বাংলাদেশই সুখীতম দেশ: ফিনিশ নাগরিক সমাজ

১৪৮ পঠিত ... ১৬:১৬, মার্চ ২১, ২০২৪

17 (2)

বিশ্বের সুখী রাষ্ট্রের তালিকায় ফিনল্যান্ডের নাম শীর্ষে থাকায় ফিনিশ নাগরিক সমাজ এর জোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার চোখে সবচেয়ে সুখী দেশ বাংলাদেশ। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী একটি গ্রেইসফুল সুখী জীবন যাপন করেন। কিন্তু ফিনল্যান্ডের লোক আমাকে সেরকম গুরুত্বও দেয়নি; বিকল্পহীন নেত্রীর মর্যাদা পাইনি যোগ্যতা থাকার পরেও। ভাবতে পারেন, একটা পার্টিতে সামান্য আনন্দ করতে দেখা যাওয়ায় জনসমর্থন হারিয়েছি। ফিনল্যান্ডের গণতন্ত্র অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধাবোধ নেই ফিনল্যান্ডে। আমি মনে করি বাংলাদেশকে তার প্রাপ্য সুখীতম রাষ্ট্রের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি এর জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ফিনল্যান্ডের সাবেক রেসিং ড্রাইভার ও সফল শিল্প উদ্যোক্তা নাইস রোজবার্গ এক টিভি সাক্ষাতকারে বলেছেন, ফিনল্যান্ডে আমাকে সবাই সফল শিল্পোদ্যোক্তা বলে; কিন্তু বাংলাদেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের যে সাফল্য তার ধারে কাছে যেতে পারিনি আমি। আমার সাইপ্রাস বা ভার্জিনিয়া দ্বীপে সেকেন্ড হোম নির্মাণের সামর্থ্য নেই; সেদিক থেকে দুঃখীতম শিল্পোদ্যোক্তা আমি। বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তারা সবচেয়ে সুখী। সুতরাং পৃথিবীর সুখীতম রাষ্ট্রের পালক ঐ দেশের মুকুটেই লাগিয়ে দেয়া প্রয়োজন।

আইসম্যান নামে পরিচিত আরেকজন রেসিং ড্রাইভার কিমি রাইকোনেন। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান একজন সফল ব্যবসায়ী ও সাংসদ। অন্যদিকে অবসরের পর তাকে কাওয়াসাকি রেসিং টিমের প্রিন্সিপ্যাল বানানো হয়েছে। সাকিবের সুখের দিকে তাকিয়ে নিজের প্রতি করুণা হয়; এমন দাবি করেছেন রাইকোনেন। তিনি বলেছেন, সাকিবের কোটি কোটি ফলোয়ার; আর ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৫৬ লাখ। সুতরাং সাকিব যদি হাতি হন; তিনি একটি পিঁপড়া মাত্র।

লিনাস টরভাল্ডস একজন প্রতিষ্ঠিত সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। লিনাক্স কেরনেল, স্কুবা ডাইভিং সফটওয়ার, জি আই টি সিস্টেম উদ্ভাবনের মাধ্যমে ইন্টারনেট হল অফ ফেমে তার স্থান হয়েছে। কিন্তু তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় যেমন গুগল প্লে স্টোরের জন্য এপস তৈরি ও দোয়েল ল্যাপটপ তৈরির প্রকল্প উপহার দিয়েছে; অমন লুক্রেটিভ কোন প্রকল্প ফিনল্যান্ডে নেই। বাংলাদেশে যেমন কেবল তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে দুটি কথা বলেই তথ্যবিজ্ঞানীর মর্যাদা পাওয়া যায়; ফিনল্যান্ডে সে মর্যাদার ছিটেফোটাও নেই। কাজেই ফিনল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে সুখী দেশ হয় কিভাবে!

নাইট উইশ ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট তারজা সুজানা দুঃখ করে বলেছেন, বাংলাদেশে সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মাহফুজের যে ফ্যানবেইজ; তার ধারে কাছেও নেই তার ফ্যান ফেয়ার। এটা কোন জীবন হতে পারেনা। দুঃখে নিজেকে সরিয়ে নিতে ইচ্ছা করে সংগীতের জগত থেকে। তিনি বলেন, ওস্তাদ মাহফুজের গান ভালোবেসে ভক্তেরা যে সংখ্যক হাহা ইমো দেয়; তা গুনেই বাংলাদেশকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ হাহা ইমোর সুখীদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন।

দ্য ম্যান উইদাউট পাস্ট ও লেনিনগ্রাদ কাউবয়েজ গো এমেরিকা চলচ্চিত্রখ্যাত নির্মাতা আকি করিসমাকি বলেন, বাংলাদেশের এক ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্র নিয়ে বোদ্ধাদের যেরকম আহাউহু চোখে পড়েছে; এর এক দশমাংশ স্বীকৃতিও ফিনল্যান্ডের বোদ্ধারা তাকে দেয়নি। উনি ‘গো এমেরিকা’ নামের চলচ্চিত্র বানিয়েও উগ্রজাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করতে পারেননি; অথচ বাংলাদেশে গো পাকিস্তান বা গো ইন্ডিয়া বললেই উগ্রজাতীয়তাবাদীরা শিং ঘষে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফিনল্যান্ডের বোদ্ধাদের শিং নাই; শিং না থাকলে কী সুখী হওয়া যায়।

সুইডিশ ভাষী ফিনল্যান্ডের লেখিকা টোভে ইয়ানসন বলেছেন, বাংলাদেশে একুশে বইমেলায় কত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়; সাহিত্য পাতাগুলোকে ঘিরে পিঠ চুলকানির আসর, সরকার বন্দনা করলেই একাডেমি ও রাষ্ট্রীয় পদক। প্লটও পাওয়া যায়। আর আমি আইকন বলুন বা লিটেরেরি এম্বাস্যাডর বলুন; পেলামনা কোন পদ পদবী; প্রধানমন্ত্রী ডেকে পিঠাপুলি খাওয়াবেন; সেই ঔদার্য্যও নেই। এই হচ্ছে ফিনল্যান্ডের রিয়ালিটি। ফ্যানটাসি নিয়ে বেঁচে আছি কোনমতে। নইলে আমার দুঃখের কোন সীমা পরিসীমা নাই। প্লিজ ফিনল্যান্ডকে বাংলাদেশ বানিয়ে দিন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারত্তি আহিসারি দুঃখ করে বললেন, ২০০৮ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবার পর একদলা মাংসপিণ্ড হয়ে বেঁচে আছি। মিডিয়ার শিরোনামে আমি নেই। সুখীদেশ বেলারুশ বা বাংলাদেশের মতো নোবেল বিজয়ীকে নিয়ে পিং পং না খেললে; একটা নোবেল বিজয়ী কী করে প্রাসঙ্গিক থাকে বলুন; আমি তো কারাগারে যেতে রাজি; কিন্তু কে নেবে কারাগারে; সে সাহস তো ফিনিশ নির্বাহী ও বিচার বিভাগের নেই। এটা বোরিং একটা দেশ।

১৪৮ পঠিত ... ১৬:১৬, মার্চ ২১, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top