ফিফটি শেডস অফ গ্রে (আ কলোনাইজার'স ড্রিম)

২৮৪ পঠিত ... ১৭:৩৭, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩

Grey

হিউস্টনের সেকেন্ড হোম বাঁচাতে না পারলে ভেবেছি উগান্ডায় কয়েক বিঘা জমি কিনে বাগান বাড়ি করবো। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। হিউস্টনে এমেরিকানদের অধীনে ঔপনিবেশিক দাস হয়ে থাকার চেয়ে, উগান্ডায় গিয়ে কলোনাইজার হওয়া ভালো।

ড্যানিয়েল ডেফোর ‘রবিনসন ক্রুসো’কে আজ বড্ড মনে পড়ছে। আমারও ফ্রাইডে থাকবে। তারা বাগানে সবজি ফলাবে। আমি হ্যাট পরে চেয়ারে ঠ্যাং এর ওপর ঠ্যাং তুলে বসে থাকবো।

রাতে জলসাঘরে আফ্রিকার ঝুমুর নাচ দেখে ছডিয়ে দেবো মোহর।

সবাইকে বাংলা শিখতে বলবো, বাংলা অনলি বাংলা উইল বি দ্য স্টেট ল্যাংগুয়েজ।

ধীরে ধীরে কিছু সহমত ভাই নিয়ে গিয়ে বাহিনী গড়ে তুলবো। ক্যাডার হিসেবে সবরকম বদমায়েশির ট্রেনিং এদের আছে।

ভালো দেখে একটা সংস্কৃতি মোল্লা নিয়ে গিয়ে প্রতি শনিবার রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে প্রার্থনা করতে শেখাবো উগান্ডার সহজ সরল লোকেদের। রবীন্দ্র রচনাবলী বাধ্যতামূলক করা হবে।

এরপর বাঙালি জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে দখল করবো উপায়হীন কালো কালো মানুষের বসতভিটা। হেলমেট পরে আমার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পডবে কেউ কোন ভিন্নমত দেখালে।

দেশ থেকে জায়েদ খানকে নিয়ে গিয়ে কনসার্ট করবো, ডা মাহফুজুর রহমানের গানকে ওরা সর্বশ্রেষ্ঠ সংগীত বলে জানবে।

আমার একটা এফ এম রেডিও স্টেশন থাকবে, যেখানে সারাক্ষণ উন্নয়নের স্তবসংকীর্তন থাকবে। আর থাকবে আমার ভাষণ। ত্রাসন আর সংহারের আলাপ।

ভিক্টোরিয়া লেক অবৈধভাবে দখল করে সেখানে ইলিশ মাছ চাষ করবো। সেই ইলিশ কেনিয়ার প্রেসিডেন্টকে উপহার দিয়ে উপনিবেশের সমর্থন লাভের চেষ্টা করবো।

উগান্ডার সমাজে স্বৈরাচারী ইদি আমিন ছিলেন; তাকে সরিয়ে ইওয়েরি মুসেভেনি এসেছেন; তিনিও ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেছেন। কিন্তু গুম-ক্রসফায়ারের অভিযোগে বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাকে অস্থিতিশীল করে রাখে নিয়মিত চাপ দিয়ে।

মুসেভেনির প্রয়োজন সাংস্কৃতিক জোট; যারা গলায় হারমোনিয়ান বেঁধে উন্নয়নের গান গাইবে। উগান্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিবৃতি লিখতে শেখাবো। যারা নিয়মিত মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেবে। উগান্ডার টিভি স্টেশন আর পত্রিকা অফিসের সামনে বাতাবি লেবুর গাছ পুঁতে দেবো।

একটি তেলাঞ্জলি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবো ভিক্টোরিয়া লেকের ধারে। যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর লেখা পড়বে। সেখানে শিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন ডরিন চৌধুরী, নন্দিতা রায়, সাবেরা চৌধুরী, ফুমিকো ইয়ামাদা। আর তারা উগান্ডার সঙ্গে পশ্চিমের টানাপোড়েন নিয়ে কলাম লিখবেন, লিখবেন কেনিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক নিয়ে, কঙ্গোর সঙ্গে বিরোধ নিয়ে।

পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থার ‘গুজবে’-র বিপরীতে ফেসবুকে সরকারি "গু" জব করার জন্য মাস্টার রোলে চাকরি দেবো সাইবার সুইপারদের।

মুসেভেনিকে রাজার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে; স্থানে স্থানে মুসেভেনি আর রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ও ম্যুরাল নির্মাণ করবো। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন হবে হাসি দিবস আর মৃত্যুদিন হবে কান্না দিবস।

উগান্ডার বিদ্যমান কনফ্লিক্টগুলো জমিয়ে তুলতে কিছু মডেল মসজিদ ও মন্দির নির্মাণ করে; দক্ষ শরিয়ত ভাই ও শিবব্রতদাকে খুলে দেবো বিদ্বেষের দোকান; যত বিদ্বেষ তত বিভাজন, তত ঔপনিবেশিক শাসনের সুবিধা। উগান্ডার সহজ সরল সমাজে ঢুকিয়ে দেবো কাস্ট সিস্টেমের বিষ। যদি তুমি পক্ষে থাকো, তবে তুমি উচ্চ শ্রেণী, যদি তুমি বিপক্ষে যাও, তবে তুমি নিম্ন শ্রেণী।

অতীতে বৃটিশ উপনিবেশের অভিজ্ঞতার কারণে আমার উপনিবেশের বিরোধিতা করবে কিছু লোক। তাদের জন্য লাফটার সিকিউরিটি অ্যাক্ট জারি করবো; উপনিবেশের প্রশংসামূলক ফেসবুক পোস্টে হাহা ইমো দিলেই; বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার।

রহমত ভাইকে নিয়ে যাবো উপনিবেশ বিরোধী থিয়েটার দল হিসেবে। সে ঈদ, পূজা, খ্রিসমাসের পর তুমুল আন্দোলন হবে বলে; এরপর বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে থাকবে ও অসুস্থতার ভান করবে।

কাম্পালায় প্রতিষ্ঠা করবো হারুনের ভাতের হোটেল ও হারুন ডেন্টাল ক্লিনিক। কেউ উপনিবেশের বিরুদ্ধে মিছিল করলে তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে এরপর ভিক্টোরিয়া লেকের সুস্বাদু ইলিশ ভাজা দিয়ে ভাত খাওয়াবে হারুনের ভাতের হোটেল। আর উপনিবেশের ‘প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মনে’ কেউ বাধা দিলে হারুনের ডেন্টাল ক্লিনিকে তাকে নিয়ে গিয়ে দাঁত তুলে দেয়া হবে।

উগান্ডার সিভিল সার্ভিসটা অতো বুদ্ধিশুদ্ধি রাখে না। দুর্নীতি করলেই ধরা পড়ে যায়। সরকারি চাকরির রাজনীতিকরণ বিশেষজ্ঞ দেলোয়ারকে নিয়ে গিয়ে ইউপিএসসি (উগান্ডা পাবলিক সার্ভিস কমিশন)-এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত করবো। ব্যাস শুধু দেলোয়ার ক্যাডার বের হবে তখন। যারা জনসভা করে উপনিবেশের পক্ষে শ্লোগান দিয়ে বেড়াবে।

উগান্ডার নির্বাচন কমিশন মোটামুটি ঠিক থাকলেও ভোটটা দিনে করে; এরফলে মুসেভেনির প্রতিপক্ষ ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে যায়। এই ইলেকশন কমিশনকে দিতে হবে একজন ভোটসমনিক প্রধান নির্বাচন কমিশনার। উগান্ডায় লাইলাতুল ইলেকশন তখন সময়ের ব্যাপার।

ইউরোপ-এমেরিকার গোরা সাহেবদের মধ্যে যারা হোমলেস; তাদের নিয়ে বানাবো নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান। পর্যবেক্ষকরা বলবে, নির্বাচন শতভাগ সফল; আর জরিপকারিরা বলবে শতভাগ লোক উপনিবেশের পক্ষে।

উগান্ডায় একটি বিশ্ব ফ্যাসিজম সম্মেলন হবে। সেখানে আসবেন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন, রাশিয়ার পুতিন, বেলারুশের লুকাশেংকো। তারা শ্রদ্ধা জানাবেন বেনিতো মুসোলিনির আবক্ষ মূর্তিতে।

ডরিন চৌধুরী তার কী নোট পেপারে বলবেন, গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে; ফ্যাসিজমই উন্নয়নের একমাত্র পথ।

সহমত-শিবব্রত, রহমত-শরিয়ত নিয়ে উগান্ডার সোনার সংসার জমে উঠবে রগড়ে-খিস্তিতে-বিদ্বেষে। এতে হতাশা নিরসন হবে উগান্ডার বেকার তরুণদের।

উগান্ডার শো বিজের মেয়েরা আমাদের ভারত বর্ষের লাস্য, ষোলো শৃঙ্গার, ঢং ঢাং রপ্ত করে ফেললে; আমার সেন্টার ফর রুথলেস ইন্টেলিজেন্স (ক্রাই)-এর ছোট চুল সুঠাম দেহী তাদের "গ্রে স্প্যারো" হিসেবে প্ল্যান্ট করবে ভি আইপিদের সঙ্গে। প্রত্যেকের কাছে হোয়াটস এপে প্রেম নিবেদন করে; তারপর ভিক্টোরিয়া লেকের ধারে পাপিয়া ইনে তাদের ডেকে এনে যাদু হ্যায় নেশা হ্যায় মাদহোশিয়ার ভিডিও ক্লিপ বানাবে। এগুলো হচ্ছে কৌটার মধ্যে ভ্রমর। এইসব ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে ভি আইপিদের মেনিমুখো বেড়াল বানিয়ে রাখা হবে। তখন তারা সমস্বরে বলবে, ঔপনিবেশিক সরকার, বার বার দরকার।

আমি জানি এমেরিকা ভিসা স্যাংশান দেবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সালিশ বসাবে উগান্ডার মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে। তাতে কী! আমাদের থার্ড হোম হবে হিন্দু রাজ্য চন্দ্রে। চন্দ্র পৃষ্ঠে জমি কিনে উগান্ডা মহাকাশ বিদ্যা কেন্দ্রের নেতৃত্বে সেখানে ঝিঙ্গে চাষ করবো; ঝিঙ্গে ফুল, ঝিঙ্গে ফুল, ফিরোজিয়া ফিঙ্গে কুল।

ছেলেটা যদি ভিসা ক্যানসেল হয়ে গেলে ফিরে আসে; ডিগ্রি নেয়া শেষ না হলেও ক্ষতি নাই! তেলাঞ্জলি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে "অধ্যাপক" বানিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে। কীসের জার্নালে পেপার পাবলিশ, কীসের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা; ফেসবুকে সহমত ভাইয়েরা প্রফেসর ডেকে ডেকেই অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে পারে। লিপ সার্ভিসের এমনই ফজিলত।

উগান্ডায় তখন শত বর্ষের শান্তি; উগান্ডার ক্যানভাসে ফিফটি শেডস অফ গ্রে। কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মাতসর্য; সেভেন ডেডলি সিনসের ভূতের নাচন; আর নেপথ্যে আবহ সংগীত, ‘উগান্ডার’ আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।

ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন॥

নয়ন আমার রূপের পুরে সাধ মিটায়ে বেড়ায় ঘুরে,

শ্রবণ আমার গভীর সুরে হয়েছে মগন॥

তোমার যজ্ঞে দিয়েছ ভার, বাজাই আমি বাঁশি--

গানে গানে গেঁথে বেড়াই প্রাণের কান্নাহাসি।

এখন সময় হয়েছে কি? সভায় গিয়ে তোমায় দেখি

জয়ধ্বনি শুনিয়ে যাব এ মোর নিবেদন॥

২৮৪ পঠিত ... ১৭:৩৭, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top