ইদে কিংবা যে কোনো পারিবারিক মিলনমেলায় মুরব্বিদের বিরক্তিকর প্রশ্নগুলো যেভাবে এড়াবেন

৩৬০০ পঠিত ... ১৪:৩৭, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৭

কোনো একটা উৎসব-উপলক্ষে ছুটি-ছাটা থাকলেই গেট টুগেদারের আমন্ত্রণে বিনা-বাক্যব্যয়ে হ্যাঁ বলে দেয়া যায়। একে তো আড্ডার সুবর্ণ সুযোগ, তার ওপরে ফ্রি খাবার দাবার! বোনাস হিসেবে কিছু ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পাওয়ার সুব্যবস্থা তো আছেই। কিন্তু, যদি সেটা ফ্যামিলি গেট টুগেদার হয়? তবেই সেরেছে!

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

একবার গিয়েছি এক জন্মদিনের দাওয়াতে। কোনো এক 'লতায়-পাতায়' আত্মীয়া ছোট বোনকে বললাম, 'একটু পানি এনে দাও না?' সে মুখের উপর না করে দিয়ে বললো, 'ওই যে দেখো, খাবার টেবিলের ওখানে বড় চাচা দাড়িয়ে। গেলেই আমার পরীক্ষার রেজাল্ট জিজ্ঞেস করবে।' রেজাল্ট বলতে গিয়ে ওর রেজাল্ট কী হবে ভেবে আর ওকে ঘাটালাম না। পাশেই ওর বড় বোন দাঁড়িয়ে। ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, ‘তোমারও কি রেজাল্ট সমস্যা?’ সে বিরস গলায় জানালো, তার ফোন ‘সিজ’ করার ঘটনাটা চাচা মনে করিয়ে দিতে পারেন। কাজেই ওখানে গেলে তার রেজাল্টও ভালো হবে না।

আতঙ্কের বিষয়ের তালিকায় তাই ফ্যামিলি গেট টুগেদারকে নির্দ্বিধায় ফেলে দেয়া যায়। ইদ, জন্মদিন, বিয়ে- উপলক্ষ যা-ই হোক না কেন, সে সব নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা না হলেও কিছু কমন প্রশ্ন থাকবেই। প্রশ্ন কমন পড়লেও, উত্তর আপনার কাছে ‘চারশ চার: নট ফাউন্ড’! প্রশ্নের নমুনা:

‘পরীক্ষার রেজাল্ট কী, হ্যা?’ (সঙ্গে ‘আমাদের সময় আমরা চার মাইল হেটে পড়াশুনা করতাম’ মূলক গল্প একদম ফ্রি!)
‘এ মা! এতো কালো হয়ে গেছো কীভাবে?’ (‘ভাবী জানেন’ গ্রুপের ‘শুকনা-মোটা-লম্বা-খাটো’ সংক্রান্ত সিরিজ প্রশ্ন।)
‘বিয়ে-টিয়ের পরিকল্পনা কতদূর?’ (সময় গেলে সাধন হবে না ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক)
‘প্রেম করো?’ (‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ ছবির রেফারেন্সসহ পরামর্শ)

ছবি: বিবিসি নিউজ

তবে হ্যা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম থাকে। কোনো কোনো পরিবারে এসব প্রশ্ন করা এক ধরনের রীতি-নীতি, খোঁজ নেবার অংশ মনে করে। সম্পর্কের ঘণিষ্ঠতা বুঝে কিংবা সম্পর্ক আরো ভালো করতে কেউ কেউ এসব প্রশ্ন করেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই এ ধরণের প্রশ্ন অন্যকে বিব্রত করে। এর মাঝে আপনার মা আপনি যে সবকিছুতে 'টপার', সেগুলো নিয়ে আত্মীয়দের কাছে গল্প করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে আরও ভয়াবহ সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে!

বিব্রতকর প্রশ্নগুলো যেহেতু প্রায় পরিচিত, কাজেই এর উত্তর কেমন হবে তাও ভেবে রাখা জরুরি। উত্তর যেমন হতে পারে-

মাঝামাঝি উত্তর
বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল নাটকের দৃশ্য। বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলেটি বুয়াকে প্রশ্ন করছে, ‘আচ্ছা বুয়া, মিথ্যা বললে কী শাস্তি হওয়া উচিৎ?’ বুয়া ঝটপট উত্তর দিল, ‘কোনো শাস্তিই হওয়া উচিৎ না। জীবনে কত মিথ্যা বলসি, শাস্তি হইলে উপায় আছে? এই যে একটু আগে একটা ফুলদানি ভাঙছি, তোমার আম্মাকে সত্য বললে উপায় থাকবে?’ 

-তাহলে কি মিথ্যা বলবে?
-মিথ্যাও বলবো না সত্যও বলবো না। মাঝামাঝি বলবো।
একটু পর ছেলের মা এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘বুয়া, ফুলদানিটা ভাঙা কেন? তুমি ভেঙেছো?’ বুয়া মাঝামাঝি উত্তর দিল, ‘আচ্ছা আপা, এই বাসায় কিছু একটা হলেই আপনার আমার কথা মনে হয় কেন? ঘরে কি আর কেউ নাই?’
বিব্রতকর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে আপনি এ রকম মাঝামাঝি উত্তরকে বেছে নিতে পারেন। ঠিক হ্যাঁ-ও বলবেন না, না-ও বলবেন না, কিছু একটা উত্তর দিতে হয় তাই দিয়ে দিলেন আর কি!

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক
চাপাবাজি করুন
সব প্রশ্নের পজিটিভ উত্তর দেবেন। আপনি আসলে কী করেন, কেমন করেন, আত্মীয় স্বজন তো আর জানছে না। পারিবারিক মিলনমেলায় আপনি বনে যান হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভালো ছেলে অথবা ভালো মেয়ে! প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্নকর্তা যা শুনতে চায়, তাই বলুন!

হাসি উত্তর
খুবই রহস্যময় হাসি দিন। এর উত্তরে কী বোঝাতে চাচ্ছেন তা যেন স্পষ্ট না হয়। প্রশ্নকর্তাকে দ্বিধান্বিত করে ফেলুন।

সত্যবচন
অথবা সবচেয়ে ভালো হয়, ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’ নীতিতে সত্যি কথাটাই বলে দিলে। যতটা সহজ করে বলা যায় সেভাবেই বলুন। চাইলে নিরুত্তরও থাকতে পারেন। উত্তর দিতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।

তবে আপনি নিজেই যদি প্রশ্নকর্তা হন, তবে প্রশ্ন করার সময় খেয়াল রাখুন। প্রথমেই বয়স অনুযায়ী ভাগ করে নিন, কী প্রশ্ন করবেন। যে প্রশ্নে নিজে বিব্রত হন, সেরকম প্রশ্ন অন্যকে করবেন না। যাকে প্রশ্ন করছেন, সে উত্তর না দিতে চাইলে, প্রসঙ্গ বদলে ফেলুন। যে উপলক্ষে গেট টুগেদার, তা নিয়ে আলোচনা করুন। অন্যের পছন্দ অপছন্দের বিষয়গুলো জানতে চান এবং তা নিয়ে প্রশ্ন করুন। অহেতুক রাজনীতি থেকে ইতিহাস, কিংবা ‘আমরা কি তিস্তার পানি পাবো?’ মূলক প্রশ্ন করবেন না।
সর্বোপরি, ফ্যামিলি গেট টুগেদারকে আতঙ্কের বিষয় থেকে আবার আড্ডার বিষয়ে রূপান্তর করতে এগিয়ে আসুন।

৩৬০০ পঠিত ... ১৪:৩৭, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৭

Top