স্মার্ট খিচুড়ি গণতন্ত্র

২৪৩ পঠিত ... ১৭:৪৬, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪

423062833_1050997252651752_5199446863210180243_n

ছাত্রদের এক হোস্টেলে সকালের খাবার হিসেবে শুধু খিচুড়ি দেয়া হয়। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে কিছু ছাত্র প্রতিবাদ করে, প্রতিদিন সকালে খিচুড়ি দেয়া চলবে না। হোস্টেলের প্রোভোস্ট তখন বাধ্য হয়ে একটি ভোটের আয়োজন করে। সকালে বেশিরভাগ ছাত্র যে খাবার চাইবে, তাই পরিবেশন করা হবে; এমন সিদ্ধান্ত হয়। খিচুড়ি ছাড়া অন্যান্য খাবারের পক্ষে সেরকম সংগঠিত অভিমত ছিলো না। ফলে ভোটের ফলাফল আসে,

খিচুড়ি- ২৫ জন

ডিম-পরোটা- ২০ জন

ডাল-পরোটা- ১৫ জন

তেহারি- ১০ জন

রুটি-সবজি- ৫ জন

ভোটে খিচুড়ি জিতে যাওয়ায় প্রভোস্ট বেজায় খুশি হয়। কারণ এতে খরচ কম। বেঁচে যাওয়া টাকা ভাগাভাগির শর্তে খিচুড়ির সমর্থকদের হাতে ব্রেকফাস্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়।

ছাত্ররা খিচুড়ির বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। প্রভোস্ট ঘোষণা দেয়; তিনমাসের মেয়াদ পূর্ণ হবার আগে নির্বাচন নয়। ওদিকে খিচুড়ির মান নিম্নগামী হতে থাকে। খিচুড়ি প্রশাসকেরা টাকা-পয়সার ভাগ দেবার লোভ দেখিয়ে তেহারি সমর্থকদের তাদের জোট সঙ্গী করে। পাড়ার চাল-ডাল বিক্রেতা শংকর মুদি খিচুড়ির পক্ষ হয়ে হোস্টেলের ছাত্রদের প্রভাবিত করতে আসে। যেভাবেই হোক খিচুড়িকে জয়ী করতে হবে তার।

তিনমাস পর নির্বাচন হয়। সেখানে ডিম-পরোটা, ডাল-পরোটা, রুটি-সব্জির পক্ষের ভোটদাতারা ভোট দিতে গেলে, প্রভোস্ট বলে, তোমাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। শতভাগ ভোট পড়েছে। ভোটের ফলাফল আসে,

খিচুড়ি- ৬৫ জন

তেহারি- ১০ জন

ডিম-পরোটা, ডাল-পরোটা, রুটি-সবজির সমর্থকরা মিছিল করে, রাতের ভোট মানি না। খিচুড়ি সমর্থকেরা বলে, খিচুড়ি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। আবহমানকাল ধরে হোস্টেলের ছেলেরা খিচুড়ি খাচ্ছে। পরোটা-রুটি এসব আমাদের সংস্কৃতি নয়। তাই খিচুড়ির বিরুদ্ধে কথা বলা; আমাদের পবিত্র সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলা।

হোস্টেলে খিচুড়ির মান কমতে থাকে। ওদিকে খিচুড়ি সমর্থকেরা মোটাতাজা হতে থাকে। মোটা হতে থাকে শংকর মুদি। তেহারি সমর্থকেরা মিন মিন করে বলে, সপ্তাহে একদিন তেহারি দিলে কী হয়!

খিচুড়ি সমর্থকেরা বলে, তেহারি মনে কইরা খিচুড়ি খাও; আমোদ পাইবা!

ডিম-পরোটা ও ডাল-পরোটার সমর্থকেরা নতুন ভোটের দাবি জানালে খিচুড়ি প্রশাসকেরা বলে, তিনমাসের মেয়াদ পূর্তির একদিন আগেও ভোট নয়।

‘রুপকল্প খিচুড়ি’ প্রকাশ করে খিচুড়ি সমর্থকেরা বলে, আমরা এবার স্মার্ট খিচুড়ি প্রবর্তন করবো। শংকর মুদি বলে, দুটো এলাচি-লবঙ্গ ছেড়ে দিলে ওটা স্মার্ট খিচুড়ি হয়ে যাবে।

এবার ভোট সামনে রেখে মোটাতাজা খিচুড়ি সদস্যরা  ডিম-পরোটা সমর্থকদের একটি কক্ষে আটকে রাখে। ভোটকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ দেখাতে জ্যাম-টোস্ট, পিটযা ইত্যাদি ডামি আইটেমের পক্ষে প্রচারণা চালায়। খিচুড়ি প্রধান বলে, এবার যেন প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা ছাড়া খিচুড়ি জিতে না আসে।

ভোটদান কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ভিড় জমাতে খিচুড়ি সমর্থকরা ধীরে ধীরে ভোট দেয়। শংকর মুদি তার বিশাল বপু-তনু বাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে। "জিতবে এবার খিচুড়ি" শ্লোগান দিতে দিতে হোস্টেলের বাবুর্চি-পিয়ন-চৌকিদার রুমে রুমে গিয়ে ভয় দেখায়, ভোট দিতে না গেলে সকালের খাবার বন্ধ করে দেবো।

ভোটের ফলাফল জানা থাকায় অনেক খিচুড়ি সমর্থকও আর ভোট দিতে যেতে আগ্রহ পায়না। প্রভোস্ট ভোটের দিন দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে জেগে ফলাফল ঘোষণা করে,

খিচুড়ি- ১৭ জন

তেহারি-৫ জন

জ্যাম-টোস্ট-৮ জন

পিজ্জা- ৭ জন

শংকর মুদি ফুল নিয়ে হাজির হয়ে যায় খিচুড়ি সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানাতে। তেহারি পক্ষ কেঁদে আকুল হয়। জ্যাম-টোস্ট ও পিজ্জা সমর্থকেরা গিয়ে খিচুড়ি প্রধানকে কদমবুচি করে বলে, আমরা পবিত্র খিচুড়ি খাইতে চাই। খিচুড়ি প্রধান হেসে বলে, খাবে তোমরা খিচুড়িই; কিন্তু তোমরা খিচুড়ির তেল-নুন-মশলা নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করবে কেমন।

২৪৩ পঠিত ... ১৭:৪৬, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top