কবরস্থানের মাঝ দিয়ে ভোটের মিছিল যেতে দেখে ভূতেরা খিল খিল করে হাসে। এক সর্দার প্রকৃতির ভূত ধমক দিয়ে বলে, ওরা ভূতের রাজার বর নিতে এসেছে। সর্দার ভূত গান ধরে,
ভূতের রাজা দিল বর,
ভূতের রাজা দিল বর,
জবর জবর তিন বর।
এক বোকা ভূত জিজ্ঞেস করে, কী কী বর!
সর্দার ভূত উত্তর দেয়,
যা চাই পরতে খাইতে পারি,
সেকেন্ড হোমে যাইতে পারি।
সুইস ব্যাংকে টাকা জমাইতে পারি,
মুগ্ধ হয়ে আরেক ভূত বলে,
কেমন সুন্দর !
ভূতের রাজা দিল বর,
কেমন সুন্দর !
মিছিল থেকে এক কর্মী এগিয়ে এসে রসিকতা করে বলে, ভুট দিতে আইসেন ভূতেরা সকল। ভুট দেয়া আপনার দায়িত্ব।
কর্মীর ঘাড়ে বসে বলে, তোমরা তো খাইতে পরতে টাকা জমাইতে পারবা তাতে; আমগোর কী লাভ!
কর্মী উত্তর দেয়, ভুটাধিকার প্রয়োগ করলে; ভূতাধিকারও পাইবেন!
কবরস্থানে যারা মিছিল করে গিয়েছিলো, তারা সবাই ফিরে এসে ভূতের গল্প বলে। চায়ের স্টলগুলোতে ভূতের গল্প চাউর হয়। এইভাবে ভুট আর ভূত শব্দদুটো এমনভাবে জনশ্রুতিতে মিশে যায় যে, কেউ এসে ভোট চাইলেই লোকে ভূতের ভয় পায়। কেউ এসে ভোট দিতে নিষেধ করলেও লোকে ভূতের ভয় পায়।
এরমধ্যে দুই প্রার্থীর কর্মীদের মাঝে সংঘর্ষে এক কর্মী নিহত হলে; সেই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উপকথা প্রচলিত হয়, লোকটা মরে ভূত হয়ে গেছে।
সেই থেকে ভুট চাই ভুট চাই বলে পাড়ার মাঝ দিয়ে মিছিল নিয়ে গেলে; লোকজন ভয় পেয়ে লেপ-কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
টিভি টকশোতে চোখ গোল গোল করে কেউ ভোটের ফজিলতের গল্প করলে লোকজন ভূতের ভয় পেয়ে টিভি বন্ধ করে দেয়।
কে একজন দৌড়ে এসে খবর দেয়, প্রচারণার সময় সংঘর্ষে নিহত লোকটা ভূত হয়ে মাঝরাতে বিভিন্ন সুনসান রাস্তায় গান গেয়ে বেড়াচ্ছে,
আহা ভূত, বাহা ভূত
কিবা ভূত, কিম্ভূত
বাবা ভূত, ছানা ভূত
খোঁড়া ভূত, কানা ভূত
কাঁচা ভূত, পাকা ভূত
সোজা ভূত, বাঁকা ভূত
রোগা ভূত, মোটা ভূত
আধা ভূত, গোটা ভূত
আরো হাজার ভূতের রাজার দয়া, মোদের উপর !
আরো হাজার ভূতের রাজার দয়া, মোদের উপর !
ভূতের রাজা দিল বর।
লোকজনের ভূতের ভয় দূর করতে মাইকে গান বাজিয়ে, স্থানে স্থানে সিঙ্গাড়া, পুরি, জিলাপি ভাজার আসর বসানো হয়। কিন্তু যারা এগুলো খেতে আসে; তারা লোকালয়ের দিকে না গিয়ে কবরস্থানের দিকে হেঁটে গিয়ে মিলিয়ে যায়।
সাহসী লোকেরা কবরস্থানের পাশে গিয়ে ভূতেরা কোথায় গেলো তা খুঁজতে খুঁজতে হঠাত নাকি সুরে গান শুনতে পায়,
তাইরে নাইরে নাইরে
আর ভাবনা কিছু নাইরে
তাক ধিন ধিননা ধিনতা
আর নাইকো মোদের চিন্তা।
কেবল পেটে বড় ভুখ,
না খেলে নাই কোন সুখ।
আয়রে তবে খাওয়া যাক,
মন্ডা মিঠাই চাওয়া যাক।
কোর্মা কালিয়া পোলাও,
জলদি লাও, জলদি লাও!
এক প্রার্থী তার কর্মীদের শুধরে দেয়, ওরে ভুট নারে ভোট চাও গিয়ে ভোট।
কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করার পরেও কর্মীরা বলে, ভুট চাই ভুট।
ফলে ভুটকে ভূত শুনে লোকজন ছুটে পালাতে থাকে তাদের কাছ থেকে।
টিভি টকশোতে ভোটের ভবিষ্যত নিয়ে আলাপ শুনে দর্শকদের মনে হতে থাকে তারা ভূতের ভবিষ্যত নিয়ে আলাপ শুনছে। অংশগ্রহণমূলক ভূত, সুষ্ঠু ভূত, গ্রহণযোগ্য ভূতের গল্পগুলো লোকজন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে শুনে। কে একজন বলে, কমপক্ষে ৪০ শতাংশ ভূত পড়লেই আমি খুশি। আরেকজন মন্তব্য করে, বানাইয়া ছানাইয়া ভূতের সংখ্যা বললে চলবে না; ভূতের সঠিক সংখ্যা চাই।
এক প্রার্থী ধমক দিয়ে বলে, ভুট দিতে না এলে সমস্ত প্রণোদনা ও সাহায্য বন্ধ করে দেবো। এই ধমক শুনে এক ভূত উত্তর দেয়, গত পাঁচবছরে একবারও কবরস্থানের সংস্কার করলেন না; অহন আইছেন ভূতের খবর নিতে। প্রার্থী তাকিয়ে দেখে লোকটার হাত দুটো কংকালের মতো!
প্রার্থী পড়িমরি করে দৌড় দেয়। পেছনে পেছনে ভূতেরাও দৌড়াতে থাকে। প্রার্থী পুলিশ স্টেশানে গিয়ে ওঠে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করে, এই এলাকায় ভূত প্রেতের আছর পড়ছে, আমি নিজ চোখে দেখছি। কিছু একটা ব্যবস্থা করেন।
পুলিশ হেসে বলে, কী যে বলেন স্যার, ভুটের টেনশনে আপনি চোখে ভূত দেখছেন!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন