আয়েশের আশায় বিয়ে করে এখন আমি যেমন আয়েশে আছি

২০০৫ পঠিত ... ১৯:২৬, আগস্ট ২৬, ২০১৯

শুনুন সকলে! আমি অবশেষে বিয়ে করেছি। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম ব্যাচেলর থাকতে থাকতে। একটু পারিবারিক উষ্ণতা, নিস্তব্ধতা আর আয়েশের জন্য প্রাণ আঁকুপাঁকু করছিল।

জানেন, একাকী জীবনে সত্যিই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পড়েছিল মারিয়াও। আমার জীবনযাপনের ধরনটা ছিল যাচ্ছেতাই! সবকিছু এলোমেলো, ছড়ানো-ছিটানো, ওলট-পালট। একেবারে টিপিক্যাল ব্যাচেলর। আর ওর, অর্থাৎ আমার মারিয়ার, ঘরদোর সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, গোছানো। মিথ্যা বলব না, দেখে আমার শখ জাগলো ও রকম জীবনযাপনের।

আমার সঙ্গে বাস করতে শুরু করেই আমার ব্যাচেলরসুলভ ঘরের গোছগাছ আর ধোয়ামোছা নিয়ে পড়ল মারিয়া। তবে খুব দ্রুত সে সফল হতে পারল, সেটা বলব না। তার লক্ষ্য সাধনে যখন-তখন বাগড়া দিলাম আমি। যেমন ঘরে ঢোকার সময় পা মুছতে ভুলে যাই।

‘আবার নোংরা নিয়ে ঘরে ঢুকেছ!’ মারিয়া ভারি রাগ করে।

প্রথম দিকে শুধু অভিযোগ করতো। পরে সরাসরি ও কঠোরভাবে বলতে শুরু করল, ‘পা মুছতে কখনো শিখবে বলে মনে হয় না। তাই পইপই করে বলে রাখি, জুতো বাইরে খুলে রেখে আসবে।’

কী আর করা! জুতো খুলে ঘরে ঢোকায় অভ্যস্ত হতে হলো। কিন্তু আমার বন্ধুরা অভ্যস্ত হতে পারল না কিছুতেই।

‘এভাবে আর সম্ভব নয়,’ মারিয়া কঠিন স্বরে অনুযোগ করে বলল একদিন। ‘তোমার বন্ধুরা আবার ঘরের মেঝে নোংরা করে দিয়ে গেছে। তুমি ওদের ডাকো কেন?’
ওদের আর ডাকি না। তাই বলে যে আমার জীবন সহজতর হয়ে উঠল, তা কিন্তু নয়।

অফিস শেষে বাসায় ফিরে ডিভানে একটু কাত হতে না-হতেই মারিয়ার চিৎকার, ‘জায়গা পেলেই শুয়ে পড়তে হবে? দেখছ না, ঝেড়েমুছে টিপটপ করে রেখেছি? ওখানে শুলে কাভারটা কুঁচকে যাবে না! ওঠো বলছি!’

ডিভান থেকে উঠে শুয়ে পড়লাম খাটে।

‘তোমার মাথায় কি ঘিলু বলে কিছু নেই? কত খাটনি করে সব পরিষ্কার করেছি, বদলেছি বিছানার চাদর। আর তুমি দিব্যি শুয়ে পড়লে!’
উঠে গিয়ে বসলাম আর্মচেয়ারে।

‘আর বসার জায়গা পেলে না? ওই শরীর নিয়ে ওটা ভেঙে ফেলবে তো!’

বাধ্য হয়ে হাঁটু ভাঁজ করে মেঝের ওপরে বসা শিখে নিয়েছি। প্রাচ্যীয় ধাঁচে। আমার কিন্তু বেশ লাগে। কিন্তু স্ত্রীর সেটা পছন্দ নয়।

‘একেবারে ঘরের মাঝখানে গেড়ে বসেছ!’ গজগজ করে বলে সে। ‘ঘরে নড়াচড়ার উপায়ও নেই।’ বলে যোগ করে, ‘কেন যে গাধার মতো তোমাকে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম!’

আর সহ্য হলো না আমার। থাকতে শুরু করলাম মুরগির ঘরে। এখানে সব সুযোগ-সুবিধা আছে আমার। সব এলোমেলো, ছড়ানো-ছিটানো, যেখানে খুশি বসো, শোও, পা মুছো না হাজার বছর...

আমার স্ত্রীও খুশি। এখন সে বলে, ‘অবশেষে ঘরদোর আমার ছিমছাম, পরিষ্কার, গোছানো।’

২০০৫ পঠিত ... ১৯:২৬, আগস্ট ২৬, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top