সব ডিরেক্টররা যদি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সিনেমা বানাইতো

২৯৪ পঠিত ... ১৭:৫৪, আগস্ট ২০, ২০২৩

Rabindranath

লেখা: শুভজিত ভৌমিক

ডিরেক্টর আশুতোষ গোয়াড়িকরের একটা পোস্টার দেখলাম। উনি অমিতাভ বচ্চনকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বানিয়ে ‘টেগোর’ নামে সিনেমা বানাচ্ছে।

তো ভাবতেছি, দেশ-বিদেশে ফিল্ম লাইনের অন্যান্য লোকজন যদি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একই সিনেমা বানাইতো, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াইতো।

করণ জোহর একই ছবি বানাইলে দেখা যাইতো: ভরুণ ধাওয়ান সিক্স প্যাকওয়ালা রবীন্দ্রনাথ। কাদম্বরী দেবী ক্যারেক্টারে আলিয়া ভাট, বিশাল বড়লোকের বেটি। সে হাইস্কুলে মিনি স্কার্ট, বিকিনি পরে। তারপর রবীন্দ্রনাথ আর কাদম্বরী দেবী ‘ডিস্কো দিওয়ানের প্রথম কদম ফ্লাওয়ার’ গানের সাথে নাচে এবং কিস করে।

অনুরাগ কশ্যপ দেখাইতো: রবীন্দ্রনাথ হইতেছে বিহারি গ্যাংস্টার। সে গলায় গামছা পরে এবং বাপকা, দাদাকা ভাইকা, সবার বদলা নেয়ার জন্য সে চুল-দাড়ি কাটে না। রবীন্দ্রনাথ ক্যারেক্টারে মনোজ বাজপেয়ী। সে প্রতিদিন কাটা রাইফেল দিয়ে কবি-সাহিত্যিকদের খুন করে, এবং তারপর কবিতা লেখে: আজি এ প্রভাতে আমার পোঁদ, মেরে গেছে কোন মাদারচোদ।

আব্বাস-মাস্তান দেখাইতো: রবীন্দ্রনাথ ক্যারেক্টারে সাঈফ আলী খান, এবং তার নোবেল চুরি হয়ে গেছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এই ঘটনার তদন্ত করতে আসে এবং সেখান থেকে রবীন্দ্রনাথ স্কটিশ সুর চুরি করে। লাস্ট সিনে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথই আসলে কাজী নজরুল ইসলাম, এবং এই ঘটনা কাদম্বরী দেবী আগেই জানতো। কিন্তু কাদম্বরী যে জানতো, এইটা আবার রবীন্দ্রনাথ জানতো না।

অনুরাগ বসু দেখাইতো: দিল্লি মেট্রো সিটিতে কর্পোরেট বড়লোক রবীন্দ্রনাথের সাথে পরকীয়া এবং সেক্স করতেছে সংসারে অসুখী শিল্পা শেঠি। ব্যাকগ্রাউন্ডে রবীন্দ্রনাথের সুর মাইরা দিয়া প্রীতম চক্রবর্তী মিউজিক দিতো: ‘মেরা পরাণও যাহা চাহে, তুম আয়ে, তুম আআআয়ে হোওওওও’

সঞ্জয় লীলা বানসালির ছবিতে রবীন্দ্রনাথ হইতো রণবীর সিং। কাদম্বরী ক্যারেক্টারে দীপিকা। ঠাকুরবাড়ির সেট ডিজাইন দেখলে আসল রবীন্দ্রনাথ নিজেই অজ্ঞান হয়ে যাইতো। ঐতিহাসিক এই ছবির বিরুদ্ধে ছায়ানটের লোকজন তুমুল আন্দোলন করতো। পরে দেখা যাইতো, রবীন্দ্রনাথ আর কাদম্বরী, ঘাগড়া চোলি পরে নাচতেছে: তাতাড় তাতাড় তাতাড় তাতাড়, হারে রেরে রেরে, আমায় ছেড়ে দেরে দেরে (কালভিয়া ক্যাস ওয়াল্লা, কালভিয়া ক্যাস ওয়াল্লা, হুক কুহু, হুক কুহু)... 

ঋতুপর্ণ ঘোষ দেখাইতো: রবীন্দ্রনাথ ক্যারেক্টারে প্রসেঞ্জিৎ আসলে একজন গে। কাদম্বরী দেবী ঋতুপর্ণা একজন লেসবিয়ান। এদের মধ্যে জটিল মনঃস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব চলতেছে এবং ডাইনিং টেবিলে বসে তারা সেই সমস্যার সমাধান করতেছে।

সৃজিত মুখার্জীর ছবিতে: রবীন্দ্রনাথ ক্যারেক্টারে পরমব্রত একজন বাংলা মিডিয়ামের পুলিশ অফিসার। কাদম্বরী দেবী ক্যারেক্টারে ইংলিশ মিডিয়ামের রাইমা সেন ক্রমাগত বাল, বাঁড়া, বানচোত, বোকাচোদা ইত্যাদি গালি দিচ্ছে।

অঞ্জন দত্তের ছবিতে: রবীন্দ্রনাথ হতো অঞ্জন দত্ত নিজেই। কাদম্বরী দেবী ক্যারেক্টারে স্বস্তিকা মুখার্জী  প্রচুর পরিমাণে হাতা কাটা ব্লাউজ এবং ক্লিভেজ দেখাইতো। এদের একটা রক মিউজিকের ব্যান্ড আছে, এবং এরা পর্যাপ্ত পরিমাণ কালো সানগ্লাস, মদ, গাঁজা ইত্যাদি খেতে খেতে "রক উইথ রবীন্দ্র" নামে একটা এলবাম বের করে।

মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর ছবিতে রবীন্দ্রনাথ হইতো মোশারফ করিম। কাদম্বরী ক্যারেক্টারে তিশা। এরা দুইজনে মিলে কবিয়াল আন্দোলন শুরু করে, এবং সেইখান থেকে শরাফ আহমেদ জীবনানন্দ, সুনীল সুজন, সমরেশ সাধু, শীর্ষেন্দু কামাল রাজ, বুদ্ধদেব রনি, সুধীন্দ্রনাথ ফাহমি ইত্যাদি সাহিত্যিকের জন্ম হয়।

তাসনিম খলিল আর জুলকারনাইন সায়ের যৌথভাবে বানাইতো ডকুমেন্টারি: অল দ্যা টেগোর্স উইমেন - ওরা ঠাকুরবাড়ির মেয়ে। দেখা যাইতো, আওয়ামী লীগের আমলে বিপুল সংখ্যক রবীন্দ্রনাথকে গুম করা হইছে, এবং সেই গুমের পিছে জড়িত আছে র‍্যাব এবং ডিজিএফআই।

শিহাব শাহীন বানাইতো ক্রাইম থ্রিলার ওয়েব সিরিজ: ‘মাইশেলফ রবেন টেগোর’। রবীন্দ্রনাথ ক্যারেক্টারে নাসিরুদ্দিন খান - কবিতার বইয়ের ভেতরে লুকিয়ে ইয়াবার ব্যবসা করে। ওয়েব সিরিজের ডায়লগ থাকতো: ওহে চোদানির পুত্র, পারিলে আমার গুপ্তকেশটি উৎপাটন করিয়া দেখা।

২৯৪ পঠিত ... ১৭:৫৪, আগস্ট ২০, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top