ছাত্রলীগের বাবলু হঠাৎ ফেসবুকে নিজেকে ছাত্রশিবিরের আল বাবলু হিসেবে দাবি করে স্ট্যাটাস দেয়। পুরো ইউনিভার্সিটি লাইফটা ছাত্রলীগের সোনার ছেলে হিসেবে ক্যাম্পাসে বিরাজ করেছে বাবলু। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে সাদ্দাম ভাইয়ের আশেপাশে পিছে সেলফিতে সভায় বাবলু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিক্ষাদানকারী অবাক বালক হয়ে ঘুরেছে। চেতনা শিক্ষায় বাবলুর দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে সাদ্দাম ভাই হলে সিট ম্যানেজ করে দিয়েছে। ছাত্রলীগের সৈনিক হিসেবে দীপুমণির হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছে। কাভার পিকে সেই ছবি দিলে হোয়াটস অ্যাপে মুগ্ধতা জানিয়ে দুটি লাইন লিখেছে ফারজানা অনন্যা।
ফারজানা অনন্যা আওয়ামী লীগের কালচারাল এলিটের সাজ পোশাকটি রপ্ত করে; হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির দায় নিয়ে অভিমানী চেহারা নিয়ে ঘুরত স্বোপার্জিত স্বাধীনতার সামনে। ডাসে মিষ্টি লাচ্ছির স্ট্রতে ঠোঁট ফুলিয়ে বাবলুকে বলত, দলে দলে হিজাব পরা মেয়েদের দেখলে মনে হয়; দেশে তা-লে-বা-নি শাসন চলছে।
বাবলু তখন ততধিক রেগে গিয়ে বলত, যতদিন বুবুর হাতে বাংলাদেশ ততদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ। আমার মাটি আমার মা আফঘানিস্তান হবে না।
ফারজানা অনন্যার বাবা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পে দুই পয়সা কামিয়ে লালে লাল দুনিয়া করে ফেলেছে। বাবলুকে দেখে তার পছন্দ হয়; ছাত্র ভালো; আবার ছাত্রলীগ করে; সুতরাং এ ছেলে বড় হলে সেলিম মাহমুদ ভাইয়ের মতো এনার্জি উপদেষ্টা হয়ে বিদেশী দূতাবাসে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হবে। বুবুর কাছে কদর পাবে বাবলু।
সেই বাবলু শিবিরের আল বাবলু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে; ফারজানা অনন্যা স্তম্ভিত হয়ে যায়। মন খারাপ করে রবীন্দ্র সংগীত শোনে। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে। যে ছেলে এত বছর নিজের পরিচয় গোপন করতে পারে; তাকে আর কী করে বিশ্বাস করে।
আওয়ামী লীগের ফেমিনিস্ট পারমিতা কৈকেয়ী দিদি ফারজানাকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে যায়। ডিপ্রেশন সরাতে আইসক্রিম খুব কার্যকর। পারমিতার বান্ধবী ললিতা আপা বুদ্ধি দেয়, মুখে ঠান্ডা দুধ নিয়ে বসে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মুভ অন করতে পারবে। তুমি শুধু আল বাবলুর স্ক্রিনশট ফাঁস করে ওকে গান্ধা করে দাও। বাপরে বাপরে আল বাবলু দেখি মোসাদের চেয়ে বড় অপারেটিভ।
ফারজানা বাসায় ফিরে দেখে ওর বাবা মাথায় টুপি দিয়ে বসে। ড্রইং রুমে ধর্মালোচনা চলছে। অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পের মাধ্যমে এবার সহি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিবর্তে সহি ইসলামি চেতনার প্রচার কীভাবে হতে পারে তা নিয়ে বিদগ্ধ আলাপ চলছে।
ফারজানা তার মা আকলিমা নদীর কাছে গেলে দেখে; তিনি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির পোশাক ফেলে তুরস্কের এর্তুগ্রুল নাটকের পোশাক পরে ড্রইং রুমে ফলের রস ও খেজুর পাঠানোর তোড়জোর করছেন।
: এসব কী হচ্ছে মা!
: তোমার আব্বা জামাতের রুকন; এতদিন যুবলীগের সদস্য হিসেবে কাজ করেছে। ব্যবসা করতে গেলে টিকে থাকতে গেলে; বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আর জামায়াত এই দুটি দল ঘুরে ফিরে করতে হয় মা। জামায়াতের আমীর সাহেবও দেখবে ১৯৭০-এর নির্বাচনে নৌকা মার্কার জন্য পোস্টার হাতে লিখেছিলেন। এখন ক্যালিগ্রাফিতে দাঁড়িপাল্লা আঁকছেন। যাও মা মাথায় ও-তে ওড়না দিয়ে অতিথিদের জুস দিয়ে এস!
ফারজানা ঘরের দরজা দুম করে বন্ধ করে দিয়ে শাবানার মতো কাঁদতে থাকে। হোয়াটস অ্যাপে আওয়ামী লীগের ফেমিনিস্ট আপারা আল-বাবলুর স্ক্রিনশট ফাঁসের জন্য চাপ দিতে থাকে।
শাহবাগে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে বাবলুর মুখোশ খুলে দিতে পরামর্শ রাখে পারমিতা কৈকেয়ী। কিন্তু ফারজানা অনন্যা বুঝতে পারে না; এখন সে কী করবে! সাড়ে পনেরো বছর ধরে বাবাকে, চার বছর ধরে বাবলুকে আওয়ামী লীগের সৈনিক হিসেবে দেখে; আজ এসব কী দেখছে! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না।
অতিথিরা চলে গেলে অনন্যা বাবাকে গিয়ে চার্জ করে, বাবা লীগের সঙ্গে এত বড় প্রতারণা করে তুমি একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধীদের সঙ্গে হাত মেলালে।
: একাত্তরের প্রশ্নের উত্তরের দিকে যাব না; আমি ফরওয়ার্ড লুকিং মানুষ; ২০২৪-এর মানবতাবিরোধী অপরাধী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে দেশে টিকে থাকা যাবে না মা!
এমন সময় আকলিমা নদী ফেসবুক ব্রাউজিং-এর সময় মাধুরীর নাচের রিলের গান বেজে ওঠে, চোলিকে পিছে কিয়া হ্যায়!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন