উগান্ডান ডেমোক্রেসি

১৫১ পঠিত ... ১৫:২৯, ডিসেম্বর ০৪, ২০২৩

405521526_1258918678113163_5240696576583990786_n

গল্পটা উগান্ডার, যেখানে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে গদিতে বসেন ইয়াওয়েরি মুসোভেনি। কিন্তু তারপর ফেভিকলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে গদিতে একদম আটকেই আছেন। ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জারি রেখেছিলেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা। তারপর বহুদলীয় রাজনীতির চর্চা শুরু হলেও তাকে আর কোনোভাবে সরানো যায়নি। ঋণের ভারে জর্জরিত আফ্রিকান দেশটির অর্থনীতির অবস্থা এতটাই শোচনীয় সেখানে ঋণের অংক মোট জিডিপির ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

চীন, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন কেউ নেই যাদের কাছ থেকে ঋণ নেয়নি তারা। সাধারণ মানুষদের ক্রয়ক্ষমতা সেখানে নেহাতই কম, উন্নয়ন দেখাতে যোগাযোগ খাতে অনেক বিনিয়োগ থাকলেও স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাখাতের বিনিয়োগও একদম তলানিতে। আর দুর্নীতিতে তো তারা তাদের আরেক দক্ষিণ এশীয় মিতার থেকে ৪ ধাপ উপরে, ২০২০ সালের  তথ্য অনুযায়ী দুর্নীতির সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে উগান্ডার অবস্থান ছিল ১৪২।   

শোনা গিয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন এগুলো সেখানে ডালভাত। শুধুমাত্র বিরোধী দলীয় সমর্থক কিংবা ভিন্নমত পোষন করার কারণে সেখানে নিয়মিত জেলে যেতে হচ্ছে বহু মানুষকে। নেই স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিস্থিতি, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাওয়াটাও সেখানে বিরোধী দলগুলোর জন্য স্বপ্নের মতো। ইন্টারনেটও দেশটি রাষ্ট্রীয় নজরদারির অধীন।  

২০২১ সালে তুমুল জনপ্রিয় পপস্টার ববি ওয়াইন নির্বাচনে দাড়ান ইয়াওয়েরি মুসোভেনির ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্টের বিরুদ্ধে, এতে লাভের লাভ কিছু হয়নি। কর্মীদের উপর হামলা-মামলা দাপটে ঠিকমতো প্রচার-প্রচারণাই চালাতে পারেননি ববি, এমনকি গ্রেপ্তারও করা হয় তাকে। ববির মুক্তির দাবিতে লোকজন আন্দোলন শুরু করলে সেখানেও ছোঁড়া হয় গুলি। এসবের মাঝেই উগান্ডার সরকার দাবি করে বসে তাদের নির্বাচন এবং অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নাটালি ব্রাউন। নাটালি ব্রাউন অবশ্য কোনো পক্ষকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেননি।  

হামলা, মামলা আর সংঘাত আর বিরোধী নেতা ববি ওয়াইনকে জেলের মধ্যে রেখেই অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে কোনো প্রতিনিধি দলও পাঠায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পর্যবেক্ষক পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্রও। কিন্তু মুসোভেনি তো সুপারম্যান; উনার এসবে কিছুই যায়-আসেনি, নির্বাচন হয়ে যায়। ববি ওয়াইন ভোট চুরির অভিযোগ আনেন সরকারের বিরুদ্ধে, তবে নির্বাচন কমিশন যদিও ভোট কারচুপির অভিযোগ স্বীকার করেনি।

২০২১ নির্বাচনের পর ষষ্ঠবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন মুসোভেনি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা সে অনুষ্ঠান বর্জন করেন। উগান্ডার গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার দায়ে সংশ্লিষ্ট সকলকেই ভিষা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার হুমকি দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। কিন্তু মুসোভেনির এসব নিয়ে বিশেষ কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি এখনও মনে আনন্দে দেশ চালাচ্ছেন, দেশ চলছে উন্নয়নের মহাসড়কে আর সেই সড়কে তিনি দৌড়ের উপরে রেখেছেন বিরোধী সকলকেই।

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন গল্পটা কিন্তু উগান্ডারই।

১৫১ পঠিত ... ১৫:২৯, ডিসেম্বর ০৪, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top