নতুন বছর উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা প্রতিবছরই হালখাতা করে থাকেন। ব্যবসায়ীদের আদলে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য এবার হালখাতার আয়োজন করতে যাচ্ছে নিখিল বাংলা ঘুষখোর অফিসার সমিতি। একটি অবিশ্বস্ত সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে eআরকি।
হালখাতা হলো বছরের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। বছরের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে এদিন হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এজন্য খদ্দেরদের বিনীতভাবে পাওনা শোধ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় শুভ হালখাতা কার্ড-এর মাধ্যমে৷ নতুন বছর উপলক্ষে নববর্ষের দিন ব্যবসায়ীরা তাদের খদ্দেরদের মিষ্টিমুখ করান। খদ্দেররাও তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পুরোনো দেনা শোধ করে দেন।
ঘুষখোর অফিসাররা নিজেদের এই হালখাতা সম্পর্কে বলেন, ‘অনেকের কাছে অনেক টাকা পাই। ৫ লাখ টাকার একটা কাজে একজন ৪ লাখ দিছে। বলছিলো ১ লাখ পরে দিবে। ওই নির্লজ্জের এখন আর কোন খোঁজ খবর নাই। এভাবে কারো কাছে ২ লাখ, কারো কাছে ১০ হাজার। এভাবে অনেক টাকা পাই। এই বেইমানগুলার কাছ থেকে টাকা তোলার জন্য এই হালখাতা।‘
হালখাতায় অংশগ্রহন করে পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার জন্য অনুরোধ করে একটা হাদিসও বলেন এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ওইদিন কোথায় জানি একটা হাদিস দেখলাম, কারো পাওনা টাকা ফেরত না দিয়ে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। সুতরাং ভাইয়েরা, আমি নামাজ কালাম্প পড়ি। ফরহেজগার মানুষ। প্লিজ পাওনা টাকাগুলো ফেরত দিয়ে যান। ভালো মানুষের হক মেরে খাইয়েন না।‘
ঘুষখোর কমিটির হালখাতাগুলো বিশেষ ডিজাইনার দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঘুষখোর কমিটির সভাপতি। লাল রঙের কার্ডের উপর ছোটো ছোটো সাদা ফুল—ঐতিহ্যবাহী পহেলা বৈশাখকেই যেন প্রতিনিধিত্ব করছে। কাভারে গোটা অক্ষরে লেখা ’শুভ হালখাতা’। পুরো বাঙালীয়ানায় ভরা এই কার্ড দেখিয়ে কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হতে পারে আমরা ঘুষখোর। কিন্তু বাঙালীয়ানা ছাড়ি নাই। টাকা পয়সা যেকোনভাবেই আদায় করতে পারতাম। কিন্তু বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর বিশ্বাস রেখে হালখাতার আয়োজন করেছি।‘
বেশ কৌতূহলী হয়ে earki'র তদন্ত কমিটি খাতাগুলো উল্টেপাল্টে দেখে। প্রথম পৃষ্ঠাতেই ঘুষ দেওয়া নেওয়ার স্থান, প্রাপ্য ঘুষ, আদায়কৃত ঘুষ, ও বকেয়া ঘুষের পরিমাণ লেখা।
তরিকুল নামের এক ট্রাফিক পুলিশ কিছু সমস্যা পড়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ‘আমার তো ৫-১০ টাকার কারবার। অনেকের কাছে এমন ৫-১০ টাকা পাই। ওস্তাদ পরে দিমু কইয়া আর দেয় নাই। এখন এই ৫-১০টাকার জন্য হালখাতা করলে কি পোষাবে? এদিকে আবার নিজের হক ছেড়ে দিতেও ইচ্ছে করছে না।‘