বুয়েটের সময়টা জটিল কমরেড!

৩০৫ পঠিত ... ০০:২৭, এপ্রিল ০৩, ২০২৪

5 (6)

লেখা: মেঘমল্লার বসু

যে জিনিসের অস্তিত্বই নেই, সেই জিনিস নিষিদ্ধ করা না করার আলাপও শেষ বিচারে অবান্তর। বইয়ের পাতায় যাকে ‘ছাত্র রাজনীতি’ বলে, সেই জিনিস ১৯৯০ সালের পর থেকেই আর বাংলাদেশে নাই। ছাত্রদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা পণ্যের দাম কমানোর লড়াই করা, হলের খাবারে ভর্তুকি দিতে প্রশাসনকে চাপ দেওয়া, প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়বে এহেন নীতি গ্রহণ করা থেকে শাসককে আটকানো-এগুলো বহুদিন ধরেই 'মেইনস্ট্রিম' ছাত্র রাজনীতিতে অনুপস্থিত।

যেসব বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো এসব নিয়ে কথা বলে তারাও সেই ক্রিটিকাল ম্যাস পার করতে পারে নাই যাতে তাদের রাজনীতিকেই মূলধারার ছাত্র রাজনীতি হিসেবে জনগণ চিনবে।

ফলে সাধারণ মানুষের কাছে 'ছাত্র রাজনীতি' মানে গেস্টরুমই, গণরুমই, ম্যানার শেখানোর নামে পোলাপানকে র‍্যাগ দিয়ে ট্রমাটাইজ করাই। শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার নাম নিতে নিতে গলার রগ ফুলায়ে ফেলাই। হলের দোকানে লাখ টাকার বাকি রাখাই, যাবতীয় দোকান-পাট থেকে টেন্ডার তুলে পকেট ভরানোই।

ছাত্র রাজনীতি বলতে যে বুয়েট এটাকেই বুঝাচ্ছে তাতে আমাদের মর্মপীড়া ছাত্রলীগের থেকে বেশি ছাড়া কম হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা, বাস্তবতাই। 'স্বোয়াহী' ছাত্র রাজনীতি বলে কিছু বুয়েট গত এক যুগে দেখেনি। ২০১৯ সালে যখন আবরার হত্যাকাণ্ড হয় তখন ছাত্রলীগ ব্যাতীত অন্য কোনো সংগঠন বুয়েটে ক্রিয়াশীলই ছিল না। চাইলে বলা যায়, ছাত্র রাজনীতি আদতে বুয়েটে আরও বহু বছর আগেই ডিফ্যাক্টো নিষিদ্ধ ছিল, শুধু ছাত্রলীগের অস্তিত্ব ছিল। আমরা বাইরে থেকে গিয়ে বুয়েটের পাশে দাঁড়িয়েছি বটে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ভিতরে প্রগতিশীলদের কোনো সাংগঠনিক কাঠামোই ছিল না, যা ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে সংগঠিত ছিল। ফলে ছাত্র রাজনীতি থেকে বুয়েট ন্যূনতম ফায়দা পায়নি, খালি যন্ত্রণাটা পেয়েছে।

তাদের প্রেক্ষাপটে তারা তাদের জন্য সবচেয়ে স্ট্র‍্যাটিজিক সিদ্ধান্ত ছিল তাই নিয়েছে। এখন বুয়েটের এই সিদ্ধান্ত দেশের কোণায় কোণায় অনুকরণ করা উচিত এগুলোও রাজনৈতিক বিচার বিবর্জিত কথাবার্তা। হর্সেস ফর কোর্সেস, ওয়ান সাইজ ডাজেন্ট ফিট অল। সব পলিটির নিজস্ব হিসাব-কিতাব আছে। উদাহরণস্বরূপ, জাবিতে ছাত্রলীগ ধর্ষণ করলে প্রগতিশীল সংগঠনগুলো আন্দোলনে জরুরি ভূমিকা রাখে। ফলে, স্বভাবতই সেখানে ধর্ষণ হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি কেউ করে না।

রাজনীতি সচেতন যেসব মানুষের এই অস্বস্তি হচ্ছে যে বিরাজনীতিকিকরণের নিও লিবারেল প্রজেক্ট এই আন্দোলনের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক রসদ পাচ্ছে তাদের কি লড়াই করার তাকত আছে? হিযবুত তাহরীর বা ছাত্র শিবিরও তো বুয়েটে নিষিদ্ধ। তারা প্রক্সি মাধ্যমে নিজেদের এজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে আমরা পারব না কেন! যে প্রগতিশীল ও বামপন্থী ছেলেমেয়েরা বুয়েটে একাধারে ছাত্রলীগ ঠেকাতে ও ইসলামিস্টদের প্রভাব বলয় বাড়তে না দেওয়ার জন্য লড়ছে তাদের পাশে দাঁড়ানোই এখন আমাদের কাজ। ছাত্রদের যন্ত্রণাই যদি চিনতে না পারি, তাদের নিরাপত্তার জন্য যদি আওয়াজই তুলতে না পারি তবে ছাত্ররা ভরসাটা করবে কেন?

সময়টা জটিল কমরেড। কোনো মুখস্থ কথা বলে ছাত্রলীগকে রাজনৈতিক স্পেইস তৈরি করে দিয়ে ইউজফুল ইডিয়েটের কাজ করা যাবে না।

৩০৫ পঠিত ... ০০:২৭, এপ্রিল ০৩, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top