এই ছবিগুলো দেখে সিনেমাগুলোর গল্প সম্পর্কে অনলাইন বুদ্ধিজীবীরা যা ধারণা করতে পারেন

৪১৮৬ পঠিত ... ২১:২৯, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯

বাংলার ফেসবুকে হাজারো মানুষ ও ফেক আইডির সঙ্গে বাস করে একটি বিশেষ শ্রেণী। বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতাধর শ্রেণীকে অনলাইন/ফেসবুক বুদ্ধিজীবী বলা হয়ে থাকে। তারা সব কিছু জানেন, সব বোঝেন। কোনো সিনেমার একটা দৃশ্যের ছবি দেখেই তারা বলতে পারেন, সিনেমার গল্প কী, উদ্দেশ্য কী, বিধেয় কী! এই যেমন মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর পরবর্তী সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’-এর দুটা মাত্র দৃশ্য (অথবা বলা যায় দুটি চরিত্রের ছবি) দেখেই এমন কিছু ফেসবুক বুদ্ধিজীবীরা বুঝে ফেলেছেন, সিনেমার গল্প কী, সিনেমায় কী দেখানো হয়েছে, কী উপস্থাপন করা হয়েছে ইত্যাদি। দেখুন, তাদের অলৌকিক ক্ষমতার নমুনা-

একটা ছবি দেখেই সিনেমার গল্প, চরিত্রায়ন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, বিধেয় সব বুঝে ফেলা এই অনলাইন বুদ্ধিজীবীরা নিচের এই কয়েকটি সিনেমার দৃশ্য দেখলে সিনেমার গল্প সম্পর্কে কেমন ধারণা করতেন, তা ভাবতে চেষ্টা করেছিল eআরকির 'অনলাইন সিনেমা বুদ্ধিজীবী' বিশেষজ্ঞ দল!

 

১#

সালমান শাহ একজন ট্যুরিস্ট গাইড, মৌসুমী একজন ট্যুরিস্ট। মৌসুমী বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছিল ‘৫০০ টাকায় ঘুরে আসুন মধুপুর শালবন’ প্যাকেজে। তাদের গাইড ছিল সালমান শাহ। এক ফাঁকে সে তাকে প্রেমের ফাঁদে ভুলিয়ে অন্যদের কাছ থেকে দূরে সরে গহীন বনে হারিয়ে যায়। এবং তাকে অপহরণের করার উদ্দেশ্যে ভুলিয়া ভালিয়ে গোপন আস্তানার দিকে নিয়ে যায়। এরপর তাকে খুঁজে না পেয়ে বন্ধুরা কী করে, নায়কই বা কী করে? এই সুদর্শন ভিলেনের ভাগ্যেই বা কী অপেক্ষা করছে তা নিয়েই সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমাটি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নায়িকা ভিলেনের কাছে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করছে!

 

২#

এই সিনেমার নায়িকা সাগরতীরে এক জেলের কন্যা। এক শীতের রাতে বাবার সাথে রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে পরে রোজ নামের সেই মেয়েটি। সাগরে ভেলায় নিয়ে নেমে পড়ে। সাগরে নেমে হন্নে হয়ে জ্যাককে খুঁজতে থাকে সে। হুট করে ভেসে ওঠে মৎস্যপুত্র জ্যাক। মৎস্যপুত্র জ্যাক আর মানবকন্যা রোজের গভীর প্রেম। কিন্তু রোজ জানায় তার বাবা এই বিয়ে মেনে নেবেন না। জ্যাকও জানায় তার বাবার আপত্তির কথা। এরপর তারা কী করবে? ভেলায় চড়ে হারিয়ে যাবে গভীর সমুদ্রে? কোন দূর দ্বীপে বাঁধবে সুখের ঘর? জানতে হলে দেখতে হবে জেমস ক্যামেরন নির্মিত অমর প্রেমের ছবি ‘টাইটানিক’।

 

৩#

সিমরান আর রাজ একটি সংঘবদ্ধ চক্রের দুই ঘাগু ছিনতাইকারী। ভারতের ট্রেনে ট্রেনে কেটে যায় তাদের জীবন। পকেটমারি আর ছিনতাই করার পাশাপাশি তারা একে অপরের সাথে প্রেমও করে। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে একের পর এক ছিনতাই করে যাচ্ছে। একদিন এক স্টেশনে ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে ছিনতাই করে দৌড় দেয় সিমরান আর রাজ। রাজ ট্রেনে উঠে পড়লেও সিমরান উঠতে পারছিল না… কিন্তু ট্রেন চলে যাচ্ছে প্লাটফর্মের বাইরে। আজই কি তবে শেষ এই জুটির প্রেম? তবে কি ধরা পড়ে যাবে সিমরান? এই গল্প নিয়েই যশ রাজ ফিল্মসের ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার রোমান্টিক সিনেমা দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে!

 

৪#

বায়োপিক জনরার সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে ছোট্ট কালো ছাগল পুটু। মনপুরা গ্রামের এক গরীব জেলের মেয়ে পরীর খুব ভালোবাসার ছাগল পুটু। ছোটবেলায় মায়ের যত্ন না পেয়ে যখন প্রায় মৃত দশা, তখনই তাকে গভীর মমতায় বুকে তুলে নেয় পরী। মনপুরায় ঘুরতে আসে এলাকার প্রভাবশালী গাজী মিয়ার ছেলে সোনাই। এখানে এসে নদীর নির্মল বাতাসে ক্ষুধা পেয়ে যায় এবং মনে কাচ্চি খাওয়ার বাসনা জাগে সোনাইয়ের। তখনই চোখ পড়ে পুটুর উপর। কিনে নিতে চায় সে! কিন্তু পরী দেয় না। পরীর সাথে প্রেমের অভিনয় করতে থাকে সোনাই। অনেক ভুলিয়ে ভালিয়েও যখন কিছু হচ্ছিল না, তখন একদিন সাধারণ গ্রামবাসীর সাজে পুটুকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসে সোনাই। কিন্তু পরীর ভালোবাসা তো মিথ্যা হতে পারে না… তাই পুটু কৌশলে সোনাইকে আহত করে বুকের উপর উঠে শাসিয়ে এ যাত্রা রক্ষা পায়। কিন্তু তারপর? পুটু কি পারবে সোনাইয়ের কালো থাবা থেকে রক্ষা পেতে? পরী কি পারবে তার প্রিয় এই ছাগলকে কাচ্চির ডেকচিতে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে? জানতে হলে দেখতে হবে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এই বায়োপিক মনপুরা।

 

৫#

কপিলা আর কুবের, পদ্মা নদীর পারে তাদের সুখের প্রেমের জীবন কাটছে। বিয়ে করেই ফেলবে। কিন্তু সুখ নিতান্তই একটি সাময়িক ভ্রম, ইল্যুশন। তাই নদীর মতো ঝড় ওঠে তাদের জীবনেও। কুবের স্থানীয় আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী, তাই মনের সুখে নৌকা চালায় সে। অন্যদিকে কপিলা বিএনপির মহিলা শাখার নেত্রী, সে ধানক্ষেতে কাজ করে, ধানের শীষ নিয়েই তার যত কারবার। কুবের অনেক চেষ্টা করেও কপিলাকে আওয়ামী লীগে আনতে পারছে না। আওয়ামী লীগে আসলে ব্লাউজ পাওয়া যাবে, অথচ কপিলা তাও কিছুতেই বিএনপি ছাড়তে চাচ্ছে না। সংকট ঘনীভূত হয় যখন দুই বাড়ির লোকজন বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। একটা পর্যায়ে কুবের চলে যেতে চায় গ্রাম ছেড়ে দূর দেশে। কপিলা তাকে বলে, ‘আমারে নিবা না লগে মাঝি?’ কুবের উত্তর দেয় ‘তুই তো লীগ করস না! আমার নৌকায় তোর ঠাই নাই! তুই ধানক্ষেতেই থাক!’ এরপর কী হয়? প্রেম কি হার মানবে রাজনীতির কাছে? এমন গল্প নিয়েই পলিটিক্যাল এবং সামাজিক অ্যাকশনধর্মী সিনেমা ‘পদ্মা নদীর মাঝি।’

 

৬#

একটি সবজির বাজার নিয়েই মূলত এই সিনেমার গল্প। একটি মেসেজ ২০ জনকে না পাঠিয়ে এড়িয়ে যাওয়ায় চঞ্চল চৌধুরী কাওরান বাজারে সবজি বিক্রি করে। সেই একই বাজারে সবজি কিনতে আসে নাবিলা। প্রথমদিন তাকে দেখি প্রেমে পড়ে যায় চঞ্চল। কিন্তু চঞ্চল তাকে নিজের সবজি বিক্রেতা পরিচয় গোপন করে। নিজের এক লোজ ছোটভাইকে (ছবিতে সর্ববামে) কুমড়া ধরিয়ে দিয়ে তাকে সবজি বিক্রেতা সাজিয়ে সে বাজারের মালিক সমিতির একজন মেম্বার সাজে। এরপর শুরু হয় তাদের প্রেম! নাবিলা কি জানতে পারে চঞ্চলের আসল পরিচয়? এই নিয়েই সিনেমা আয়নাবাজি। চঞ্চল সিনেমার এক পর্যায়ে সবজি ভাজি করার প্রসঙ্গে নাবিলাকে বলে, 'আয় না ভাজি!' সেখান থেকেই এই 'আয়নাবাজি' নামের উৎপত্তি!

 

৭#

মাধবন (সর্বডানে) একজন পাঠাও রাইডার। একদিন হুট করে একটি রাইড রিকোয়েস্ট পেয়ে তিনি দেখেন, আমির খান ও শারমান জোশি দুইজন যাত্রী একসঙ্গে এক বাইকে উঠতে চায়। কিন্তু এক বাইকে তিনজন উঠানো তো নিয়মের বাইরে। মাধবন প্রতিবাদ করলে তারা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে মাধবনকে ভয় দেখায়। এমনকি হেলমেট পরতে বললে তারা হেলমেট পরতেও রাজি না হয়ে বলে, 'আমরা বাইক ছাড়া হেলমেট পরি, বাইকে হেলমেট পরি না। এই ব্যাটা ইডিয়ট, সামনে টানতে থাক এত কথা কস ক্যান!' মূলত বাইকসহ তারা মাধবনকে জিম্মি করে নেয়। এমনই এক সোশ্যাল পলিটকাল ড্রামা থ্রিলার মুভি, নাম থ্রি ইডিয়টস। 

 

৮#

শিকাগোর বেশ অবস্থাপন্ন এক পরিবারের সন্তান কেভিন হুট করে এক প্লেন দুর্ঘটনায় হারায় বাবা-মা এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের। এতিম হয়ে পড়া কেভিন সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে। বিপুল ব্যাংক ব্যালান্স পেয়ে উচ্ছন্নেই যেন চলে যাচ্ছে কেভিন। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে নীল হয়ে যাচ্ছে। একদিন সে একাই চলে আসে নিউ ইয়র্ক। নিউ ইয়র্কের মাদক জগতে হারিয়ে যায় কেভিন। তখনই তাকে বাঁচাতে দেবদূতের মতো আবির্ভাব হয় হ্যারি আর মার্ভের। বয়সে বড় হলেও এরাই যেন কেভিনকে ফিরিয়ে আনবে আলোর পথে। একদিন নিউ ইয়র্কের এক ব্যস্ত রাস্তায় কোকেন সেবনকালে কেভিনকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। তারপর থেকে তারাই চেষ্টা করে যায় কেভিনকে মাদকের থাবা থেকে বের করতে। তারা কি পেরেছিল কেভিনকে বন্ধু হয়ে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে? জানতে হলে দেখতে হবে করুণ ট্র্যাজেডি সিনেমা ‘হোম এলোন: লস্ট ইন নিউ ইয়র্ক’। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইয়াবা সেবন করে চোখমুখ আউলা হয়ে গেছে কিশোর কেভিনের, তা দেখে আঁতকে উঠেছে তাঁর বন্ধু হ্যারি আর মার্ভ!

৪১৮৬ পঠিত ... ২১:২৯, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top