ইন্টারনেট শাটডাউন ও একটি ঝালফ্রাই রান্না বৃত্তান্ত

১৬৩ পঠিত ... ১৬:৫২, মে ১১, ২০২৩

jhalfry

সকালে ঘুম ভাঙার পর মোবাইলটা হাতে নিয়েই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। সারা সপ্তাহ অফিস করে আজকের দিনটাও সকাল ৭টায় ঘুম ভাঙার কোনো মানে হয়? আজকে আবার এর মধ্যে খালা আসবে না, ভেবেছিলাম মোটামুটি বিকেল অবদি কাটিয়ে দিলেই লাঞ্চের ঝামেলাটা নিয়ে আর ভাবতে হতো না। রান্নাবান্না একদমই যে পারি না তা না, কিন্তু ছুটির দিনে মনটা চায় একটু আয়েশ করে ঝোল আলু সমেত মুরগির সালুনের সাথে সাদা ঝরঝরে পোলাও কিংবা ঝালফ্রাইয়ের সাথে সাদা ভাত আর সাথে একটা কাঁচামরিচ খেয়ে সুন্দর একটা ভাতঘুম দিতে। কিন্তু বিধিবাম, আমার হাতের রান্নাবান্না দিয়ে কাজ চলে গেলেও আয়েশ করার মতো রান্নাবান্না আমি করি না।  

ব্রাশ করতে করতে মনটা চাইলো আজ একটু ঝালফ্রাই রান্নাটা শিখে নিতে পারলে বেশ হয়, রেস্টুরেন্টে ঝালফ্রাই খেতে গেলেই মোটামুটি অফিসের দুই-তিনদিনের লাঞ্চের টাকা চলে যায়। চা বানাতে বানাতে ডিপফ্রিজে খুলে দেখা গেলো মাংস আছে অল্প। হোক তবে একটা এক্সপেরিমেন্ট, ভালো হোক বা খারাপ আমার রান্না নিয়ে তো আর কেউ রিভিউ দেবে না! মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইউটিউবে ঢুকতে গিয়েই দেখি ইন্টারনেট নাই, ব্রডব্যান্ড প্রোভাইডারকে গালি দিতে দিতে মোবাইল নেট অন করেও দেখি ঢোকা যাচ্ছে না। আরে ভাই, এতো মহাঝামেলায় পরা গেলো। ঘটনা বুঝতে ফোন দিলাম হাসিবকে, ফোন ধরেই হাসিব আমি বলার আগেই হাসিব বলে উঠলো ‘কীরে তর ইন্টারনেট আছে? আজকা সকাল থেকা নাকি শাটডাউন চলতাছে।’ শাটডাউন কেন? কাহিনি কী? হাসিব আবার  বলে উঠলো ‘আরে শালা কোন দুনিয়ায় থাকো, বিরোধীদলের বড়নেতারে খোপে ঢুকাইছে, কালকা থেকা রাস্তায় দলের লোকজনরে পুলিশ পিটায়া ছাতু বানাইতাসে, এইসব খবর নেটে আইলে গ্যাঞ্জাম হইবো না।’ হাসিবের কথাবার্তা শুনে আমার মাথায় রীতিমতো বাজ পরার মতো অবস্থা। নেতারে ধরছে ভালো কথা, কিন্তু তাই বলে কি আমি ঝালফ্রাই খাবো না? ৬তলা নেমে আজকে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার মতো ইচ্ছা বা অবস্থা কোনোটাই আমার নেই। ভাবলাম মাকে ফোন দিয়ে জেনে নেই, মাকে ফোনে পাওয়া গেলো না। শেষ ভরসা হিসেবে প্রেমিকাকে ফোন দিলাম, ফোন ধরে ঝালফ্রাইয়ের রেসিপি দেওয়া তো দূর, গতকাল সন্ধ্যা থেকে ফোন দেইনি দেখে একগাদা কথা শুনিয়ে ফোন রেখে দিলো। দূর শালা আর ভালো লাগে না। রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে আর উলুখাগড়ার ঝালফ্রাই খাওয়ার সাধ নষ্ট হয়।

আজকের দিনটাই ছিলো ইন্টারনেট শাটডাউন করার, আমি তো অনলাইনে গিয়ে সহমত ভাইদের গেস্টরুম নিয়ে কিছু লিখতাম না, না রাতের ভোট নিয়ে কিছু বলতাম! আমার তো চাওয়া ছিলো একটু ঝালফ্রাইয়ের রেসিপি, রেসিপি দেখে রান্না করে তারপর সাদা ভাতের সাথে ঝালফ্রাইয়ের মাখো মাখো প্রেমের পদ্য চালান করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারলেই আমার ছুটির দিনটা একদম লারেলাপ্পা (মানে আনন্দময়) হয়ে যেতো। ক্ষুধাও বেড়ে যাচ্ছে, কোন উপায়ন্তর না দেখে মন খারাপ করে ভাতের সাথে ডিম সিদ্ধ বসিয়ে দিয়ে আয়েল্টসের জন্য কেনা বইগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হলো, এগুলো নিয়ে বসা দরকার এবার, ভোটও দিতে পারি না ঝালফ্রাইও খাইতে পারি না, এই দেশে থাইকা আর হবে, যাইগা!

১৬৩ পঠিত ... ১৬:৫২, মে ১১, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top