১৯৪৬ সালের ঢাকা শহর কেমন ছিল?

১৪২ পঠিত ... ১৬:৫০, আগস্ট ২১, ২০২৩

১৯৪৬-সালের

দক্ষিণে পূর্বে পশ্চিমে নদীর মধ্যে ঢাকা শহর ঢিপির মতো জেগে আছে। এই ঢিপিটি উত্তরের দিকে ছড়ানো, আর ঢিপিটি কেটে বেরিয়ে আছে কাটা তরমুজের মতো জলার পর জলা । একটু হাঁটলেই জলা, একটু হাঁটলেই বনজঙ্গল, একটু হাঁটলেই গ্রাম । সেজন্য জলা জঙ্গল, গ্রামের মধ্যেই ঢাকা শহরটা গম্বুজের মতো।

নারায়ণগঞ্জের রেললাইনটা শহরটাকে কেটে বেরিয়ে গেছে। ফুলবাড়িয়া হচ্ছে পুরনো ঢাকার প্রত্যন্ত প্রান্ত। তারপর নতুন ঢাকা যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরাক্রমশালী বিস্তার, উঁচু উঁচু গাছপালা, গাছপালার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া পিচের রাস্তা, গাছপালার মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ লাল বাড়ি, যেখানে অধ্যাপকরা থাকেন, আর মাঠ আর ময়দান। এসব মনে হতো তেপান্তর, হাঁটা শুরু করলে ফুরোয় না ।

এসব জায়গা রূপকথার জগৎ কিংবা এসব জায়গায় বাস করে পরীরা । জ্যোৎস্না রাতে তখন পরীদের দেখা যেত কিংবা জোনাক পোকার ঝাঁক। দিনের উদাস দুপুরে দেখা মিলত আদিবাসীদের। তারা খরগোশ শিকার করে ফিরছে। হাতিরপুলের তলা দিয়ে ট্রেন চলে যেত সেই কোথায় কতদূর। ধানমণ্ডির যেখানে বলাকা সিনেমা হল ছিল, সেখানে ছিল ধানের গোলা।

মগবাজার পেরুলে জলা, জলার কিনার ঘেঁষে গ্রামের রাস্তা, সেখানে চায়ের দোকান, চা খেয়ে গ্রামে চলে যাওয়া কিংবা শহরে ফিরে আসা। মতিঝিলের পাড়ে বালু নিয়ে আসছে নৌকার বহর। সওয়ারীঘাটে সার সার নৌকা। বুড়িগঙ্গা শান্ত। নবাবগঞ্জ থেকে সুড়িপথ বেরিয়েছে রায়ের বাজারের দিকে, কুমোরপাড়া, কুমোরপাড়ার পেছনে বুড়িগঙ্গা মিশেছে গিয়ে ধলেশ্বরীতে। তীব্র রোদে কিছু দেখা যায় না। ঢেউয়ের পর ঢেউ।

পুরনো ঢাকা মৌচাকের মতো দানাবাধা। হিন্দু জমিদার এবং মধ্যবিত্তের পাড়া গেণ্ডারিয়া থেকে উত্তরা পর্যন্ত ছড়ানো। মুসলমান জমিদার এবং মধ্যবিত্তের পাড়া নবাববাড়ি থেকে সাতরওজা পর্যন্ত ছড়ানো। মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে আরমানিটোলা পর্যন্ত ফের হিন্দু জমিদার এবং মধ্যবিত্তের পাড়া। আবার চকবাজার থেকে লালবাগ-নবাবগঞ্জ পর্যন্ত মুসলমান জমিদার এবং মধ্যবিত্তের পাড়া। বিভাজন স্পষ্ট আবার বিভাজন লুপ্ত হিন্দু এবং মুসলমানের, অভিজ্ঞ এবং মধ্যবিত্তের।

হিন্দু পাড়ায় ঢাকাইয়া, বাংলার পাশাপাশি কলকাতাইয়া বাংলার চল, মুসলমান পাড়ায় ঢাকাইয়া বাংলার পাশাপাশি ঢাকাইয়া উর্দুর চল এবং দুই পাড়ার চলাচলের প্রধান বাহন ঘোড়ার গাড়ি কিংবা পঙ্খিরাজ গাড়ি, পঙ্খির মতো উড়ে কিংবা তেজী ঘোড়ার মতো দৌড়ায় না, এই হচ্ছে ঢাকাইয়া গাড়ি ঢাকাইয়া ভাষার মতো।

মধ্যে মধ্যে দাঙ্গা, মধ্যে মধ্যে জন্মাষ্টমির মিছিল, মধ্যে মধ্যে মহররমের মিছিল। সেই কতদূর ঢাকেশ্বরী মন্দির, সেই কতদূর হোসেনী দালান।

তথ্যসূত্র: স্মৃতির ঢাকা, কাজল ঘোষ সম্পাদিত 

১৪২ পঠিত ... ১৬:৫০, আগস্ট ২১, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top