একই লেখার বিভিন্ন লেখক

১৪০২ পঠিত ... ১৭:২৮, আগস্ট ০৮, ২০২৩

Ek-e-lekhar-vinno-lekhok

সিনারিও: ক্লাস নাইন পড়ুয়া একটা মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে ফিজিক্স পড়তে বসল। তারপর বাংলা সাহিত্যের কিছু জনপ্রিয় সাহিত্যিকরা কীভাবে লিখবেন? চলুন দেখে আসা যাক…

 

১। মুহম্মদ জাফর ইকবাল: স্কুল থেকে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে কিছু একটা খেয়ে নিয়ে জাহানারা আপার দেওয়া বইয়ের প্যাকেটটা হাতে নিল রাশা। খুলে দেখল কলেজপড়ুয়াদের জন্যে লেখা একটা পদার্থবিজ্ঞানের বই, একটা গণিত বই আর জীবনানন্দ দাশের একটা কবিতার বই। আপা যত্ন করে বইগুলো পাঠিয়ে দিয়েছেন। সামনেই ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। রাশার বাসা থেকে বইগুলো কিনে দিত না কখনোই। রাশা বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখে। গণিতের বইটায় নাম্বার থিওরির বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে আলাপ করা আছে। এরপরের চ্যাপ্টারে কম্বিনেটরিকসের বেশকিছু সমস্যা। রাশা ওটা পরে পড়বে বলে রেখে দিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের বইটা হাতে নেয়।

জাহানারা আপা বলে দিয়েছেন বইটা যদিও কলেজের ছেলেমেয়েদের জন্য লেখা, তবুও বেশ সহজ। রাশা পড়লেই বুঝতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার আগে একটা ছেলে বা মেয়ের যতটুকু পদার্থবিজ্ঞান জানা দরকার, সবকিছুই আছে এতে। রাশা বইটা উল্টেপাল্টে দেখে। থার্মোডায়নামিক্স এর একটা চ্যাপ্টার, ফ্লুইড মেকানিজম এর একটা। শেষদিকে পার্টিকেল ফিজিক্স নিয়েও বেশ কিছু বলা আছে সহজ করে। এর আগে রাশা যেই বইটা পড়ছিল, ওটা ছিল বেশ খটোমটো। রাশার বয়েসীদের জন্যে না। তাও একটু পড়তে চেষ্টা করেছিল ও। এই বইটা অমন না। এই বইটা ভাল। আব্বু এখনো অফিসে। আম্মু একটু ঘুমাচ্ছে। এই বিকেলে তাই টেবিলে বসে রাশা মন দিয়ে প্রথম চ্যাপ্টারটা পড়তে শুরু করে।

 

২। হুমায়ুন আহমেদ: স্কুল থেকে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে দুই কাপ চা বানিয়ে নেয় শামা। একটা চায়ের কাপ নিয়ে নিজের ঘরে রাখে। আরেকটা বাবাকে দিতে বারান্দায় যায়। শামার বাবা রফিকুল সাহেব বারান্দায় চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। তিনি দিনে খবরের কাগজ পড়েন দুইবার। সকালে একবার, বিকালে একবার৷ প্রথমবারে চোখ বুলিয়ে নেন, দ্বিতীয়বারে পড়েন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। একেবারে ভাজা ভাজা করে ফেলেন।

বাবাকে চা দিয়ে এসে ফিজিক্স বইটা খোলে শামা। পরেরদিন স্কুলের একটা পরীক্ষা আছে। ঠিক তখনই আনিস ভাই এসে শামাকে ডাক দেন। তারও এক কাপ চা লাগবে। আশ্চর্য! চা লাগবে এই কথাটা আরেকটু আগে বললে হত না? একসাথে বানিয়ে নেওয়া যেত। শামা বইটা উলটে রেখে রান্নাঘরে যায় চা বসাতে। চা হয়ে গেলে আনিসকে দেয়। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আনিস ভাবে, এমন মায়া মায়া চোখ নিয়ে একটা মেয়ের ফিজিক্সের মত খটোমটো জিনিস কেন পড়তে হবে? এমন একটা মেয়ে শাড়ি পরে বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে পড়বে বাংলা সাহিত্য। বৃষ্টির দিন খুলে বসবে একটা কবিতার বই। এমন একটা মেয়ের ফিজিক্স পড়ার কোনো মানে হয়?

 

৩। সাদাত হোসাইন: নিলু স্কুল থেকে বাসায় ফেরে। রাস্তা জুড়ে কাদায় মাখামাখি। কাল রাতে খুব বৃষ্টি হয়েছে। বাসায় ফিরে নিলু পাতিলে ভাত বসায়। পড়ার টেবিল গুছায়। কালকে তার পরীক্ষা। অথচ তার একদমই পড়তে ইচ্ছা করছে না। তার ইচ্ছা করছে আনিস ভাইয়ের গল্প শুনতে৷ আনিস ভাই কী সুন্দর করে কবিতা লেখেন, "ওগো কাজল চোখের মেয়ে, আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে তোমার চোখে চেয়ে।" কিন্তু এখন ওখানে যাওয়া যাবে না। মা বকবে। নিলু রান্নাঘরে গিয়ে পাতিল থেকে ভাত নামায়। ধবধবে সাদা ভাত। প্লেটে নিয়ে একটা কাঁচামরিচ ধুয়ে নেয় নিলু। ফিজিক্স বইয়ের পাতাগুলো এলোমেলো উড়তে থাকে হাওয়ায়। বৃষ্টির ছাঁট এসে পরে। বৃষ্টির ছাটে ফিজিক্স বই ভিজে গেলে যাক। এমন বৃষ্টিতে পড়াশোনা করার কোনো মানে হয়?

 

৪। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়: সদাশিববাবুর নাতি-নাতনি অনু আর বিলু। গ্রীষ্মের ছুটিতে ঘুরতে এসেছে টেকেরহাট। বড়কর্তা, মানে সদাশিববাবু, বাড়ির উঠোনে চেয়ার পেতে বসেছেন। তার সামনে বেতের টিপাইয়ে চিরতার রস। তার বাতের ব্যথা। তাই তিনি নিয়ম করে চিরতার রস খান রোজ সকালে। এই রস হচ্ছে গিয়ে বাতের মহৌষধ। তিতকুটে রসে চুমুক দিয়ে ভুঁরু কুঁচকে তিনি দেখেন তার নাতনি অনু, ঘাসে একটা পাটি পেতে হাতে একটা ফিজিক্স বই নিয়ে মন দিয়ে পড়ছে। সদাশিববাবু খুশি হন। সকালের রোদে বাইরে বসে থাকা ভাল। বাচ্চাগুলো ভিটামিন-ডি পাবে শরীরে। ওদের আজ দুপুরে ঘুরতে বেড়োবার কথা জিপ নিয়ে। একটু টেকেরহাটটা ঘুরে দেখবে। তিনি সত্যনাথকে বলে রেখেছেন। ও-ই ওদের নিয়ে যাবে৷

 

৫। কিংকর আহসান: স্কুল থেকে বাড়ি আসে রাশা। ভাত খায়। টেবিলে বসে। ফিজিক্স বই। একটা কলম। একটা খাতা। দেয়ালে ঘড়ি৷ টিক টিক। রাশা পড়ে। কেন পড়ে?

 

৬। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলেমেয়েদের ইশকুল-জীবনের মত পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। পড়িতেও ইচ্ছা করে না। মন পরিয়া থাকে ঘুড্ডির সুতা আর লাটিমে। এদিকে মাতা-পিতা এবং মাস্টারমশাইয়ের চোখ-রাঙানির ভয়ে পড়িতে বসিতেও হয়। পড়ালেখার পরিমাণও কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করিয়া বেমানানরূপে বাড়িয়া উঠে। শৈশবের ছড়ার বইয়ের লালিত্য সহসা চলিয়া যায়; এরা সেইজন্যে এই পড়াশোনা নামক ব্যাপারটিকে মনে মনে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না। জগতের অনেক দোষ মাপ করা যায়, কিন্তু এই পড়াশোনা বিষয়ক কোনো স্বাভাবিক অনিবার্য কাজও যেন অসহ্য বোধ হয়। দূর্গা নাম্নী এই কিশোরীটিও তাই তাহার পদার্থবিজ্ঞান বই খুলিয়া ছলছল নেত্রে চাহিয়া থাকে।

এতক্ষণ পরার জন্য ধন্যবাদ। পোস্ট ম্যালা বড় হয়ে যাচ্ছে। থামা লাগবে। টাটা ফর নাউ।

১৪০২ পঠিত ... ১৭:২৮, আগস্ট ০৮, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top