আজ প্রথম আলোতে ‘জলাভূমি, গাছপালা উজাড়, ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ আসে না’শিরোনামে ইফতেখার মাহমুদের একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া হয়েছে সেখানে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ঢাকায় আর কোন শৈত্যপ্রবাহ আসেনি। গত এক যুগ ধরে ঢাকায় প্রতি তিন বছরে একটি শৈত্যপ্রবাহ দেখা গেছে।
এই বছরের দিকে তাকালেও দেখা যাবে, সর্বসাকুল্যে এই বছর ঢাকায় শীত পড়েছে মাত্র তিনদিন। সেটাও শৈত্যপ্রবাহ না। শুধু যে শীত কমে গেছে তা না, ঢাকায় গ্রীষ্মের সময়ও বাড়ছে অসহ্য গরম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনের অন্যতম কারণ জলাভূমি কমে যাওয়া, গাছপালা উজাড় করে ফেলা।
এই যে ঢাকায় শীত কমে গেছে, গরম বেড়ে গেছে-এর জন্য কিন্তু আলাদা করে ধন্যবাদ পেতে পারে রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা। কারণ, কিছুদিন পরপর উন্নয়নের নামে গাছ কেটে ফেলার খবর আমরা প্রায়ই শুনি। শোনা যায়, জলাভূমিগুলোর অবৈধ দখলের কথাও। এসবের পেছনে যে, নেতা ও প্রভাবশালীদের অবদান আছে তা তো অনেকটা ওপেন সিক্রেটই।
পাঠক ভাবছেন, তাদের ধন্যবাদ কেন দিচ্ছি? কেন দিচ্ছি সেটাই বলছি।
শীত কমে যাওয়া ও গরম বেড়ে যাওয়ার শুধু নেতিবাচক দিক নেই। আছে বেশ কিছু ইতিবাচক দিকও।
শীত কম পড়া মানে, শীতের জামা কেনার বাজেটও কমে যাওয়া। গরম জামা ছাড়া দুই-তিন দিনের শীত কোনভাবে কাটিয়ে দিতে পারলে, শীতের জামার টাকাটা বেঁচে যাবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এমন সময়ে বেঁচে যাওয়া এই টাকা মানুষ নিত্যপন্যের বাজেটে যোগ করতে পারবে। দেশের মানুষের এমন সুবিধার কথা ভেবেই হয়তো নেতা ও প্রভাবশালীরা গাছ কাটেন, জলাভূমি ধ্বংস করেন। একটা ধন্যবাদ তো তারা পেতেই পারে।
আলাদা করে ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন শহরের মেয়ররাও। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনের পেছনে তাদেরও অবদান আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ূদূষণও ঢাকায় শীত ঢুকতে বাঁধা দেয়। সাথে আছে, যানবাহনের বৃদ্ধি, দালানকোঠা নির্মাণ।
এই যে দিনের পর দিন ঢাকা বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকছে, কীভাবে? মেয়রদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই নয় কি? ধন্যবাদ থেকে তারা কেন বঞ্চিত হবেন? আপনাদেরকেও ধন্যবাদ প্রিয় মেয়র।
গরম বেড়ে যাওয়ার ইতিবাচক দিকও কিন্তু আছে। গরম বেশি পড়লে পানি গরম করতে, চা বানানোতে খরচ করতে হবে না বাড়তি গ্যাস। গরমের দিনে ট্যাংকির পানি এমনিতেই গরম থাকে। ট্যাংকির পানিতে একটু চা পাতা, চিনি দিয়ে দিলে গ্যাস ছাড়া চা বানানোও হয়ে যাবে। আর রোদের মধ্যে ডিমভাজি করার ভিডিও তো সোস্যাল মিডিয়াতে প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে। গরম আরেকটু বাড়লে ভাত, তরকারি রান্নার কাজও ছাদে বসেই সেরে ফেলা যাবে। খরচ হবে না বাড়তি গ্যাস।
হুহু করে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার এই দুর্দিনে মেয়ররা তো অন্তত আমাদের গ্যাসের বাজেট কিছুটা হলেও কমানোতে সাহায্য করছেন। আপনাদের ধন্যবাদ।
প্রিয় নেতা, প্রভাবশালী, মেয়র ও যারা যারা যুক্ত আছেন-আপনারা আরও এগিয়ে যান। শহরে আরও বেশি বেশি করে গাছ কাটুন, জলাভূমি ধ্বংস করুন। জনগণের উপকার করুন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন