ইউরোপে রেনেসাঁর পেছনে যে ইলুমিনাতি প্রভাব কাজ করেছে; বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবে তার সংশ্লেষ ছিল কিনা; তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জার্মানির বাভারিয়া অঞ্চলে প্রথম এই ইলুমিনাতি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এই গোপন সমাজ কাজ শুরু করেছিল ১৭৭৬ সালের পয়লা মে। ক্যাথলিক চার্চ এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল; কারণ ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কাজ শেষ পর্যন্ত ধর্মকে এর বিশুদ্ধরুপে বিরাজ করতে সাহায্য করে।
ইউরোপের রাজনীতি ব্যবসায়ী ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইলুমিনাতি আন্দোলনকে নানাভাবে কলঙ্কিত করতে চেষ্টা করে। কারণ ফরাসী বিপ্লবের পেছনে ইলুমিনাতি চিন্তার ভূমিকা রয়েছে বলে রাজনীতি ও ধর্ম ব্যবসার বেনিফিশিয়ারিরা দায়ী করেছিল।
জুলাই বিপ্লবে ব্যবহৃত সংগীত, চিত্রকলা, গ্রাফিতিতে ইলুমিনাতি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী তরুণ-তরুণীদের অধিকাংশের বিতর্ক আন্দোলন ও পাঠ চক্রের যে অভিজ্ঞতা ছিল; ফরাসী বিপ্লবে অংশ গ্রহণকারী তরুণ-তরুণীদের অন্তর্গত আলোকায়ন (ইনার ইলিউমিনেশন) একইভাবে ঘটেছিল।
এই ইলুমিনেশন ঘটলে ব্যক্তি তখন রাষ্ট্রক্ষমতাকে তেলাঞ্জলি দেবার ক্ষমতা হারায়। রাজনৈতিক দলের অন্ধ লেজুড়বৃত্তিকে বুদ্ধিহীনতা বলে মনে করে। এরা যে কোনো মূল্যে একটি ইলুমিনেটেড সমাজ দেখতে চায়। এরা একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠান বিরোধী আবার প্রতিষ্ঠানের ভেতরে প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম।
ইউরোপে যেমন ক্যাথলিক চার্চের সঙ্গে ইলুমিনাতিদের বিরোধ ছিল না; বাংলাদেশেও তেমনি ইলুমিনাতিদের কোনো বিরোধ নেই মসজিদ কিংবা মন্দিরের সঙ্গে।
ইলুমিনাতি আন্দোলন বিভিন্ন সরকারি দায়িত্বশীল পদে, রাজনৈতিক দলে এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিজেদের সদস্যদের অবস্থান করে নিতে অনুপ্রাণিত করে। ইলুমিনাতি শিল্পী-সাহিত্যিকেরা কাজ করেন কল্যাণরাষ্ট্রের ধারণাটিকে জনপ্রিয় করতে। ফলে শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে উপকৃত হন এই আন্দোলনে।
ইলুমিনাতি একটি কনসেপ্ট; এই কনসেপ্ট বিভিন্ন ভৌগলিক বাস্তবতায় নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে গড়ে ওঠে। এই কনসেপ্ট সমাজ ও রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করে। ফলে একে পশ্চিমা কনসেপ্ট বলে গোস্বা করার কোনো কারণ নেই। পশ্চিমের ইলুমিনাতি কোরআন ও গীতা পাঠ করতেন; পূর্বের উল্লেখযোগ্য কবি-সাহিত্যিক ও দার্শনিকদের পাঠ করতেন। এমনকি প্রাচ্যের আধাখ্যাঁচড়া মেট্রোপলিটন সমাজ যে বাউল গান, কীর্তন, কাওয়ালিকে লোকজ কালচার বলে ড্রইং রুম থেকে বের করে দেয়; তার খোঁজে পশ্চিমের অনেক ইলুমিনাতি পূর্বে ভ্রমণ করেছেন।
মধ্যযুগের ইউরোপের চার্চ যেমন নিবর্তনমূলক হয়ে উঠেছিল; সেখান থেকে চার্চকে আজকের আনন্দঘন পরিবেশে রূপান্তরের কাজটি করেছে ইলুমিনাতি চিন্তা। ইলুমিনাতি আন্দোলনটি নানারুপে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই ছিল। সেইসব চিন্তাকে একত্রিত করে বাভারিয়ায় এর একটি সাংগাঠনিক চেহারা দেওয়া হয়। এর ফলাফল ইউরোপীয় রেনেসাঁ।
বাংলাদেশে যারা ধর্মান্ধ ও দলান্ধ; তারা একটি অত্যন্ত অনগ্রসর জীবন যাপন করেন। ফলে জুলাই বিপ্লবে কোত্থেকে কী হয়ে গেল; তা তাদের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব। বিএনপি ও জামায়াতের লোকেরা এই কারণে এই বিপ্লবটিকে এখনও বুঝতে চেষ্টা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেহেতু গোপালগঞ্জের ভিলেজ পলিটিক্সের মধ্যে গোটা পৃথিবীকে দেখে; তাদের ডেড পোয়েটস সোসাইটির আয়নায় সংস্কৃতি দেখে; ফলে তারা চিন্তার অচলায়তনে ঘুরপাক খাওয়া একটি একগুয়ে লোকজ জনগোষ্ঠী। চিন্তার ক্ষেত্রে এদের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষ। যারা ঠিকই জুলাই বিপ্লবে জেগেছিল। তরুণ-তরুণীদের সাহায্য করতে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সক্রিয় ছিল।
জুলাই বিপ্লবকে গান্ধা করে দিতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক গ্রামবাসী প্রতিদিনই কলতলার কাসুন্দি করছে। এমন করে ছাত্র শিবির জুজুর গল্প করছে এজ ইফ, ছাত্রলীগ সাড়ে পনেরো বছর রাক্ষস ছানা হয়ে নিজেদের জাত চিনিয়ে দেয়নি। জামায়াত আর আওয়ামী লীগ; দুটি যুগক্ষণে দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধী দল। অথচ আওয়ামী লীগের খুনীর ভাইয়ের ও বোনের বড় গলা দেখলে বোঝা যায়; নিষ্ঠুরতা ও অনুতাপহীনতায় তারা কীভাবে জামায়াতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এর কারণ হচ্ছে আওয়ামী কাজ করে ৭৪ আইকিউয়ের লোকজন নিয়ে; যারা মূলত খারাপ ছাত্র; পার্টির সিলেবাসের ইতিহাস মুখস্থ করে কলতলা মাতানো লোকজন।
এ কারণে তাদের কিউ দিলাম। যান এবার জুলাই বিপ্লবে ইলুমিনাতির প্রভাব খুঁজে বের করে, আর্কিমিডিসের মতো, ইউরেকা ইউরেকা বলে দৌড় দেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন