আইনস্টাইন দেবুদাকে তার বাসায় ডেকে পাঠান। খুবই জরুরি বিষয়ে কোন আলাপ আছে।
দেবুদা চুনিলালের ট্যার্সিতে দ্রুত চলে যান। দেখেন গণ্যমান্য সবাই উপস্থিত।
সত্যজিৎ রায়কে এই প্রথম একটু নার্ভাস দেখাচ্ছে। গান্ধীজী সোফার ওপর শুয়ে।
রবীন্দ্রনাথ অন্য দিনের চেয়ে আজ একটু বেশি ভাবুক। শেরে বাংলা ক্রুদ্ধ।
সুভাষ বোস দেবুদাকে বলেন, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন পরামর্শ রেখেছেন নতুন আবিষ্কৃত গ্রহ আর্থ টু পয়েন্ট ও-তে স্বর্গ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষদের সরিয়ে নেয়া যায় কীনা । শুধু গোবরডাঙ্গার সাধুবাবা এন্ড গং, শেয়ালনগরের পীরবাবা এন্ড গং আর সেন্টিমেন্ট
ক্যাসিনো গ্যাংংকে আমরা রেখে যেতে পারি এখানে ।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ভাই দেবু আপনি যদি একটু সেখানে যান ওদের সমাজটাকে কাছ থেকে দেখেন; ওদের সঙ্গে আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব কীনা দেখেন; তাহলে আমরা বিজ্ঞানী মহাশয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুতে পারি।
দেবুদা বলে, ঠিক আছে আমি আর চুনিদা গিয়ে ঘুরে আসতে পারি।
গান্ধীজী আনন্দে উঠে বসেন। রবীন্দ্রনাথ মুচকি হেসে বলেন,
ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই
ছোট সে স্বর্গতরী
গবাদি পশুতে গিয়াছে ভরি।
দেবুদা বেহেশত কর্তৃপক্ষের স্পেশাল শাটলে চড়ে আর্থ টু পয়েন্ট ও'র
উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। চুনিলাল অনেকদিন পর প্রাণভরে হোমিওপ্যাথি পরিষেবারট আনন্দে টিপসী।
দেবুদা বলে, আনাকে নিয়ে এলেও পারতাম।
চুনিলাল অট্টহাসি দিয়ে বলে, পিছুটান রাখতে নেই; আর্থ টু পয়েন্ট ও-তে যদি নতুন কারো সঙ্গে দেখা হয়ে যায়।
-চুনিদা ওখানে আমরা মাস্তি করতে যাচ্ছি না। সামাজিক গবেষণা করতে যাচ্ছি। একটু সিরিয়াস হোন।
চুনিলাল মুখখানা সিরিয়াস করে পাঁড় বুদ্ধিজীবীর মত ভঙ্গী করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে। যেন সেমিনারে বসে আছে।
আর্থ টু পয়েন্ট ও-র একজন লেখিকা দেবুদাকে রিসিভ করেন শাটল স্টেশানে।
চুনিলাল দেবুদার দিকে তাকিয়ে বলে,
: এই সেরেচে!
দেবুদা সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকায়। নিজের মনকেও বোঝায় এটা একটা সিরিয়াস এসাইনমেন্ট। এখানে কোন চটুল চিন্তা মাথায় প্রশ্রয় দেয়া ঠিক নয়।
লেখিকা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের "আর্থ টু পয়েন্ট ও" দেখতে পাওয়ার খবর চাউর হবার পর সেখানে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। পৃথিবী খুব খারাপ জায়গা; সেখানে হিংস্র উপমানবের বসবাস। এরা পৃথিবীর প্রকৃতি বিনাশ করেছে; আর উপমানবদের নিজেদের খুনোখুনি তো লেগেই আছে। এই দস্যুগুলো যদি কলম্বাসের মতো এসে আর্থ টু পয়েন্ট ও জবর দখল করে; সর্বনাশ হয়ে যাবে শান্তি গ্রহটির। পৃথিবীর অপরাধীগুলো এসে পৌঁছানো মানেই মুসোলিনি, হিটলার, বুশ, লাদেন ইত্যাদি নানা রঙের খুনীতে শান্তি গ্রহটি রঞ্জিত হওয়া।
দেবুদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
আমি যেখানেই যাই, আমার কেবল রাত হয়ে যায়....
লেখিকা বলে, অতো হতাশ হচ্ছো ক্যানো! তোমাদের মত শান্তিপ্রিয় মানুষেরা এলে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই । চলো তোমাকে আজকের জরুরি বৈঠকে নিয়ে যাই।
: চলো।
চুনিলালের পা টলছে।
দেবুদা লেখিকাকে বলে, সরি আমার বন্ধু একটু টিপসী।
: কোন অসুবিধা নেই । আমাদের এ সমাজে কেউ কাউকে জাজ করে না। এসো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
শান্তিগ্রহের গার্ডিয়ান এনজেল পর্ষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। পর্ষদ
আচার্য ট্রুথ এনজেল গভীর বিষাদের সঙ্গেই বলেন,
: এতোদিন ছিলাম ভালোই । মাঝে মাঝে ইউএফও পাঠিয়ে ওদের সমাজটাকে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। এলিয়েনরা যে খবর দিয়েছে তা ভয়াবহ। পৃথিবীর মানুষ কাম-ক্রোধ -লোভ হিংসা -মোহ -মাতসর্য্য এসবের পাঁকে পুতে আছে। ওরা এক একট চলন্ত ভাইরাস। এখন তারা আমাদের এই শান্তিগ্রহের খবর পেয়ে গেছে। ১৪০০ আলোকবর্ষ এমন কোন দূরত্ব নয়। গভীর রাতে বাগদাদে হানা দেয়ার মতো এখানেও তারা হানা দেবে। যেহেতু এমেরিকা মিথ্যার রাজা; হোয়াইট হাউজের লাস্যময়ী মুখপাত্রী ঠোঁটে লাল লিপস্টিক মেরে নখরা করে মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে দেবে, আর্থ টু পয়েন্ট ও-তে মানববিনাশী মারণাস্ত্র আছে। অথচ আমাদের এ গ্রহে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নেই।
পর্ষদ উপাচার্য বিউটি এনজেল বলেন, ওরা দ্রুত নিজেদের একটা ন্যারেটিভ বানিয়ে ফেলে । আমাদের শান্তিগ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ৬০ শতাংশ বড়; ওরা পট করে আমাদের গ্রহের নাম বলে দিলো, আর্থ টু পয়েন্ট ও। আসলে তো আমরাই আর্থ ওয়ান পয়েন্ট ও। পৃথিবী দুই নাম্বার লোকে ভর্তি; ওদের বসতবাড়ির নাম হওয়া উচিত আর্থ টু পয়েন্ট ও।
আচার্য বলেন, ওরা হয়তো ফিউচারিস্টিক অর্থে আমাদের শান্তি গ্রহটিকে আর্থ টু পয়েন্ট ও বলছে।
উপাচার্য বলেন, এখানে নেক্সট জেনারেশান হাউজিং স্টেট বানানোর নীল-নক্সা আর কী! ইটের পর ইট মাঝে মানব কীট বানাতে চায় এ জায়গাটাতে।
উপ-উপাচার্য গুডনেস এনজেল বলেন, ওদের মানুষ বেড়েছে, সম্পদ কমেছে, অক্সিজেন নেই, পানি নেই, প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে কামড়াকামড়ি করছে। অভাবের তাড়নায় ওরা করতে পারেনা এমন কিছুই নেই। নিজের মায়ের কিডনি বেচে দেয়া বা তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা রাক্ষস ওরা।
বিজ্ঞানাচার্য লজিক এনজেল বলেন, ওরা বিজ্ঞানটাকে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে আর প্রকৃতি বিনাশে কাজে লাগিয়েছে। আমরা গড়েছি সবুজ গ্রহ। ওরা আজ যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির গপ্পো দিচ্ছে; সৌর শক্তি-বায়ু শক্তি সেগুলো তো আমাদের সতত জীবনচর্যা। আমরা হয়তো অস্ত্র না বানিয়ে ভুলই করেছি। সামরিক বাহিনী না গড়াটাও বাস্তবসম্মত হয়নি।
উপাচার্য বলেন, কে জানতো মহাবিশ্বের সবচেয়ে কদর্য গ্রহের হিংস্র উপমানবগুলো আমাদের এই শান্তিগ্রহের খোঁজ পেয়ে যাবে!
নৈতিকতাচার্য বলেন, ওরা আসা মানেই সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের জীবন ধর্ম ফেলে বিশ্বাস-অবিশ্বাসীর অন্তহীন চাপাতি ও গালাগাল অশ্লীলতা । সমস্যা হচ্ছে নিরন্ন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়ার চেয়ে বিমূর্ত বিতর্কে অশান্তি সৃষ্টি এদের মজ্জাগত। একদল অন্ধ বিশ্বাসের রোগী; আরেকদল অজ্ঞেয়কে অস্বীকার করা বেশি বোঝা রোগী ।
উপাচার্য জিজ্ঞেস করেন, আমাদের এলিয়েনরা পৃথিবী থেকে যে কটি বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী উপমানব নমুনা এনেছিলো তাদের আপডেট কী? এ সবুজ সমাজে কি তারা আত্মীকৃত হতে পেরেছে?
নৈতিকতাচার্য বলেন, আত্মীকৃত হতেই পারেনি । বরং এক একজন একটা করে মাজার-আখড়া-ফ্যানক্লাৰ খুলে গুরু" ব্যবসা শুরু করেছিলো । আমরা তাদের সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রে রেখেছি। শীঘ্রই পৃথিবীতে ফেরত দিয়ে আসা হবে এসব নমুনা ।
দেবুদা দুঃখ করে বলেন, এই ঝামেলাগুলোর কারণে তো আমরা বেহেশতেও শান্তি পেলাম না। আবার আপনাদের এখানেও একই আপদ। তাড়াতাড়ি বিদায় করুন নৈতিকাচার্য মহাশয় ।
উপাচার্যের কপালে চিন্তার রেখা। সম্মেলন কক্ষের ভেতরে বাইরে শাস্তিগ্রহের সবুজ মানুষেরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। তাদের প্রশ্ন, পৃথিবী নামের রাক্ষস গ্রহের উপমানবদের হাত থেকে আমরা কী করে বাঁচবো। অনেকের চোখেই সবুজ অশ্রু। প্রেমিকেরা আলতো
করে প্রেমিকার কপালে চুমু খায়। কে জানে পৃথিবীর রাক্ষসেরা এলে নিয়ম করে দেবে, প্রকাশ্যে ধর্ষণ করা ঘাবে, খুন করা যাবে; কিন্ত চুম্বন দেয়া যাবে না।
বিদ্যাচার্য বলেন, ওদের লু্ন্ঠনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাটা ওদের পরের ধনে পোদ্দারি করতে শেখায়; যেহেতু ওরা বুঝেছে আমাদের সম্পদের কমতি নেই, পার্থিব মোহ নেই, পুঁজিবাদী আত্মকেন্দ্রিকতা নেই, ধনী-গরীবের ব্যবধান নেই; এখন এই শান্তি গ্রহের কীভাবে বারোটা বাজানো যায় সে চেষ্টাই করবে অপগণ্ডগুলো।
বিজ্ঞানাচার্য বলেন, আমাদের এখানে পৃথিবীর দ্বিগুণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে; ওরা এখানে টিকতে পারবে না। কারণ ওদের তো একটু টাকা-পয়সা হলেই মাটিতে পা-ই পড়ে না। তবে কে জানে হয়তো লোহার ভারী জুতা পরে নেমে পড়বে এমেরিকান মেরিন ও ন্যাটোর সেনারা, যারা গোটা পৃথিবীতে মাস্তানি করে বেড়ায় গ্যাং তৈরি করে।
উপ-উপাচার্য শ্রসজল চোখে বলেন, এমেরিকা তো একা কোথাও যায় না; সঙ্গে করে আল-কায়েদা ও আই এস নিয়ে ঘোরে । যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে; আর প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করে। কাজেই আমাদের শান্তিগ্রহের ইতিহাসে আজ এক ঘোর বিপন্নতার এ কোন সকাল, রাতের চেয়ে অন্ধকার!
রাজনীতি-আচার্য দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, আমাদের এখানে রাজনীতিটা মানুষের জন্য; আর পৃথিবীতে রাজনীতি একটা ব্যবসা। এই জুয়াখেলায় প্রতিটি দেশে কালো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দুটো করে পার্টি খোলে; একেক নির্বাচনে একেকদলের ওপর বাজি ধরে লুষ্ঠনের এই রাজনীতি-রাজনীতি খেলা হয়। ওরা আমাদের এই শান্তি গ্রহের জনবান্ধব রাজনীতিকে শেষ করে দেবে। পৃথিবীর সভ্যতার পাদপীঠ গ্রীসের যে হাল করেছে নাৎসী জিনগুলো;
এখানেও তাই হবে।
প্রকৃতি আচার্য প্রায় চিৎকার করে বলেন, কোনভাবে চাইনিজগুলো এসে পড়লে আমাদের তাবৎ প্রাণীকুলকে খেয়ে ফেলবে; যা চোখের সামনে পড়বে । কোরিয়ানরা এলে তো আমাদের গৃহপালিত আদরের কুকুরগুলোও খেয়ে ফেলবে । আরবেরা এলে উটগুলো ঝলসে খাবে । বলদেশিয়ার মুসলমানেরা গরুগুলো খেয়ে সাফা করে দেবে; হিন্দুরা
পাঁঠাগুলো চিবিয়ে খাবে। এরা কেউ দেয় কুরবানী-কেউ দেয় বলি; হত্যার রিরংসা আর কী! আমরা যে আনন্দ খেয়ে বাঁচিঃ এ ওদের বোঝাবে কে! নিরামিষ খাওয়া লোকগুলো উজাড় করবে বনের লতাপাতা । এখন করি কী!
নৈতিকতাচার্য হাহাকার করে ওঠেন, পৃথিবীতে কখনো কোন সভ্যতার উথান ঘটেনি। এগুলো ওদের কষ্ট কল্পনা । গরীবের অর্থ লুষ্ঠন করে তৈরি করা প্রাসাদ -ট্রাসাদগুলো আবার নতাদের হেরিটেজ সাইট। ধাপ্পা দেয়ার জায়গা পায় না আর! সামান্য একটু পড়ালেখা শিখে টিশার্ট পরে কফি খেতে খেতে ওয়াই ফাই জোনে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রনিক্যাল
স্টেটাস আপডেট আর সেলফি আপলোডই ওদের সর্বোচ্চ অর্জন। অথচ আমাদের এখানে কী মন্দ্র সৌম্য দর্শনচর্চার আবহ।
রাজনীতি-আচার্য বলেন, এই ফেইক স্মার্টনেসটা বৃটিশ কলোনিয়াল হ্যাং-ওভার মুখে বিরাট জ্ঞান-বিজ্ঞানের গল্প আর উপনিবেশ থেকে দরিদ্র মানুষকে লুণ্ঠন করা সাদা হাতি সব। পৃথিবী নামের সার্কাস পার্টির জোকারগুলোকে কোনভাবেই আমাদের শান্তিগ্রহে ঢুকতে দেয়া যাবে না। কারণ এরা পৃথিবীর সৃজনশীল মানুষগুলোকে হিংস্র আক্রমণে মেরে ফেলে। চিত্রকর-কবি-বিজ্ঞানী-ঔপন্যাসিকদের জীবদ্দশায় পাগল বলে মানসিকভাবে হত্যা করে এরা । আর মৃত্যর পর তাদের জন্য ভক্তি উপচে পড়ে যেন। খুলে বসে পদক ও শ্রদ্ধার ব্যবসা ।
সংবাদাচার্য জানান, পৃথিবীতে এখন শিশুদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়, পুলিশ টাকা খেয়ে খুনীকে পালাতে সাহায্য করে । বৃটিশ বা এমেরিকানদের বর্ণবিদ্বেষ ঢুকে পড়েছে বলদেশিয়ায়। নারী নির্যাতন চলছে অহরহ। নারী অধিকারের দোকানিরা আবার ক্ষমতায়নের ডান্ডা হাতে নিয়ে পুরুষ নির্যাতন করছে। গোল্ড ডিগার নারীগুলো স্বামীর সব
সম্পদ লুষ্ঠনের জন্য শ্বশুর-শাশুড়ীকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছে। নির্মম লিবিডোর রোগী পুরুষগুলো নারীদের 'বেবিডল' পণ্য করছে; বুলবুলি আখড়াই চলছে উপমানব সমাজে ।
এমন সময় সংবাদাচার্যের স্ত্রী ফোন করে, তুমি কতদিন তোমার মার সঙ্গে দেখা করোনি মনে আছে! কেমন সন্তান তুমি! আমি যাচ্ছি শ্বাশুড়ী মার সঙ্গে দুদিন কাটিয়ে আসি।
সংবাদাচার্যের বুকের মাঝে হু হু করে ওঠে। পৃথিবীর প্লাস্টিক নারীগুলো এসে পড়লে এমন ভালোবাসার ইন্দ্রজালের শান্তিগ্রহটি দুর্মুখিনী বশীকরণের কুরুক্ষেত্র হয়ে পড়বে। এমন হেলেন অফ ট্রয় আমাদের প্রয়োজন নেই।
আচার্য সম্মেলন কক্ষের বাইরে বেরিয়ে ভাসেন, জনমানুষের সামনে করজোড়ে মিনতি করে বলেন, শ্রদ্ধেয় শান্তিগ্রহবাসী; আমাদের আনন্দভূক ভালোবাসার বসত ভিটায় আমরা পৃথিবীর কোন উপমানব ঢুকতে দেবো না। আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। কিন্তু প্রকৃতি আমাদের এক প্রতিরক্ষাকবচ উপহার দিয়েছে। সুতরাং দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
শান্তি গ্রহবাসী আনন্দ পায় আবার অবাকও হয়। সমস্বরে জিজ্ঞেস করে, সেটা কীরকম!
বিজ্ঞানাচার্য এগিয়ে এসে বলেন, পৃথিবীর উপমানবেরা অক্সিজেন বিনাশ করে এক বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে বসবাস করে । আর আমাদের শান্তিগ্রহে ঘন অক্সিজেন চারপাশে । আমরা যে কটি নমুনা পৃথিবী থেকে এনেছিলাম, তাদের কার্বন-ডাই-অক্সাইড খাইয়ে কোন মতে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে; কারণ ওরা শান্তিগ্রহের ঘন অক্সিজেনে মাথা ঘুরে পড়ে যেতো
প্রায়শই। ফলে এটা নিশ্চিত পৃথিবী থেকে কোন কলম্বাস যদি স্পেসশীপ নিয়ে এসেও পড়ে; অক্সিজেনের তোড়ে সে ও তার হানাদার বন্ধুরা মারা পড়বে । সবাই বলুন, উল্লাস।
শান্তি গুহবাসী সমস্বরে বলে, উল্লাস। চুনিলাল চেঁচিয়ে ওঠে, উল্লাস।
দেবুদা লেখিকার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শাটলে ফিরে আসে ।
লেখিকা বলে, তোমরা চলে এসো । পৃথিবীর অসভ্যগুলো এখানে আসতে চেষ্টা করলে আমরা একসঙ্গে লড়াই করবো। অসুবিধা কী!
চুনিলাল বলে, আমার খুব ভালো লেগেছে আর্থ পয়েন্ট টুওতে। আমায় রেখে আসলেই পারতে ।
দেবুদা বলে, সারাটা জীবন লড়াই করে স্বর্গে এসেও লড়াই করছি। আবার আর্থ পয়েন্ট টু ওতে গিয়েও যদি সেই একই লড়াই করতে হয়; তাহলে জীবনে শান্তিটা কবে আসবে শুনি!
আইনস্টাইন উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছিলেন। দেবুদা জানায়, আর্থ টু পয়েন্ট ও আমাদের জন্য আদর্শ জায়গা। কিন্তু ওরা দেখলাম ভয়ে ভয়ে আছে পৃথিবীর মানুষ ওখানে এসে পড়বে বলে।
আইনস্টাইন বলেন, মানুষ যতদূর এগিয়েছে বড়জোর ধনী লোকগুলো শাটলের টিকেট কেটে মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত যেতে পারবে । গরীবেরা পৃথিবীতে ডুবে মরবে । আর্থ টু পয়েন্ট ওতে যাবার সামর্থ্য অর্জন মানুষের পক্ষে আপাতত সম্ভব নয় বলেই মনে করি।
গান্ধীজী বলেন, আবার শরণার্থী হতে হবে!
সৈয়দ মুজতবা আলী বলেন, বাপু, তার চেয়ে বলুন বাউণ্ডুলে জীবন।
এমন সময় ফোন আসে, সারা বেহেশতে সিরিজ বোমা হামলা শুরু হয়েছে। সেন্টিমেন্ট কাসিনো আর রেডক্লিফের লিভিং-রুম এ-দুটো জায়গা থেকেই এসব হামলার পরিকল্পনা আসছে বলে প্রাথমিক খবরে জানা যাচ্ছে। বেহেশত কর্তৃপক্ষ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার জন্য চাপ দিচ্ছে।
শেরে বাংলা বলেন, চলো দেখি কাদের এতো সাহস হয়েছে। সুভাষ বোস দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, এরা সব চেনা মুখ । চেনা শক্র সভ্যতার ।
সত্যজিৎ রায় মনে করিয়ে দেন, এখন আলোচনার সময় নয়। সিদ্ধান্ত নেবার সময়।
বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের দিকে তাকান। রবীন্দ্রনাথ তাকান নজরুলের দিকে ।
এ এক অনেক বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে বসে আছেন সবাই। বেহেশতজুড়ে সাইরেন বাজছে। পুলিশের গাড়ি ইতস্তত টহল দিচ্ছে।
আনা দেবুদাকে ফোন করে বলে, এখনো চিন্তা করে দেখো দেবু; পালিয়ে যাবে; নাকি প্রতিরোধ করবে?
(সমাপ্ত)
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন