অকৃতজ্ঞ

১২৮৬ পঠিত ... ২০:২১, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৬

একদিন সম্রাট আকবর বীরবলকে আদেশ করলেন, ‘চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এমন দু’টি প্রাণী হাজির করতে, যাদের একটি হবে স্বভাব-কৃতজ্ঞ আর অন্যটি হবে জাত-অকৃতজ্ঞ।’
বীরবলের তো চক্ষুস্থির। এমন খেয়ালীপনার অর্থ কি? তাকে চুপ থাকতে দেখে সম্রাট ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, ‘ব্যর্থ হলে মৃত্যু অনিবার্য।’
বীরবল নতমুখে নিজের ঘরের দিকে রওনা হলেন। দরবারের অনেকে তো মহা খুশি। বীরবল এবার ব্যর্থ হবে।তাদের পথের কাঁটা দূর হচ্ছে তাহলে। নির্ঘাত মরতে বসেছে বীরবল।
এদিকে বীরবলকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখে মেয়ে রঙ্গীলা জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে?’
সবকিছু খুলে বলতেই সে বাবাকে কোন দুশ্চিন্তা না করতে বলল।
পরেরদিন যথাসময়ে বীরবল দরবারে হাজির হলেন। সঙ্গে মেয়ের পরামর্শমত তাঁদের পোষা কুকুর ও মেয়ে-জামাই যষ্ঠী। বীরবলকে দেখে সবাই রীতিমত অবাক।
সম্রাট গম্ভীর সুরে বললেন, ‘কী বীরবল,এনেছ না কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞকে?’
সম্রাটকে কুর্নিশ করে বীরবল সঙ্গের কুকুর আর জামাইকে দেখিয়ে দিল। সম্রাট রেগে গিয়ে বললেন, ‘তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছ? তোমার স্পর্ধা তো কম নয়।’
বীরবল নির্ভীকচিত্তে বললেন, ‘আজ্ঞে জাঁহাপনা, আপনি সব শুনলেই বুঝতে পারবেন। এই যে কুকুরটি দেখছেন, এ হচ্ছে স্বভাব-কৃতজ্ঞ। এ রকম কৃতজ্ঞ প্রাণী আর দ্বিতীয়টি এই দুনিয়ায় নেই। মনিবের সুখ-দুঃখে বিপদ আপদের সাথী। কোন অবস্থাতেই মনিব কে ছেড়ে যায় না। আর এই লোকটি হচ্ছে আমার মেয়ে জামাই। এরা হচ্ছে জাত-অকৃতজ্ঞ। যত খাতির যত্ন করুন, উপহার দিন, কোনদিনই এদের খাঁই মিটবে না; এরা অকৃতজ্ঞ থেকেই যাবে।’
সম্রাট খুব খুশি হলেন। পাশাপাশি হুকুম জারি করলেন যে তাঁর রাজত্বে কোন অকৃতজ্ঞ প্রাণীর স্থান হবে না। তাই তৎক্ষণাৎ জামাই ষষ্ঠীর গর্দান নেয়ার আদেশ করলেন।
বীরবল সহসা বলে উঠলেন, ‘মহামাণ্য সম্রাট, আপনার নির্দেশ সকল অকৃতজ্ঞের জন্যই প্র্রযোজ্য বটে। কিন্তু, জাঁহাপনাসহ এখানে আমরা সবাই তো কারও না কারও জামাই। তাহলে কি...’
বীরবলের কথা শেষ হবার আগেই গোটা দরবার হাসিতে ফেটে পড়ল। সম্রাটও হাসতে লাগলেন। বীরবলের বুদ্ধিমত্তা ও কৌতুকরসের জন্য সম্রাট তাকে প্রচুর উপহার দিলেন।

১২৮৬ পঠিত ... ২০:২১, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৬

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top