লেখা: সাইয়েদ আবদুল্লাহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী দ্বীপান্বিতা বিশ্বাস কর্মরত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে। স্বামী আর তিন বছরের এক সন্তানকে নিয়ে মৌচাকের এক বাসায় থাকতেন তিনি।
গতকাল রাতে শান্তিনগর থেকে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলেন দীপান্বিতা। হঠাৎ ওপর থেকে একটা ইট সরাসরি তার মাথার ওপর পড়ে। মুহূর্তের ভেতর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি এবং তাৎক্ষণিকভাবেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
পরে রমনা থানা থেকে ফোন দিয়ে দ্বীপান্বিতার স্বামীকে এই মৃত্যুর কথা জানানো হয়। আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নেওয়া একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। ওই ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে হাতে ব্যাগ নিয়ে রাস্তার ফুটপাত দিয়ে আর দশজন মানুষের মতোই হেঁটে যাচ্ছিলেন দ্বীপান্বিতা। সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে ওপর থেকে হঠাৎ মাথায় কিছু একটা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
[অনেক জায়গায় দেখলাম এটা বলা হচ্ছে যে নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়েছে নিচে। আবার অন্য একটা সোর্স থেকে দেখলাম পাশে নাকি কোন নির্মাণাধীন কোন বিল্ডিং ছিলোনা। তাহলে ইটটা কি অন্য কোন উপায়ে পড়েছে? এই ব্যাপারে এখনও ধোঁয়াশা আছে। তাই লেখার ভেতর আমি শুধুমাত্র ইট পড়ে মারা যাওয়ার ব্যাপারটা লিখেছি। এক্সাক্ট কোন কারণে ইটটা পড়েছে, সেটা নিশ্চয়ই তদন্ত শেষে বের হয়ে আসবে। তার আগ পর্যন্ত আমি এইটা কনফার্ম করছি না]
হয়ত বাড়িতে তার তিনবছর বয়সী সন্তানটা মায়ের অপেক্ষায় বসে ছিলো অন্য দিনগুলোর মতোই। হয়ত দ্বীপান্বিতা সারাদিন অফিস শেষে করে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরছিলেন মেয়েকে গিয়ে কোলে তুলে নিতে। কিন্তু একটি মুহূর্ত হঠাৎ কেড়ে নিলো সবকিছু। দ্বীপান্বিতা তো শুধু একাই চলে গেলো না, চিরতরে এতিম হয়ে গেলো ওই ছোট্ট শিশুটা, ছোট্ট সংসারটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো স্বামী বেচারার। কত স্বপ্ন, কত আশা— এই মুহুর্তে সবকিছু শেষ!
কী এক অনিরাপদ শহর আমাদের! প্রতিটা গলিতে গলিতে মৃত্যুফাঁদ পাতা যেন। গাড়িতে চড়বেন, প্রতি মুহূর্তে থাকবে অন্য গাড়ির সাথে এক্সিডেন্টের ভয়। কখনও বা দেখবেন রাস্তার পাশের নির্মানাধীন প্রকল্প থেকে গার্টার খুলে গাড়ির ওপর পড়ে মুহূর্তেই পিষে দিয়ে যাবে। এমনকি ফুটপাত দিয়ে যে পায়ে হেঁটে চলবেন, সেটাও আর নিরাপদ না।
পুরা শহরটাই মৃত্যুফাঁদে পরিপূর্ণ একটা নরক। এগুলো দেখার কেউ নাই, বলার কেউ নাই। এই অভিশপ্ত অসভ্য শহরে মানুষের জীবনটাই যেন সবচেয়ে বেশি অদরকারি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন