পিএসসির প্রশ্নফাঁসের জন্য দায়ী আসলে কী?

২৮১ পঠিত ... ১৮:১০, জুলাই ০৮, ২০২৪

37

দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান পিএসসির প্রশ্নফাঁসের খবরে সাধারণ মানুষ চমকে চমকে ওঠে। যে সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য ভেবে এতদিন তারা বাচ্চাদের বিসিএস গাইড বুক কিনে দিয়েছে প্রায় ছোটোবেলাতেই; সেই চাকরিতে এত বড় ঘাপলা! একটি টিভি চ্যানেলে পিএসসির প্রশ্নফাঁসের প্রতিবেদনটি প্রচারের বেদনা প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে জাতিকে ক্লিষ্ট করে। নির্ঘুম রাতে কষ্টে কষ্টে প্রায় ত্যানা হয়ে যান বিসিএস ইচ্ছুক ছেলেমেয়েদের অভিভাবকমণ্ডলী।

জাতিকে আলোর পথ দেখাতে তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা; এ নিয়ে খোঁচাখুঁচি দরকার নাই।

এসময় জগলু ফেসবুকে এসে কুঁচ কুঁচ করে বলে, মনে কয় পিটার হাস ফাঁসকরা প্রশ্নপত্রের অফিসার! আম্রিকাতেও এইকাজ হয় সরকারি নিয়োগে।

জগাই গালে সুপোরী পুরে ভস ভস করে বলে, বৃটেনে সেইকালে প্রশ্ফাঁসের মাধ্যমে সিভিল সার্ভেন্ট নিয়োগ করত। যারা প্রশ্নফাঁসের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হতে পারবে; তারাই দুর্নীতি করে টাকা পাচার করতে পারবে; এটাই ছিল তাদের রিক্রুটমেন্ট পলিসি!

শ্রীখণ্ডের সাধারণ লোকেরা পিএসসির প্রশ্নফাঁস নিয়ে ফেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু নির্ঘুম রাত কাটে পথিকৃত বাতেন ও ভজহরি দাসের। তারা পিএসসির প্রশ্নফাঁসের স্ক্যান্ডালটা যাতে কোনোভাবেই ক্ষমতা মঞ্জিল স্পর্শ করতে না পারে; তাই ‘কেষ্টা ব্যাটাই চোর’ থিওরি অনুযায়ী পিএসসির কেষ্টা ব্যাটাকে খুঁজে বের করে।

কেষ্টা ব্যাটার ছেলের ফেসবুক আইডিতে তার বাপের ছবি পাওয়া যায় ক্ষমতা খোদা, ভাতের হোটেল, আয়নাঘর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বেনজীরদের সঙ্গে।

বাতেন বলে, এগুলো ভীষণ প্রগতিশীল ছবি হয়ে যায় যে হরি!

হরি উত্তর দেয়, আমি এ প্রসঙ্গে কিছু বলব না বাতেন; তুমিই একটা সিদ্ধান্ত দাও।

জগলু ইনবক্সে কেষ্টা ব্যাটার নামাজের ছবি, মসজিদের দরোজা বানিয়ে দেওয়ার স্টোরি; আর লোকজনকে ওমরাহ করিয়ে আনার স্টোরি খুঁজে বের করে।

ফাটল ভৌমিক বলে, লোকটাকে তো স্পষ্টতই বিএনপি-জামাত, বিহারি বা রোহিঙ্গা মনে হয়। সে তো বাঙ্গালিই নয়;বাংলায় অনুপ্রবেশকারি।

কয়েক ঘণ্টার মেধাঝড় বা ব্রেনস্টর্মিঙে এটা বেরিয়ে আসে, পিএসসির প্রশ্নফাঁসের জন্য দায়ী একমাত্র নামাজ ও হজ্ব। সিস্টেমের এখানে কোনো দোষ নেই। লোকটা সিস্টেমে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী।

পিএসসির মতো স্পর্শকাতর একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নফাঁসের দায়ে, একজন কেষ্টা ব্যাটা ড্রাইভার বা পিয়নকে ট্রল করে ক্ষোভ প্রশমন প্রক্রিয়াকে বলা হয়; জগলু-জগাইয়ের দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।

এর আগে মহাত্মন আজিজ, বেনজীর, মতিউরের হজ্বের ছবি দেওয়ায় এটা খুব স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়ে গেছে; দুর্নীতি-লুণ্ঠন-টাকাপাচারের জন্য দায়ী হজ্বব্রত পালন। সিস্টেমের কোনো দোষ নাই। যদিও সিস্টেমের কাছ থেকে শুদ্ধাচার পুরস্কার নেবার ও দাঁত কেলিয়ে তেলাঞ্জলি দেবার ছবি ছিল তাদের; কিন্তু সেগুলো বড্ড প্রগতিশীল ছবি হয়ে যায়। বরং হজ্বের মৌলবাদি ছবিটা লোকে বেশি খেয়েছে; বিশেষত রাজউকের খালের ধারায় বসে যারা রবীন্দ্র-নজরুল সংগীত শুনে আহাউহু করে; কিংবা চারটে ইংরেজি বইয়ের প্রচ্ছদ আপলোড করে ফেসবুকে স্যাপিও সেক্সশুয়াল হতে চায়। লম্বা চুলের বাবরি দুলিয়ে বিদগ্ধ চোখে তাকিয়ে ‘এই পৃথিবীর সমস্ত জঞ্জাল’ সরানোর পণ করে প্রতিদিন; বৃষ্টি এলেই যারা গেয়ে ওঠে, রিমঝিম বরষাতে বৃষ্টিকন্যা তুমি এলে।

সেন্টার ফর রুথলেস ইনটেলিজেন্স (ক্রাই) হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে পিএসসির কেষ্টা ব্যাটার নামাজ পড়ার ছবিগুলো সার্কুলেট করে। ‘ক্ষমতায় যেন বিএনপি-জামায়াত’, ‘রুখতে হবে জঙ্গীবাদ’ অ্যাম্বিয়ান্স চলে আসে। তখন আর প্রশ্নফাঁস নিয়ে ফেসবুক পোস্ট দিলে ক্ষতি নেই। বিবেকের শীতকারও প্রকাশ করা গেল; আবার প্রশ্নফাঁসের দোষটা ধর্মান্ধের ঘাড়ে দিয়ে দেয়া গেল।

দলান্ধরা তখন পিএসসির প্রশ্নফাঁসের ইস্যুটাকে ‘বিশুদ্ধ প্রগতিশীলতা আন্দোলন’-এর স্পিরিটে নিয়ে যায়। এনলাইটেনমেন্টের গন্ধে মৌ মৌ করতে থাকে ফেসবুক। সাক্ষাৎ বারট্রান্ড রাসেল, শার্ল বোদলেয়ার হয়ে আজিকার ইউভাল নোয়াহ হারারি ফেসবুকে এসে রেগে রেগে ওঠে, এই ড্রাইভার-পিয়নগুলোই বিশুদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেষ করে দিল। তিনি একা আর কত দিকে দেখবেন!  

২৮১ পঠিত ... ১৮:১০, জুলাই ০৮, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top