয় না। এসব চিন্তা করেই বেনজীরের খুশির কারণ জানার আগ্রহ হচ্ছে তার।
কিছুক্ষণ তাকে তাকে থাকার পর বেনজীরকে একা পেয়েই খপ করে ধরলেন শিমুল।
'কী বেনজীর, হঠাৎ এতো খুশি! কারণটা কী আমাদেরকেও বলেন। আমরাও খুশি হই’
বেনজীর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে ইতস্তত করলেন।
'ইয়ে..শিমুল আই...সিঙ্গাপুরের ভিসা পাইছি...’
কথা শেষ করতেই ইতস্তত ভঙ্গি কেটে আবার সেই ঝিলিক দেখা গেলো।
এতটুকু বলে ব্রিফকেস থেকে একটা পত্রিকা বের করে রাখলো শিমুক উল্লাহ'র সামনে। বড় বড় করে সেখানে লেখা, 'বেনজীর মিয়ার নামে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলা, গ্রেপ্তার পরোয়ানা জারি হাইকোর্টের... ’
পত্রিকা কিংবা গ্রেপ্তার পরোয়ানা কিছু নেই মাথাব্যথা নেই বেনজীরের।
'বুঝলেন শিমুল ভাই, অনেকদিন আগে সিঙ্গাপুরের ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করছিলাম। পাই নাই। যেই-না দুর্নীতির জন্য ধরা খাইলাম, সাথে সাথে দেখি ভিসা ঘরে আইসা হাজির.. হে হে হে..’
শিমুল উল্লাহ চুপচাপ শুনছেন।
'অবশ্য আমার বউ এখন বলে কয়েক হাজার কোটি টাকা সরাইলে আমেরিকার ভিসা-ই পাইতাম। আমি বলি, হবে, আল্লাহ চাইলে সবই হবে আস্তে ধীরে। ধৈর্য ধরতে হবে। আমার মেয়েরা তো এখনই সিঙ্গাপুরে কোথায় শপিং করবে এইগুলার লিস্টা বানাচ্ছে..হে হে হে। ছেলেমেয়েদের কোনো ধারণাই নাই বাপ মায়ের কত কষ্ট করতে হয় তাদের মুখের হাসি দেখার জন্য...’
শিমুল উল্লাহ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, 'ঠিকই বলছেন'
‘যাক, চলেন ভাই একটা কফি খেয়ে আসি। চাইলে অন্যকিছুও হবে। আজকে বড়ই আনন্দের দিন...’
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন