বুয়েট-ঢাবির সব ছোটলোকগুলা

১৬৪৫ পঠিত ... ১৮:০০, অক্টোবর ১৮, ২০২২

Buet-du-chotolok

সকালে একটু নীলক্ষেত যাওয়ার দরকার ছিলো। বকশীবাজার সিগন্যালে এসে দাঁড়ালাম। রিকশা নেয়া দরকার! এ এলাকায় রিকশাভাড়াটা আবার একটু বেশি, বুয়েট-ঢাবির ছেলেপেলেরা চালায় তো, তাই। হলের সামনে দিয়ে ঠিকানা বাস পক করে চলে গেলো। বাসের হেল্পার আমারে দেখে চিৎকার করে বলে উঠলো ‘কিরেএএএএ।‘ আমি হাসিমুখে হাত নাড়লাম। ছেলেটা আমার বন্ধু, বুয়েট ট্রিপলই-তে পড়ে। বাবা গরীব, আচার-আচরণ খুব একটা ভালো না। তবে দিলখোলা। সারাদিন হেল্পারি করে। রাতে এসে মেয়েদের নোংরা ম্যাসেজ দিয়ে এক্সপোজ হওয়াটা ওর ফেভারিট হবি। মৌমিতায় দেখলাম বাস চালাচ্ছে আমার আরেক বন্ধু, ঢাবি ফার্মেসির। সামনের ভাঙা গ্লাসের মধ্যে দিয়ে চোখ টিপ মারলো আমাকে, আমিও চোখ নাচালাম। তারপর সরিয়ে নিলাম চোখ, গরীব ঘরের সন্তানদের খুব একটা পছন্দ করি না..

299990508_1705902416439714_6859664612462929965_n

ক্যাক ক্যাক করতে করতে ঢাবির কিছু রিকশাওয়ালা ডিএমসির গেটের সামনে থাপড়াথাপড়ি করছে। আমার গ্যান্জাম ভাল্লাগে না। একটু সরে ভর্তাবাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। এই জন্যই ঢাবির রিকশাওয়ালাদের ভাল্লাগে না, হুদাই ঝগড়াঝাটি করে! সেদিন ইতিহাস ডিপার্টমেন্টের এক ছাত্রের রিকশায় উঠে সেই বিপদ! ও কয় সিরাজুদ্দৌলা ভালো, আমি কই খারাপ। কিছুক্ষণ তর্কাতর্কি করে চুপ হয়ে গেলো! মনে করলাম সব ঠাণ্ডা, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখি রিকশা ঘুরায়ে শহীদ মিনারে নিয়ে গেলো! ফোন দিয়ে অমুক হল তমুক হলের কিছু নেতা রিকশা নিয়ে বের হয়ে আসলো,একজন আনলো সিএনজি। তারপর সিএনজির পাছা থেকে হকিস্টিক বাইর করে আমাকে দিলো উদুম ক্যালানি! আমার কী দোষ ভাই, আমি কী করলাম? চোখ চুলকাতে গিয়ে ব্যথায় ‘আহ’ করে উঠলাম। ভুরুর ক্ষতটা শুকায়নি। কিন্তু চোখের মধ্যে কুটকুটু করেই যাচ্ছে। চোখ উঠেছে কিনা কে জানে!

ঢাবির পালিতে পড়া একটা রিকশাওয়ালা পেলাম।এরা রিকশা ভালোই চালায় কিন্তু ত্রিপিটকের ভাষায় কথা বলে। কান-মাথা ধরে যায়। ত্রিশ টাকা চাইলো, তাও গেলাম না। চারুকলার কারো রিকশায়ও যাবো না। একবার তো ওদের রিকশায় উঠে গান্জা ডিলার বলে ধরে নিয়ে গেছিলো পুলিশ। পরে ঢাবি ল’তে পড়া এক বন্ধু আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে (সে রমনা থানার এসআই এর ব্যক্তিগত রিকশাচালক)।

আজ কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিয়ে আলাপ করতে ইচ্ছে করছে, নিউক্লিয়ার ইন্জিনিয়ারিং বা পিউর ফিজিক্সে পড়া কাউরে পেলে ভালো হতো! কিন্তু ওই শালাদের সমস্যা হল থিওরী মারাতে মারাতে কখন লেগুনার সাথে বং করে মেরে দেয় ঠিক থাকে না! ঝামেলায় পড়ে গেলাম। তাহলে কি ফিন্যান্স ব্যাংকিং বা ঢাবির আইবিএতে পড়া কোন রিকশাওয়ালা নেবো? বা ইকনোমিক্স? নতুন কোন বিজনেস আইডিয়া পেলে মন্দ হয় না!

কোত্থেকে চুল উড়াতে উড়াতে একটা মেয়ে রিকশা নিয়ে সামনে এসে পকাৎ করে থামলো। দেখে মনে হয় উচ্চশিক্ষিত। বাট লাভ কী, চালায় তো রিকশা। মেয়েটার মুখ এলইডি বাতির মত চকচক করছে। আমাকে বললো ‘হেই, ব্রো, আমি বুয়েট CSE এর, ইসিই বিল্ডিং এর ওদিকে যাচ্ছি। গেলে উঠে বসো, ছেড়ে দিয়ে আসি।‘ আমি চোখে লাইট পড়া সাপের মত তন্ময় হয়ে সিটে গিয়ে বসলাম। ভাড়াও মিটালাম না। কিন্তু একি, ছিট ছেঁড়া! এত ভালো জায়গায় পড়া একটা মেয়ের রিকশার এই হাল কেন কে জানে! হয়ত বেশিই গরীব! সে মৃদুতালে রিকশা চালাচ্ছে। তার শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে! খানিক শুকনা ,খানিক ভেজা সেই সেলোয়ার কামিজ তার পিঠে আঁকছে অদ্ভুত মায়াবী সব ঘামাদ্র আল্পণা! মেয়েটা সি প্রোগ্রামিং আর পাইথন নিয়ে কি বালছাল যেন বকছে। পাশে মাত্র একটা রিকশা আরেকটার সাথে বাঁধায়ে দিয়ে হলের বড় ভাইদের পাওয়ারের হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু আমার কিছুই কানে যাচ্ছে না। আমি যেন পৃথিবীতে নেই, সম্মোহিতের মত মেয়েটির রিকশা চালানো দেখছি! কি দারুণ ছন্দ, কি স্মুদ গতি… আহ, কী অস্বাভাবিক একাগ্রতা! জীবনে ১২৭৭৩৯২৯২৬২৯৩৯৩২৭৬২৬বারের মত কোন মেয়ের প্রেমে পড়লাম মনে হল....

আমাকে নীলক্ষেত নামায়ে দিলো ও, হাতে ৫০টা টাকা গুঁজে দিলাম। ভাবলাম ২০ টাকা ফেরত দিবে, দিলো না। রিকশা ঘুরায়ে পাঁই করে চলে গেলো। যাক গা,বুয়েটে যেহেতু পড়ে, ভাড়া তো বেশি নিবেই। গুটিগুটি পায়ে পাশের রিকশাস্ট্যান্ডে গিয়ে ঢুকলাম। নিজের রিকশাটা বের করলাম। ধুলা জমেছে,অ্যা প্রণ খুলে রিকশাটা মুছে হক মওলা বলে দিলাম টান। কুত্তার মত সারাদিন রিকশা চালালাম। আমার শরীরও ঘামে ভিজে গেলো! রোদে পুড়ে লাল হল মুখ। দিলাম ট্রাফিক পুলিশের সাথে বাধায়া। মাইর খাইলাম। তারপর ট্রাফিক পুলিশরে মার্ডারশোধ বলে গালি দিতে দিতে বুঝতে পারলাম বাপ বড়লোক না হলে জীবনটা আসলেই অনেক কষ্টের...

১৬৪৫ পঠিত ... ১৮:০০, অক্টোবর ১৮, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top