প্রিয় মেয়র, আমাদের সন্তানের জন্য কেন সামর্থ্যের সেরাটা দিচ্ছেন না?

২৫৬ পঠিত ... ১৪:৪৯, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৩

Priyo-meyor

নতুন বাবা-মাকে চোখ দেখে চেনা যায়৷ তাদের স্লিপ শিড্যুয়েল বলে কিছু থাকে না৷ সেজন্য সকালবেলা তাদের চোখ থাকে লাল। একদিন সকালবেলা সদ্য মা/বাবা সহকর্মীর চোখের দিকে তাকালেই আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন৷

সারাদিনের সকল স্ট্রাগলের পর বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে যখন নতুন বাবা/মা ঘুমাতে যায়, তখনই মশারীর চিপা থেকে দুটা মশা বের হয়ে আসে৷ এই মশাকে মারা ছাড়া ঘুমানো যায় না৷ এখানে একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ হলো, মশাও মারবেন, আবার শব্দও করতে পারবেন না৷ এই করতে করতে বাচ্চা দুইবার ঘুম থেকে ওঠে ও ভোর হয়ে যায়৷

তাদের দিনের শিড্যুয়েলটা মোটামুটি এমন—বাচ্চাকে খাওয়াও, ঘুম পাড়াও, অন্য কাজ করো। এরমধ্যে বাচ্চা জেগে যাবে। খাওয়ার সময় আর পাওয়া যাবে না৷ আরেকবার সব ঠিকঠাক করে কোনোভাবে খাওয়া গেলেও হাত ধোয়ার আগেই দেখা যায় বাচ্চা জেগে গেছে৷ আবার ঘুম পাড়িয়ে তার কাঁথা, কম্বল ও যাবতীয় জিনিস পরিস্কার করা। নিজের প্রতিদিনের অন্যান্য কাজ৷ রান্নাবান্না।

ঘুম নতুন বাবা/মায়ের জন্য খুবই বিলাসী একটা বিষয়।

প্রেগনেন্সির সময়ের শারীরিক কষ্ট, মানসিক টেনশন—বাবা/মা না হলে আপনার পক্ষে অনুমান করাও সম্ভব না৷

প্রেগনেন্সি থেকে শুরু করে একটা বাচ্চার বড় হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ।

২-৩ বছর বছর বাচ্চাদের অসুখ লেগেই থাকে। রাতে-বিরাতে নিয়ে দৌড়াতে হয় হাসপাতালে৷

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়েছেন কখনও? অসুস্থ সন্তানের বাবা/মায়ের চোখের দিকে তাকিয়েছেন কখনও? 

একটা পরিবারে একটা বাচ্চা আসার সাথে সাথে পুরো পরিবারের হাসি-কান্না ওর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়৷ বাচ্চা হাসলে সবাই হাসে, বাচ্চাটা অসুস্থ হলে সবাই চিন্তিত হয়৷ অসুস্থতার কথা শুনে রাত-বিরাতে ছোটমামা চলে আসে। প্রথমদিন স্কুলে নেয়ার সময় ছোট কাকার বিশাল আয়োজন। ছোটো ফুফু আর আন্টি তো কোল থেকে নামায় না।

বাবা/মায়ের ফোনের গ্যালারি দেখেছেন কখনও? নিজের কোনো ছবি নাই৷ বন্ধুদের সাথে প্রথম বান্দরবন যাওয়ার ট্রিপের ছবির মেগাবাইট চলে গেছে বাচ্চার একইরকমভাবে একই পোজে তোলার ৫টা ছবির দখলে৷ বিয়ের ছবিও সেখানে নাই। হানিমুন, প্রোপোজ, প্রথম হাত ধরার ছবি বাচ্চা দখল করে নিয়েছে৷ গ্যালারির নিচে যতদূর চোখ যায়—বাচ্চার ছবি। তুলতে গিয়ে হাত নড়ে গিয়ে ঝাপসা হয়ে যাওয়া ছবিটাও গ্যালারিতে থেকে যায় স্বযত্নে। যেন পাবলো পিকাসোর আঁকা কোনো এক শিল্পকর্ম।

বাবাদের শার্ট, মায়েদের জামা একটু ফেড থাকে৷ তাদের ব্যক্তিগত শখ আগের থেকে কমে আসে। কেন জানেন? কারণ, প্রতিটা বাবা/মা-ই তার সামর্থ্য অনুযায়ী সন্তানের জন্য সবচেয়ে সেরা জিনিসটা এনশিওর করতে চায়৷

একটা বাচ্চা বড় করার পেছনে কত ত্যাগ, কত পরিশ্রম, কত নির্ঘুম রাত, কত কষ্ট, কত দুশ্চিন্তা! কত স্বপ্ন! একটা বাচ্চা বড় করা মানে তিলতিল গড়ে তোলা একটা পৃথিবী।   

এরপর একদিন আপনি দেখলেন, আপনার এই পৃথিবী একটা মশার কামড়ে জাস্ট ৫ দিনের মধ্যে নাই হয়ে গেল। আপনার এই পৃথিবী ড্রেনে পড়ে নাই হয়ে গেল।

আমাদের এই কষ্ট, এই ত্যাগ, নিজের শখ আহ্লাদকে বিসর্জন দেয়া কেন জানেন?

কারণ আমরা আমাদের সন্তানকে সবচেয়ে নিরাপদ পৃথিবীটা দিতে চাই।

সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে আমরা আমাদের সন্তানদের একটা নিরাপদ শহর দিতে চাই।

আপনি কেন আপনার সামর্থ্যের সেরাটা দিচ্ছেন না প্রিয় মেয়র? আপনার কাছে কি আমাদের এতসব ত্যাগ, পরিশ্রমকে ছেলেখেলা মনে হচ্ছে?­

২৫৬ পঠিত ... ১৪:৪৯, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top