এক অদ্ভুত পরাবাস্তব সময় যেন অতিক্রান্ত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এপ্রিল মাসে ধাক্কাধাক্কি বিভাগ উদ্বোধনের পর মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্মুখীন হল অন্য এক বাস্তবতার। সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ এক অনন্য নজির স্থাপন করল। প্রায় দশ মাস সময় নিয়ে ৪৩ তম আবর্তনের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।
২০১৩-১৪ সেশনে ক্লাস শুরু করা ৪৩ তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের মে-জুন মাসে। এমনিতে তখনই প্রায় পাঁচ মাস সেশন জটে পড়ে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ কেউ ভেবেছিলেন যে, হয়ত দ্রুত ফল প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ হয়ত সেশন জট নিরসনে সচেষ্ট হবে। কিন্তু কোমলমতি বোকা ছাত্রছাত্রীদের মত করে ভাবতে যাননি বিচক্ষণ শিক্ষকরা। তারা ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছেন!
ফল প্রকাশে এত দেরির কারণ জানতে চাইলে একজন শিক্ষক বলেন ‘প্রতিটি খাতা যত্ন সহকারে দেখতে কতো সময় লাগবে তা বাচ্চারা কী করে বুঝবে! ওরাও একদিন শিক্ষক হবে, তখন ওরাও বুঝতে পারবে সব কিছু!’ তবে অবশ্য অবিশ্বস্ত এক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, কোন একজন শিক্ষকের বাসা থেকে পুরনো পত্রিকার সাথে বেশ অনেকগুলো খাতাও বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সে সব খাতা খুঁজে বের করতে যেয়ে অনেকগুলো দিন কেটে যায়। যার ফলে ফল প্রকাশে এতো দেরি হয়।
অবশ্য এ অভিযোগ একেবারে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন ‘এমন কিছু কোথাও ঘটে নাই। উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি নির্দিষ্ট কুচক্রীমহল থেকে এমন অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে!’ eআরকি প্রতিনিধিকে তিনি আরও বলেন ‘ছাত্রদের মধ্যে এক উৎসবমুখর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এত দ্রুত রেজাল্ট দেয়ায় তারাও আনন্দিত!’ আরও কিছু প্রশ্ন করায় এই শিক্ষক eআরকি প্রতিনিধিকে হলুদ সাংবাদিক আখ্যা দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। তিনি বলেন ‘আপনি কি ওদের ব্যানার দেখেন নাই? তারা যে আমাদের অভিনন্দিত করেছে, এই সূর্যালোকের মত স্পষ্ট বিষয়টা কীভাবে আপনার চোখ এড়িয়ে গেল?’
উল্লেখ্য যে, ইংরেজি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী মিলে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের। এত দ্রুত রেজাল্ট পাওয়ার খুশিতে শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে একটি ব্যানার বানিয়ে তা ঝুলিয়ে রাখেন ক্যাম্পাসে, যা অবিচল শিক্ষকদের দৃঢ়তা ও সময়নিষ্ঠতার প্রমাণস্বরূপ জ্বলজ্বল করছে। কোন কোন শিক্ষার্থী বিভাগের সামনে একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করারও দাবি জানান।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাকরুদ্ধ অত্র বিভাগের সকল শিক্ষার্থী। eআরকির জাবি প্রতিনিধির কাছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ব্যানারের সামনে দাড়িয়ে বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে এক শিক্ষার্থী বলেন ‘আমরা বুঝি একটা ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়া কত কষ্টের, কতটা পরিশ্রমের। তারপরও যে আমাদের শিক্ষকেরা এতো দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাতেই আমরা কৃতজ্ঞ।’ অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন ‘এমনিতেই সারা বছর উনারা দেশকে উদ্ধার করে আসছেন টক শো এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে। তার উপর মাঝেমধ্যেই নিজেরা নিজেরা ধাক্কাধাক্কি করেন। এ সবও তো কম ঝক্কির না!’
এর আগে ৪২ তম আবর্তনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষার ৯ মাস পর রেজাল্ট পেয়েছিলেন। ঐ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী জানান ‘ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এ সব যখন সবাই ভুলে যেতে বসেছে তখন ইংরেজি বিভাগ তার ঐতিহ্য ধরে রেখে প্রমাণ করেছে আমরাই দেশের যোগ্য সন্তান।’