হীরক নগরীতে সিআইএ এজেন্ট

২৮৭ পঠিত ... ১৭:৩১, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩

হীরক-নগরীতে-সিআইএ-এজেন্ট

এমেরিকায় বেকারত্ব বাড়ছে; অর্থনৈতিক মন্দায় নাকাল দশা। ইরাক ও আফঘানিস্তানে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে; তার কিছুই উঠে আসেনি। ইটস আ সাংক কস্ট।

ওদিকে জো বাইডেন নতুন দিল্লির জি এইট সম্মেলন থেকে ফিরে; একটা সেলফি গলায় ঝুলিয়ে ঘুরছেন; আর বুকে থাবা দিয়ে বলছে, চলো চলো ঢাকা চলো।

বারাক ওবামা, নোয়াম চমস্কি, বিল গেটস, ইলন মাস্ক, জর্জ ক্লুনি, কেইট উইন্সলেট; এরা সবাই অস্থির হয়ে পড়েছে ঢাকা যাবার জন্য।

হোয়াইট হাউজ অনেক কষ্ট তদবির করে এদের ভিসা জোগাড় করে দেয়। হোয়াইট হাউজকে গ্যারান্টার হতে হয়; যে এরা ফিরে আসবে। অবৈধভাবে স্থায়ী হতে চেষ্টা করবে না।

শাহজালাল বিমান বন্দরে পৌঁছাতেই এক হারুন এসে তাদের কামড়াতে থাকে ইতস্তত। এটাই এখানকার তল্লাশি প্রক্রিয়া। হারুন চিতকার করে, অই স্যার কস না ক্যান!

বারাক ওবামা হারুনকে স্যার স্যার করে শান্ত করলে; তারা হীরক নগরীতে প্রবেশের সুযোগ পায়।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে গাড়ি ছুটলে কেইট উইন্সলেট বলে, আমি তো এতো সুন্দর উড়াল পথ কোথাও দেখিনি!

ডাইভার হেসে বলে, এইখানে যা যা দেখবেন, তার কিছুই আপনি আগে দেখেন নাই আপামণি।

হোটেলে মালপত্র রেখেই ঢাকা শহরে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে পড়ে এমেরিকানরা।

নোয়াম চমস্কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যায়। ভিসি ইশারায় বানান হুদাকে একটি বিবৃতি আনতে বলে। বিবৃতিটি পড়ে নোয়াম চমস্কি বলে, এতে অনেক বানান ভুল যে।

বানান হুদা ধমক দিয়ে বলে, বানানের আবার ভুল কী! এক্ষুণি স্বাক্ষর করুন।

নোয়াম চমস্কি দেখে, এই বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন বড়!

সাবেক প্রক্টর হেসে বলে, বেশি গণতন্ত্র গণতন্ত্র করেই তো পথের ফকির হইছেন, এখন এইখানে ভিক্ষা নিতে আসছেন, সই করেন মিয়া!

নোয়াম চমস্কিকে এরপর সাবেক প্রক্টর নিয়ে যায় "গণতন্ত্র নয়, উন্নয়ন চাই" শীর্ষক প্রতিবাদী সভায়। সেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জামালোস্টটল গত দেড় দশকে কী করে গণতন্ত্রকে ভুল প্রমাণ করে উন্নয়নতন্ত্র সঠিক শাসন ব্যবস্থা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে সে সম্পর্কে চাবি পত্র পাঠ করছে। এই চাবিতে সবার মস্তিষ্কের তালা এমনভাবে খুলে যাচ্ছে যে, উপস্থিত সভ্যরা আনন্দে আর্তনাদ করছে, জিতবে এবার নৌকা!

বিল গেটস আর ইলন মাস্ক গেছে একজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। মন্ত্রী হেসে বলছে, আপনাদের দুজনকেই ফেসবুক আইডি বাংলায় লিখতে হবে। নইলে আমি আপনাদের বন্ধুত্ব গ্রহণ করবো না। শৈশবে চল্লিশ ক্রোশ পথ হেঁটে স্কুলে গিয়ে এই বাংলা লিখতে ও পড়তে শিখেছি; চাট্টিখানি কথা নয়কো!

তথ্য প্রযুক্তি এসোসিয়েশানের সভাপতি জিজ্ঞেস করে, আপনাদের সুট টাই কোথায়! এইরকম ফ্রি লান্সার সাইজা আসছেন কেন!

ইলন মাস্ক বলে, কাল থেকে স্যুট টাই পড়ে আসবো।

একটা তথ্য প্রযুক্তির খামারে নিয়ে গিয়ে বিল গেটস ও ইলন মাস্ককে দুটি কিউবিকেলে বসিয়ে দেয়া হয়। অন্যেরা তাদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়।

একজন ব্যাং-মুখো লোক টিপ্পনী কাটে, এমনি রোহিঙ্গাগো অত্যাচারে বাঁচিনা; আবার আসতেছে মিসকিন আম্রিকানগুলি; দেখছত কেমন ভ্যাদভেইদা ফর্সা, মনে কয় কুষ্ঠ রোগ হইছে!

কফি রুমে কফি খেতে গেলে এক নারী বিল গেটস-কে বলে, আমি আপনার ফ্যান ছিলাম। কিন্তু মেলিন্ডার সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর তো আপনার টাকা পয়সা সবই মেলিন্ডা নিয়ে গেছে। আপনি তো এখন পপার। আমি আবার একটু ওয়েল সেটেল্ড জামাই চাই।

ইলন মাস্ক কী একটা কাজে একটু ভুল করলে সুপারভাইজার ধমক দেয়, জানো না কিছুই, খালি বড় বড় কথা লিখছো এতোকাল টুইটারে। সবকিছু আনলার্ন করো; এইবার আমাদের তরিকার তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে শিখো। নেহাত তথ্যবাবার সুপারিশের জন্য তোমারে টলারেট করতেছি। একটা কথা আগেই কইয়া দিতেছি, ঘোড়া ডিঙ্গাইয়া ঘাস খাইতে যাবা না। অহন থিকা আই এম ইওর বস!

জর্জ ক্লুনি ও কেইট উইন্সলেট অনেক কষ্টে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর এপয়েনমেন্ট জোগাড় করে। ঝন্টু চিতকার করে বলে, অসম্ভব, ইট ইজ ইমপসিবল। এমনিতেই শাহরুখের জওয়ানের যন্ত্রণায় কেউ সুজন মাঝি দেখতেছে না। আবার নিয়া আসছে জর্জ ক্লুনি।  এই কে আছিস জর্জকে এখান থেকে নিয়ে যা। কেইট তুমি একটু থাকো।

জর্জকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যায় স্পট বয়েরা। ঝন্টু কেইটকে জিজ্ঞেস করে, তুমি বাঙালি সংস্কৃতি বোঝো! এটা পৃথিবীর সেরা সংস্কৃতি; তুমি শাড়ি পরে খোঁপায় তারার ফুল দিলে; দেখতে তোমায় শাবনাজের চেয়েও বাঙালি দেখাবে। যাও শাড়ি পরে এসো। তোমার স্ক্রিন টেস্ট হবে।

শাড়ি পড়ে এসে কেইটকে ডায়ালগ দিতে হয়, এই তুমি আমায় স্পর্শ করলে কেন! আমাকে এতো সস্তা ভেবো না!

এই একটা ডায়ালগ দিতে ঘেমে ওঠে কেইট। সে কিছুতেই বুঝতে পারে না, একটু স্পর্শ করলে কী করে ক্ষয়ে যায়!

পরিচালক বোঝায়, তুমি হলে সতী নারী; তোমার পতি কাজে গেছে, এমন সময় মেম্বরের ছেলে কালু এসে তোমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছে। সিকোয়েন্সটা ঠিক এরকম।

টেনশনে সিগ্রেট ধরায় কেইট উইন্সলেট। পরিচালক বলে, ছ্যা ছ্যা ছ্যা। মেয়েরা কী সিগ্রেট খায়! মেয়েরা সিগ্রেট খেলে মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়। চরিত্রের মধ্যে ঢুকতে গেলে তোমাকে সিগ্রেট ছাড়তে হবে। তুমি তো সতী! এর গুরুত্ব বুঝতে চেষ্টা করো বোন!

জর্জ ক্লুনিকে একজন ওটিটি মেকারের কাছে নিয়ে গেলে তার সামনে বসা থিয়েটার গুরু জিলাপীর মতো হাসি দিয়ে বলে, আপনি যখনই কমার্শিয়াল মুভির ডিরেক্টরের কাছে গেছেন, তক্ষুণি আপনার রুচির দুর্ভিক্ষ ঘটে গেছে। এখন আপনার রুচি পরিশোধন করতে কাঠ খড় পোড়াতে হবে।

যান আমার থিয়েটারের মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে; আপনি ফ্লোরটা ভালো করে ঝাড়ু দিয়ে দিন। আমাদের এখানে দেয়ার ইজ নো শর্টকাট টু সাকসেস।

ফ্লোর ঝাড়ু দিতে দিতে ক্লুনি ঘেমে নেয়ে একাকার হলে এক থিয়েটার কর্মী তাকে বুদ্ধি দেয়, আপনি হিরো আলমকে অনুসরণ করুন। মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগে যোগ দিন। পুণ্যভূমিতে গিয়ে মাজার জিয়ারত করে আসুন। আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনার মনোবাঞ্ছা পূরণ করবেন।

বারাক ওবামা আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকে। দশাসই এক আমলা রিটায়ারমেন্টের পর সেখানে দন্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে উঠেছে। সে বারাককে দেখে বিরক্ত হয়। ওবামা এয়ারপোর্টে শিখেছে কামড় দিতে আসা লোককে স্যার বললে সে শান্ত হয়।

--স্যার আমাকে একটা সুযোগ দিয়েই দেখুন।

স্বগতোক্তির মতো লোকটা বলে, আমাকেই কে সুযোগ দেয়।

ওবামার কাকুতি মিনতি দেখে ধমক দেয়, ইউনুসের পক্ষে বিবৃতি দেয়ার সময় খেয়াল ছিলো না বারাক। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি কোথাকার! গেট লস্ট! এই কে আছিস; একে নিয়ে যা।

হেলমেট পরা এক মহাকাশ চারী এসে ওবামাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কিছু চড় থাপ্পড় দেয়, শখ কতো আম্লিক করতে আসছে; অই ব্যাডা জানস না, আম্লিক করতে গেলে রক্তে থাকা লাগে; যা ভাগ, নাইলে কিন্তু হারুনের ডেন্টাল ক্লিনিকে দিয়া আসুমনে।

ওবামা দৌড়ে পালাতে গেলে এক পুলিশ তাকে খপ করে ধরে ভ্যানে তোলে; সেইখানে আগে থেকেই বেড়ি পরা অবস্থায় বসে বিল গেটস, ইলন মাস্ক, জর্জ ক্লুনি।

ফেসবুকে কে যেন রটিয়ে দিয়েছে একদল সি আইএ এজেন্ট ঢাকায়। উন্নয়নের সরকারের বিরুদ্ধে যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্র করছে। আর যায় কোথায়, ফেসবুকে উন্নয়নের পাহারাদারেরা তাদের গল্প দাদুর আসরে ষড়যন্ত্রের শাখা-প্রশাখার গল্প ফেঁদেছে। রাগে ফুঁসছে বারো রকম লীগ। তাই গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের। ভ্যান চলতে শুরু করে।

সামনের সিটে বসা এক ছোট চুল সুঠাম দেহি জিজ্ঞেস করে, আপলোগ কিঁউ ইধার আয়া! আপকো কুচ কাহেনা হ্যায় তো মুঝে বলিয়ে। ইধার আনেকা হিম্মত ক্যায়সে হুয়া। লিজিয়ে থোড়াসা এনার্জি বিশকুট খাইয়ে!

শাহবাগে ট্রেচারে করে ভ্যানে তোলা হয় নোয়াম চমস্কিকে। পাশেই হারুনের ডেন্টাল ক্লিনিকে তার দুটি নড়বড়ে দাঁত তুলে নেয়া হয়েছে।

ভ্যান এসে দাঁড়ায় হারুনের ভাতের হোটেলের সামনে। সবাইকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। নোম চমস্কিকে প্রাথমিক চিকিতসা করা হলে, হারুন তাকে ডাল তুলে দিয়ে বলে, সলিড কিছু তো খাইতে পারবেন না। সুড়ুত সুড়ুত কইরা ডাইল খান। অন্যদের ডাল-ভাত আর মুরগীর ঝোল খেতে দেয়া হয়।

উপস্থিত এক হুজুর তাদের নসিহত করে, আপনাগো ভাগ্য ভালো যে স্যারের হাতে পড়ছেন। উনি ফেরেশতা আদমি। অন্যকেউ হইলে তো আপনাগো ক্রস ফায়ারে দিতো। উনি আপনাগো দেশে ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করতেছেন। বলেন আলহামদুলিল্লাহ। আমি বলি কি, যাওয়ার পথে জানের ছদকা হিসাবে আপনারা ওমরাহ কইরা যান।

এক মহিলা পুলিশ কেইট উইন্সলেটকে নিয়ে আসে।  জর্জ ক্লুনি কেইটের  কাঁধে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ইজ এভরিথিং অলরাইট কেইট!

কেইট হাত সরিয়ে দিয়ে বলে, এই তুমি আমায় স্পর্শ করলে কেন! আমাকে এতো সস্তা ভেবো না!

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: স্যাটায়ার মনের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

২৮৭ পঠিত ... ১৭:৩১, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top